শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০১৮, ০২:১৬ রাত
আপডেট : ২০ মে, ২০১৮, ০২:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এত প্রচার-প্রচারণা, তারপরও বিএটি’র প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ!

ড. সা’দত হুসাইন : একটি রহস্যঘেরা খবর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘বিএটি বাংলাদেশের বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ।’ তামাক উৎপাদন এবং সেবনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল প্রচার-প্রচারণার কর্মসূচি চালু রয়েছে। এ কর্মসূচিতে নানারূপ সংগঠন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গণমাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয়ে কর্মসূচি নির্মাণ করা হয়। রথী-মহারথীরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে অনুষ্ঠান সরগরম করে রাখেন। তামাক বিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার, লবিং করেন। পত্র-পত্রিকায় তাদের ছবি ছাপানো হয়। সরকার তাদের সংগঠন এবং কর্মসূচিকে যথাযথ সমর্থন দেবে বলে আশ্বাস দেয়। যতদূর জানা যায়, সংগঠনগুলো সরকারি সমর্থন ভালোই পেয়ে থাকে। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠান অন্তত প্রকাশ্যে ধুমপান বা তামাক বিরোধী প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন দিয়ে থাকে।

এতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। যদি তাই হতো তবে বিএটি’র বিক্রি ও নীট মুনাফা বেড়ে যথাক্রমে ১৬% ও ২৫% হতো না। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত জরিপসমূহের ফল থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। যা কমেছে বলে দাবি করা হয় তার পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য (ঝঃধঃরংঃরপধষ ঝরমহরভরপধহপব) গ্রহণযোগ্য মানের কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এককথায় বলা যায়, কর্মসূচির কলেবর এবং ব্যয়ের আকার দেখে আমরা ফলাফল (ঙঁঃঢ়ঁঃ) সম্পর্কে যতটা আশাবাদী হই, বাস্তব ফল তার কাছাকাছি নাও হতে পারে।

ঘটনাটি প্রকল্প/কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে। প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা অনেক সময় ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিই না। প্রকল্পের আকার ও আর্থিক খরচের পরিমাণ দিয়ে প্রকল্পের গুরুত্ব ও সাফল্য বিচার করি। প্রকল্প/কর্মসূচির প্রাক্কলিত এবং ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ বিশাল হলে আমরা বিমুগ্ধ চিত্তে ধরে নিই যে, দেশের উন্নয়ন ও নাগরিকদের কল্যাণে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কিন্তু প্রকল্প/কর্মসূচি সম্পন্ন হবার পর অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পাচ্ছে না। যেমন একটি নতুন রাস্তা হবার পর হয়তো দেখা গেল, যাত্রীসাধারণ আগে তিন-চার ঘন্টায় যে দূরত্ব অতিক্রম করত এখন সে দূরত্ব অতিক্রম করতে সাত-আট ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। তাহলে বিশাল অর্থ ব্যয়ে বিরাট আকারের প্রকল্প/কর্মসূচি সম্পন্ন করে কি লাভ হলো? এতে অর্থের অপচয় ছাড়া বড় কিছু হয়নি। কর্মসূচি যেন উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবনে আরাম-আয়েশ, শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে একটি কার্যকর প্যাকেজের কাঠামোর প্রকল্প/কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রকল্প/কর্মসূচির কলেবর বাড়িয়ে হৈ চৈ করে, বর্ণাঢ্য বাতাবরণ সৃষ্টি করে জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা বিনির্মাণ করা যায়। কিন্তু প্রকল্প সমাপ্ত হবার পর বাস্তবে মানুষ যদি কোনো উপকার না পায়, তবে তারা বহুগুণে হতাশ হয়। প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে তারা নানারূপ প্রশ্ন তোলে। এ কারণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে বিভিন্নরূপ প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পের সম্ভাব্য সুফল উবে না যায়।

প্রকল্পের পরিকল্পনা একটি স্বপ্নমোড়ানো অনুশীলন। আমরা যখন প্রকল্প রচনা করি তখন এর ভালো দিকগুলো আমাদেরকে এত মোহাচ্ছন্ন করে রাখে যে, আমরা প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং এর সুফল পেতে যে সমস্যা সমূহ অতিক্রম করতে হবে সেগুলোকে আমলে নিতে চাই না, অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক চলক নিচয়কে আমরা সমীকরণ বন্দোবস্তে অন্তর্ভুক্ত করি না। আমরা তখন মনে করি সমস্যা দেখা দিলে সে সময়ে তা সমাধান করা যাবে। সেতুর কাছাকাছি এলে তখন তা পেরুবার ব্যবস্থা করা যাবে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের এ চিন্তা প্রায়ই ভুল প্রমাণিত হয়। তখন আমরা নদীর পাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। আগেভাগে অর্থাৎ প্রকল্প/কর্মসূচি রচনাকালে বাস্তব অবস্থা তথা বাস্তব সমস্যার অনুপুংখ হিসাব নিকাশ করলে প্রকল্প/কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই সমস্যাসমূহ দূরীকরণের প্রচেষ্টা নেওয়া যায়। সমাধানের উপায় চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বাস্তবে প্রকল্প/কর্মসূচির প্রতিশ্রুত উপকার ভোগ করতে পারে। বাগাড়ম্বর এবং প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বাদ দিয়ে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সুবিধার প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়।

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়