আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাঁচ বছর আগে ইরানে মাসিহ আলিনেজাদ নামে এক নারী দেশটিতে অভিনব এক আন্দোলন শুরু করেন। দেশটিতে বাধ্যতামূলক ভাবে হিজাব বা মাথা ঢাকার স্কার্ফ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন তিনি। সেই আন্দোলনে যোগ দেয় কয়েক হাজার নারী। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং রাস্তায় অভূতপূর্ব বিক্ষোভ হয়। কিন্তু এই বিক্ষোভ আন্দোলনের পাঁচ বছর হতে চলেছে, যে লক্ষ্য নিয়ে এটা শুরু হয়েছে তার কাছাকাছি কতটা পৌছাতে পেরেছে!
তবে তার এই প্রচারণার চরম মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। মাসিহ ২০০৯ সাল থেকে স্ব আরোপিত নির্বাসনে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে ইরানে যান না। তার পরিবার কে নিষেধ করা হয়েছে দেশ ছেড়ে না যাওয়ার জন্য। তার পিতা এখন তার হয়ে আর কোনো কথা বলেন না। মাসিহ মনে করেন সরকারের এজেন্টরা তার বাবাকে তাদের মত করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। শুরুটা হয়েছিল একদম নিরীহ একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একজন নারী ইরানের পাহাড়ি পথে গাড়ী চালাচ্ছেন, আর তার খোলা চুলে বাতাস খেলা করছে। নিজের এমন একটি ছবি মাসিহ আলিনেজাদ সোশ্যাল মিডিয়াতে করেন। তার কাছে এটা ছিল সাধারণ একটা স্বাধীনতা ভোগ করার মত একটা ঘটনা। এরপর তিনি অন্য নারীদের আহ্বান জানান তারাও যেন তাদের গোপন স্বাধীনতার মুহূর্ত শেয়ার করে। ফলস্বরুপর সারাদেশ থেকে অসংখ্য নারী তাদের ছবি পোষ্ট করতে থাকেন যেগুলোর বেশিরভাগই দেখা যায় মাথায় হিজাব নেই।
এখান থেকেই শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে বাধ্যতামূলক মাথা ঢাকার স্কার্ফ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন #mystealthyFreedom. এই আন্দোলন পরে আরো অন্য আন্দোলনকে উস্কে দেয়। যেমন, #whitewednesdays, #girlsofenghelabstreet এবং #mycameraismyweapon এই হ্যাসট্যাগ দেয়া নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক জাগরণ তৈরি হয়। মাসিহ’র সোশ্যাল মিডিয়াতে রয়েছে ২৫ লক্ষের বেশি অনুসারী যেটা কিনা বাধ্য করেছে দেশটির সরকারকে তাকে বিবেচনার মধ্যে আনতে।
মাসিহ’র লেখা ‘The Wind In My Hair’ বইটিতে তিনি লিখেছেন তিনি বেড়ে উঠেছেন ইরানের উত্তরদিকে ছোট একটি গ্রামে এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে। তার পরিবারের মানুষের সামনেও তাকে হিজাব পরতে হত। তার কাছে মনে হয়েছিল এটা নারীদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। তিনি বর্ণনা করেছেন তিনি সবসময় অন্য নারীদের কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিতে চেয়েছেন কারণ যখন তিনি ইরানে ছিলেন তখন তার কথা বলার বা প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ ছিল না।
তিনি বলছিলেন ফেসবুকে সরকার সমর্থিত একটি গ্রুপের কাছ থেকে তিনি মেসেজ পেয়েছেন-তারা লিখেছে ‘আমরা তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে তোমার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেব’। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই পরিস্থিতির জন্য তার কোনো অনুতাপ আছে কিনা। তিনি বলেছেন ‘কখনই না’। তিরি আরো বলেছেন ‘৪০ বছর ধরে তারা বলে আসছে নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার এটা সঠিক সময় নয় কিন্তু তারা এখন আর নারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না’। সূত্র: বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :