আহমেদ ইসমাম: রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার। সন্ধা নামবে একটু পরেই, সবার বাড়ি যাওয়ার তারা। এই ব্যস্ত সড়কে একজনকে খুব ব্যস্ততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি হচ্ছে ট্রফিক পুলিশ রফিক মিয়া। এই ব্যস্ত শহরের মানুষগুলোকে সুন্দর ভাবে বাড়ি ফেরাতে নিরলস হাত নারিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কাছে গিয়ে দাড়াতেই বলে উঠলেন, ‘এই যানজট কিভাবে কমবে? ভিইপিদের কারণেই কমবে না। একেক জন একেক পরিচয় দিয়ে যে দিকে খুশি চলে যায়। কাউকে ঠেকানো যায় না। এ ভাবে চলতে থাকলে এই শহর একদিন আচল হয়ে যাবে, কেউ থাকবে না আর এই শহরে।’ অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। তার কিছু দুরে পুলিশ বক্সের সামনে মামলার কাগজ পত্র নিয়ে দাড়িয়ে আছে সার্জেন। দুই একটি মোটর সাইকেল চালকরা বাদে আইন না মানা কোনো গাড়িকেই কিছুই করছেন না তিনি।
ট্রফিক পুলিশরা আমাদের কতটা উপকারি সেটা বুঝতে পারব একদিন মাঠে না থাকলে। কিন্তু তারা কাজের পুরোটা সময় রাস্তায় থাকার কারণে বৃষ্টি, ধুলা, রোদ সব কিছু তাদের মাথার উপর দিয়ে যায়, এ কারণে তারা খুব সহজে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমরা ধুলার কারণে রাস্তায় হাটতে পারি না, কোথাও দাড়াতে পারি না, যেখানে সেখানে তারা প্রতিদিন রাস্তায় দিনের পর দিন দাড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা স্বাস্থ্যর জন্য খুবি ঝুকি। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তারা হাপানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক পুলিশদের কর্মঘন্টা আরও কমানো দরকার, কারণ তারা যদি ক্লান্ত হয়ে যায় তবে রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কারণ এই দেশের মানুষ ট্রফিক আইন না মানতে পারলে নিজেকে বীর মনে করে। এখানে যা করার সব কিছু তাদের হাতের ইশারায় করতে হয়। তাই রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ করে বার বার যেতে যেতে হাপিয়ে উঠে।
রাত ১০টা কাওরাণ বাজার থেকে নিজের দায়িত্ব শেষ করে কল্যাণপুরের ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন ট্রফিক পুলিশ সুমন আলী। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তিনি আগে বাগেরহাটে ছিলেন। সেখানে তিনি বেশ শান্তিতেই ছিলেন। যা বেতন পেতেন তা দিয়ে তার সুন্দরভাবে সংসার চলে যেত, কিন্ত রাজধানীতে তার বাড়ি ভাড়া লাগে বেশী। যা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালনো বেশ কষ্টের হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন ‘ভাই যেখানে ছিলাম বেশ ভালই ছিলাম, ঢাকা শহরে কাজ করতে হয় অনেক বেশি। আর এখানকার কাজের পরিবেশও বেশ খারাপ। সবকিছু নিয়ে খুব বাজে অবস্থার মাঝে আছি। আমাকে অনেকটা জোর করে এখানে পাঠানো হয়েছে। অনেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, কি আর করার কাজ তো কাজই তার পরেও কাজ করে যেতে হবে, অন্তত এই শহরের মানুষগুলোর জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :