শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০১৮, ০৭:৪০ সকাল
আপডেট : ২০ মে, ২০১৮, ০৭:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পর্তুগাল চাইছে শিরোপা আর রোনালদোর অমরত্ব

স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপ ফুটবল মানে বিশ্বসেরাদের আসর । এখানে চার বছর অপেক্ষার পর বিশ্বসেরা দলটি অন্যদের হতাশ করে নিয়ে যাবে বিশ্বকাপ জয় করে , এমনটাই সাধারণের ভাবনা । যদিও এই ভাবনার সাথে বাস্তবতার সম্মিলন ঘটে খুব কমই । তা না হলে ১৯৫৪ সালে ফেরেক পুসকাসের হাঙ্গেরি আর আগের শতাব্দীর সত্তর দশকে ইওহান ক্রুয়েফের সময় থেকে এখন পর্যন্ত হল্যান্ডের একাধিকবার বিশ্বকাপ জয় করার কথা ছিল । কিন্তু সেটা হয় নি রহস্যময় কারণে । এমনকি ইতিহাস বলে , বিশ্বকাপটা অন্তত একবারের জন্য পাওনা ছিল পর্তুগালের । সেটা ১৯৬৬ সালে ইউসেবিওর হাত ধরে হউক , কিংবা সাম্প্রতিক অতীতে লুইস ফিগোদের ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ এর বদৌলতে । অথচ সেটাও হয় নি । বিশ্বকাপের একাধিক আসরের ‘ট্র্যাজেডি’ পর্ব হয়ে থাকা পর্তুগিজদের সামনে এবার আরও একটি সুযোগ বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেদের না পাওয়ার হতাশা ভোলার । আর এই ক্ষেত্রে পর্তুগিজদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো । এর মধ্যেই নিজেকে ‘আধুনিক ফুটবলের সম্রাট ‘ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা রোনালদোকে ঘিরেই বিশ্বকাপ ফুটবলের সব স্বপ্ন জড়ো হয়েছে ভাস্কো দা গামা’র উত্তরসুরিদের চোখে । রোনালদো কি পারবেন , দিগ্বিজয়ী নাবিক ভাস্কো দা গামার মত সব প্রতিকুলতা জয় করে নিজেদের স্বপ্ন-তরীটা নিয়ে বিশ্বকাপের সেরার মঞ্চে পৌঁছুতে ?

‘ক্রীড়ালোক’ এর বিশ্বকাপ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে ক্রিশ্চিয়ান রোনালদোর পর্তুগাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ।

যেভাবে বিশ্বকাপে এলো পর্তুগাল –

২০১৬ সালে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপা জয়ের পর পর্তুগালকে নিয়ে আশার পরিধি বেড়ে গেছে বহুগুণ । ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপ খেলা আর বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড আছে অনেক দেশেরই । পর্তুগালকে নিয়েও এমন ভাবাটা অস্বাভাবিক কিছু না । যদিও ইউরো জেতার পর পর্তুগালের এবারের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের অভিযান শুরু হয়েছিল হার দিয়ে । ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পর্বে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পর্তুগাল ০-২ গোলে হারে সুইজারল্যান্ডের কাছে । ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ব্যাসেলের সেইন্ট জ্যাকব পার্কের সেই ম্যাচে অবশ্য খেলেন নি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো , আর এটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল দুই দলের মধ্যে ।

কিন্তু সেই ম্যাচের পর রোনালদো দলে ফিরলে বদলে যায় পর্তুগাল । পরের ম্যাচেই রোনালদোর হ্যাট্রিকে পর্তুগিজরা ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় এন্ডোরাকে । এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি ইউরোপসেরাদের । টানা ম্যাচ জিতে তারা পৌঁছে যায় বিশ্বকাপের কাছাকাছি । তবে শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সমীকরণটা বেশ একটু কঠিন ছিল পর্তুগালের জন্য । কারণ সেই গ্রুপে একমাত্র অপরাজিত দল সুইজারল্যান্ড জিতেছিল নয় ম্যাচের সবকটি , অন্যদিকে নয় ম্যাচের আটটিতে জয় পাওয়া পর্তুগালের সামনে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না । জয় ছাড়া অন্য কোন ফল হলে তাদের খেলতে হত প্লে-অফে ।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোন অঘটন ঘটে নি । লিসবনে সুইসদের ২-০ গোলে হারিয়ে রোনালদোর দল নিয়ে নেয় প্রথম দেখায় হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ । সেই সাথে কাটে বিশ্বকাপের সরাসরি টিকেট ।

গ্রুপ পর্বের ১০ ম্যাচে নয়টি জয়ে পর্তুগাল পায় ২৭ পয়েন্ট । সমান পয়েন্ট পেয়েছে সুইজারল্যান্ডও । কিন্তু গোল-ব্যবধানে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পর্তুগাল ।

পর্তুগালের বিশ্বকাপ বৈতরণী পার হবার পেছনে রোনালদোর একক অবদান ছিল বললেও বুঝি ভুল হবে না । নয় ম্যাচে একাই ১৫ গোল করে বাছাই পর্বে তার হাত ধরেই নির্ধারিত হয় পর্তুগালের ভাগ্য ।

পর্তুগালের হয়ে বাছাই পর্বে ১০ ম্যাচে ৯ গোল করে নজর কাড়েন তরুণ ফরোয়ার্ড আন্দ্রেস সিলভা ।

কেঁড়ে নেয়া হল ইউসেবিওর পাওনা বিশ্বকাপঃ

১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচলন হলেও পর্তুগাল মুল আসরে প্রথম খেলে ১৯৬৬ সালে । বিশ্বকাপের নবম সেই আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে । আর প্রথম আসরেই সারা বিশ্বকে নিজেদের ফুটবল নৈপুণ্য দিয়ে মুগ্ধ করে পর্তুগাল । বিশেষ করে সেবার পর্তুগীজ তারকা ইউসেবিও যা করেছেন , সেটা বিশ্বকাপ ইতিহাসে বিরল ।

সেবার বিশ্বকাপে পর্তুগাল ছিল গ্রুপ ‘দুই’য়ে । তাদের সাথে একই গ্রুপে ছিল আগেরদুই আসরের চ্যামইয়ন ব্রাজিল , সেই সময়ের অন্যতম সেরা শক্তি হাঙ্গেরি আর বুলগেরিয়া । নিজেদের প্রথম ম্যাচে পর্তুগাল ৩-১ গোলে হারায় হাঙ্গেরিকে । পরের ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে পর্তুগালের জয় ছিল ৩-০ গোলের ব্যবধানেও । আর শেষ গ্রুপ ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল হেরে যায় ৩-১ গোলে ।

টানা তিন ম্যাচে জয় নিয়ে পর্তুগাল পা রাখে দ্বিতীয় পরবে গ্রুপ-সেরা হিসেবে । দ্বিতীয় দল হিসেবে নক-আউট পর্বে উঠেছিল হাঙ্গেরি । আর প্রথম চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার রেকর্ড গড়ে ব্রাজিল ।

আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল মুখোমুখি ‘এশিয়ান পাওয়ার’ উত্তর কোরিয়ার । বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখা উত্তর কোরিয়া ছিল সেবারের আসরের অন্যতম আকর্ষণীয় দল । দুই দলের মধ্যকার সেই ম্যাচটি বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে । খেলার প্রথম ২৬ মিনিটেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে পর্তুগালকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া । কিন্তু এরপরেই স্বমহিমায় জ্বলে ওঠেন ইউসেবিও । ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ খ্যাত ইউসেবিও সেই ম্যাচে একাই করেন চার গোল , সৃষ্টি করেন ধংস স্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মত জেগে ওঠার এক অমর কাব্য ।

সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে ৫-৩ গোলে জিতে পর্তুগাল নাম লেখায় সেমি ফাইনালে ।

সেমি ফাইনালে পর্তুগাল মুখোমুখি হয় সেবারের আসরের স্বাগতিক আর পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের । যে ম্যাচটি নিয়ে এখনও বিতর্কের শেষ নেই । সেমি ফাইনালের সেই ম্যাচ প্রথমে হবার কথা ছিল লিভারপুলের গুডিসন পার্ক স্টেডিয়ামে । কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই ম্যাচের ভেন্যু বদলে নিয়ে যাওয়া হয় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে , যা কিনা ইতিহাসে বিরল । কথিত আছে, বিশ্বকাপে অভিষিক্ত দলের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়েই এই ভেন্যু বদল। সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ তো ইউসেবিও তো ছিলেনই ।

