ডেস্ক রিপোর্ট : মাস তিনেক আগের ঘটনা। ফিরোজ কবীর (৩১) নামে এক গাড়ি চালক রাজধানী থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে নিখোঁজ হন। এর প্রায় মাস খানেক পর ওই গাড়ির মালিক ফিরোজের নামে মোহাম্মদপুর থানায় একটি চুরির মামলা করেন। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পশ্চিম বিভাগের একটি দল ওই মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে চারজন ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে ড্রাইভার ফিরোজকে হত্যা করে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকে কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে তাবলিগ জামাত থেকে গ্রেফতার করা হয়।
রোববার (২০ মে) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এণ্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী কমিশনার সুমন কান্তি চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে এসব তথ্য জানান।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গাড়িচালক ফিরোজের মালিক তার নামে মামলা করার পর ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে ফিরোজের নিখোঁজের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি সাদেক ও সুজন নামের দুই যুবক টঙ্গি হতে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে। তারা দুইজন নারীকে নিয়ে সকাল এগারটায় টঙ্গী থেকে রওনা হয়ে রাত দশটায় চকোরিয়া বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছায়।
সেখান থেকে নবী হোসেন ওরফে পুতিয়া ও মফিজুর রহমান নামে আরো দুইজন ওই গাড়িতে ওঠে। এরপর তারা দুই নারীকে নবীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। প্রায় দশ কিলোমিটার যাবার পর নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়িতে থাকা মফিজ কৌশলে নিজের মাথার টুপি রাস্তায় ফেলে দেয়। টুপি আনার জন্য ড্রাইভার ফিরোজ গাড়ি থামায় এবং মফিজ টুপি আনতে যায়। সেই সময় ড্রাইভারের পিছনে বসে থাকা নবী ফিরোজের গলায় গামছা দিয়ে প্যাচিয়ে ধরে।
সাদেক ও সুজন ফিরোজের হাত পা চেপে ধরে। মফিজ এসে ড্রাইভার ফিরোজের পেটে চাকু মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মফিজ গাড়িটি চালিয়ে কক্সবাজারের দিকে না গিয়ে পুনরায় চকোরিয়ার দিকে ফিরে আসে। কক্সবাজার ঢাকা হাইওয়ের কোটাখালি হাঁসেরদীঘি নামক স্থানে তারা ড্রাইভার ফিরোজের লাশ ফেলে দেয়। এরপর মফিজ গাড়িটি চকোরিয়ায় নিয়ে তা নবীর কাছে রেখে দেয়। সাদেক ও সুজন আবার ঢাকায় ফিরে আসে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে ৩০ এপ্রিল গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকা থেকে সাদেককে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ মে কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা থেকে মো. সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে সুজনের দেয়া তথ্যমতে গতকাল ১৯ মে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আলমনগর জামে মসজিদে তাবলিগ জামাত থেকে গ্রেফতার করা হয় এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা মফিজুর রহমানকে। মফিজের দেয়া তথ্যমতে গোয়েন্দা পুলিশ চকোরিয়ায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের দলের অপর অভিযুক্ত মো. নবী হোসেন ওরফে পুতিয়াকে গ্রেফতার করে। আর তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় সেই নোয়া মাইক্রোবাসটি।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাদেক ও সুজন নিজেদের সম্পৃক্ততা এবং মফিজ ও নবীর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :