শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০১৮, ০৭:৫৩ সকাল
আপডেট : ২০ মে, ২০১৮, ০৭:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমুদে মানুষের আনন্দকথন

কাকন রেজা : : ‘স্থগিত’ শুনেই একজন বলে ফেললেন, কেউ রিট করে নাইতো। আমাদের অবস্থা হয়েছে এরকম, অর্ধেক শুনেই চোখ বুজে মন্তব্য করে বসি। কী ‘স্থগিত’ না শুনেই বলে ফেললেন রিটের কথা। অনেকে বলেন, গাজীপুর নির্বাচনে ‘রিট’ হিট হওয়ায় না-কী এই অবস্থা। আমাদের কোন কোন গণমাধ্যমের অবস্থাও হয়েছে এমনটা। ওই ভদ্রলোক আগেরটুকু না শুনেই বলে ফেললেন, আমাদের গণমাধ্যমও পরেরটুকু না শুনেই ‘রকেট’ উড়িয়ে দেয়, অপেক্ষার ধার কে ধারে! এর জন্যেই আমাদের পরিচিতি নিয়ে ‘জোক’ করে বলা হয়, আমরা না-কী প্রশ্ন শোনার আগেই উত্তর দিয়ে ফেলি এবং তাতেই আমাদের চেনা যায়।
সত্যি কথা বলতে গেলে, আমরা একটু আমুদে টাইপের। আমুদেরা একটু আলসেও হয়। কবি বলেছেন, ‘আলস্য পরম ধন, করিও যতন’। আলসেমির কারণেই মাঝেমধ্যে একটু ‘ইয়ে’ হয়ে যায় আর কী। ওই যে দেখেন না, হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র ব্যাপারটা। লোকজন বর্ষাকালে আমোদ করার জন্যই ঘেটু গানের আয়োজন করে। ওখানে ঘেটুপুত্রদের সাথে সামান্য আমোদ হয়। অনেকের কাছে নির্বাচনটাও তেমনি অবসর আমোদের ব্যাপার। যেমনটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ নিয়ে কারো কারো অবসরজনিত মন্তব্য বড়ই আমুদে। যেমন, ‘তৃণমুলই জিততো, তবে ছেলেরা একটু বেশিই রিগিং করেচে। ওটা করেই জেতাটায় একটু কালি লাগিয়ে দিয়েচে মাইরি। নইলে সব ঠিকঠাক আছে।’ আমাদের দেশেও এমন আমুদে লোকের অভাব নেই।
আমরা যে আমুদে তা প্রমাণ করে, ‘ঋণ করে ঘি খাবার’ প্রবাদটি। ‘কী আছে দুনিয়ায়’ ধরণের দার্শনিক বাণীটিও আমাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত। ‘কী আছে দুনিয়ায়’ ভেবে আমরা ‘ঋণ করে ঘি খাই’। ঢাকার ফুটপাতে খালিপেটে ঘুমিয়ে পড়া শিশুরাও ‘খিদার কপালে উষ্ঠা মাইরা’ ঘুম ভেঙ্গে রাতে হাতিরঝিলের বাতির খেলা দেখে। সুকান্ত ভুল বলেছিলেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। হাতির ঝিলের ‘বাত্তি’ দেখা পথশিশুদের দেখে কী মনে হয়, পৃথিবী গদ্যময়! ‘ফুল মুন’ দেখার ফেসবুকিয় আকুল আমন্ত্রণে চাঁদ কে কী ‘ঝলসানো রুটি’ ভাবা যায়! এক্কেবারেই না। টাকাপয়সা নিয়েও আমরা একেবারে ভাবি না। ‘ট্যাকা-পয়সা হইলো গিয়া তেজপাতা’, এমন দর্শন লালন করি কলিজায়। বড় কলিজা বলেই ‘হাতের ময়লা’র মতো ব্যাংক ঝেড়ে ফেললেও ‘মাইন্ড’ করি না, উল্টো আমোদে চোখ বুজে থাকি।
আমুদে আমাদের কথা আর কী বলবো। এই যে দেখুন না, উৎসব পেলেই আমরা সার্বজনীন করে ফেলি। সে হোক চৈত্রসংক্রান্তি, হলি, ভ্যালেন্টাইন, এপ্রিল ফুল, এমন কী হালের হ্যালোইনের মতন উৎসবও। তারপরও আমাদের উৎসব তৃষা মিটে না। কদিন পরপরই বাংলার আকাশে উৎসবের ঘনঘটা দেখা যায়। এসব উৎসবে যোগ দেন কর্তা থেকে শুরু করে চাপরাশী পর্যন্ত, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সুশীল অভিভাবক পর্যন্ত। সর্বজনের অংশগ্রহণে এসব উৎসব হয়ে উঠে বাঙময়, রঙ্গময়। সার্বজনীনতার এমন আমুদে নিদর্শন আর কোথা আছে!
আমাদের মানসিকতার সাথে মিলে যাওয়ায় হরলিকসের বিজ্ঞাপনে ‘আমি তো এমনি এমনি খাই’ সংলাপটি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আমরা অল্পতেই তুষ্ট, আমাদের মনে ‘এমনি এমনি’ই আমোদ জাগে। পেট খালি থাকলেও ‘কুচ পরোয়া’ নেই, আমাদের মন ভরা। আমরা খাওয়ার জন্য বাঁচি না, বাঁচার জন্য খাই। হাজার কোটি টাকা খরচ করি আমরা ‘ইজ্জতে’র সওয়ালে। টাকা-পয়সার হিসাব করে ছোটলোকে। আমাদের ‘ইজ্জত’টাই বড়। আমরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নই যে, রায় বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে দেখবো ভেতরের ‘রাস উৎসব’। আমরাই উৎসব করবো, সারারাত জেগে আকাশে উড়াবো হাজার কোটি ফানুস। কারো আপত্তিতে কী বা আসে যায়!
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ/আমাদের নতুন সময় : 20/05/2018

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়