শেষ মুহূর্তে ম্যাচের ভেন্যু বদল হওয়ায় ট্রেনে চেপে লিভারপুল থেকে লন্ডনে আসতে হয় পর্তুগালকে ম্যাচের কিছুক্ষন আগে । পুরো ম্যাচে ইউসেবিওকে একের পর এক ফাউল করে আটকে রাখেন ইংলিশদের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নবি স্টিলস । ম্যাচে তিনি এমন কিছু ফাউল করেন যার জন্য মাঠ থেকে তার বহিস্কার ছিল প্রাপ্য । কিন্তু রেফারি সেগুলো এড়িয়ে যান । এরপরেও ব্ল্যাক-প্যান্থার ইউসেবিও ঠিক গোল করেছিলেন । সেই আসরে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৭০৮ মিনিট কোন গোল খায় নি ইংলিশরা । কিন্তু ইউসেবিও তাদের গর্ব গুঁড়িয়ে দেন গোল করে । যদিও শেষ পর্যন্ত ১-২ গোলে জিতে ইংল্যান্ড পরিকল্পিতভাবে উঠে যায় ফাইনালে । আর পর্তুগিজদের খেলতে হয় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে । সেই ম্যাচে ইউসেবিওর কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়া এখনও মনে করিয়ে দেয় বিশ্বকাপের অন্যতম বড় অবিচারের স্মৃতির ।

স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-১ গোলে হারাল পর্তুগাল। পেনাল্টি থেকে গোল করে সোভিয়েত কিংবদন্তি গোলকিপার লেভ ইয়াসিনকে স্যালুট করলেন ইউসেবিও। সেবার গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন ইউসেবিও।

সেবারের বিশ্বকাপ নিয়ে পরবর্তীতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তৎকালীন ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ । অভিযোগ আছে , তার স্পষ্ট নির্দেশেই সেবার কাপ তুলে দেয়া হয়েছিল ববি চার্লটনদের ইংল্যান্ডের হাতে , নইলে সেবার বিশ্বকাপ জেতার একমাত্র যোগ্য দল ছিল ইউসেবিওর পর্তুগাল ।

একটি বিশ্বকাপ দিয়ে অমরত্ব কিনে ফেলা ইউসেবিও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ১৯৬৬ সালের আসর ছিল আসলে ইউসেবিওর বিশ্বকাপ । তিনি পড়ে একবার বলেছিলেন- ‘ আমি ছিলাম বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। দুনিয়ার সেরা গোলদাতা।”আমি সব করেছি, পারিনি শুধু বিশ্বকাপটা জিততে।’

একটি তথ্য না দিলে সম্ভবত ইউসেবিওকে পুরোটা বোঝানো যাবে না। ক্যারিয়ারে ৭৪৫ ম্যাচে অবিশ্বাস্য ৭৩৩ গোল তার। দেশের পক্ষে ৬৪ ম্যাচে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন ৪১বার। এমন একজন খেলোয়াড়ের হাতে বিশ্বকাপ না দেয়াটা আসলেই ছিল অন্যায্য , অবিচার !

বিশ্বকাপে পর্তুগালের দীর্ঘ হতাশা-

ইউসেবিওর পর পর্তুগালের ফুটবলে আবারও নেমে আসে অন্ধকার । টানা বিশ বছর তারা বাইরে থাকে বিশ্বকাপের মুল আসরের । ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ফিরে এলেও বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে । তবে গ্রুপ ‘এফ’ এ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে পর্তুগাল প্রতিশোধ নেয় ১৯৬৬ সালের সেমিতে হারার । কিন্তু পরের দুই ম্যাচে পোল্যান্ড আর মরক্কোর কাছে তাদের বিদায় নিতে হয় প্রথম রাউন্ড থেকেই ।

১৯৮৬ সালের পর আবারও পর্তুগাল বিশ্বকাপে ফেরে ২০০২ সালে । সেই সময় পর্তুগাল পেয়ে গেছে ইউসেবিও পরবর্তী সেরা ফুটবলারদের । লুইস ফিগো , রুই কস্তাদের নিয়ে পর্তুগালের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল সেই সময়েই । পর্তুগালের ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ এর ধরে ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের আঙ্গিনায় পা রেখেও সেবার অবশ্য বেশী কিছু করতে পারে নি । সেবারে ‘ডি’ গ্রুপে তারা খেলে আমেরিকা , পোল্যান্ড আর সেবারের চমক স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে । কিন্তু একমাত্র পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছাড়া হেরে যায় বাকি দুই ম্যাচেই । ফলে এবারেও তাদের বিদায় ঘটে গ্রুপ পর্ব থেকেই ।

২০০৬ সালে আরেকটি পর্তুগিজ উত্থানঃ

ততদিনে লুইস ফিগো পেয়ে গেছেন বিশ্বসেরা পুরস্কারের স্বীকৃতি । তার সতীর্থ কস্তিনিয়া , সিমাও , ডেকো , পাউলেতা , পোস্টিগারা পেয়ে গেছেন বড় তারকার খ্যাতি । আর এসে গেছেন একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো । এই বিশ্বকাপের মাত্র দুই বছর আগেই পর্তুগালের ফুটবল ইতিহাসের আরেকটি বড় ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে । ২০০৪ সালে নিজেদের মাটিতে হট ফেভারিট হয়েও ইউরো কাপ জিততে না পারা ছিল এক বড় বিস্ময় । বিশেষ করে ফাইনালে গ্রিসের কাছে হেরে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা বলতে গেলে হাত থেকে ফেলে দেয় পর্তুগাল । সেই দুঃখ ভুলতেই ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে পা রাখে লুইস ফিগোর নেতৃত্বে সুপারস্টারে ঠাসা পর্তুগাল , যাদের সাথে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসেন তরুণ রোনালদো ।

রোনালদো এসেই নিজের জাত চিনিয়ে ফেলেন। সে সময় বিশ্বফুটবলে ব্রাজিলিয়ান ফেনম রোনালদো ছিল সেরার সেরা খেলোয়াড়। তাই এই রোনালদোর নাম ‘ছোট রোনালদো’ বলেই ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে পর্তুগাল সেমি ফাইনালে চলে যায়। প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। থিয়েরি অরির হঠাত করে পর্তুগালের ডি বক্সে পড়ে যাওয়ার নাটকে জিদানের পেনাল্টি গোল পর্তুগালকে হতাশায় নিয়ে যায়। সোনালী প্রজন্মের মানশি, ফিগোরা বঞ্চিত হয় বিশ্বকাপ ট্রফি থেকে। ধারণা করা হয়, ফিফা চেয়েছিল ফ্রান্সকে ফাইনালে দেখতে।

আজকের পর্তুগালের অজানা দিক ও প্রাসঙ্গিকভাবেই ২০১০ এবং ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ-

কখনো কেও সেভাবে বলছে না। খ্যাতির চূড়ান্তে পৌঁছে গেলে শুধু তাঁকে নিয়েই মেতে থাকা হয়। অথচ প্রতিভা বিচ্ছুরণের দিকটা ভাগ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ক্রিকেটে যেমন ভারতের সাচীন-বিনোদ কাম্বলির কথাই ধরা হোক। সাচীন যেখানে বিশ্বসেরা পর্যায়ে যেতে পেরেছিলেন, বিনোদ কী সে পর্যায়ে গিয়েছিলেন? সেটা হয় নাই। অথচ ওই দুই বন্ধু যখন একযোগে স্কুল ক্রিকেট খেলতেন তখন এক ডানহাতি ও আরেকজনের বাম হাতের উইলো থেকে যেভাবে রানের বন্যা বইতো তখন বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা ভাবতেন, ওরা কখন আউট হবে ? সেই বিনোদ বন্ধু সাচীনের জাতীয় দলে খেলতে পারলেও অনেকদিন ধরে কাম্বলি সেরার সেরা পর্যায়ে থাকতে পারেনি— সেটা সাচীনের খানিকটা অনিচ্ছায় হোক কিংবা কাম্বলির ফর্মহীনতার কারণে হোক— সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও ওদের ফিকে হয়ে গেছে। তা খেলা ছেড়ে দেয়ার পরেও। এমন তো কথা ছিল না ! প্রতিভার বিচারে সাচীনের চেয়েও বিনোদ বড় ছিল তা আজো ভারতের অনেকেই স্বীকার করেন। পর্তুগালেও ঘটেছে এমন একটা দিক। যা বিশ্ব মিডিয়ায় সেভাবে আসেনি বা অতি খর্বাকারে আসে বৈকি ! পাঠকবর্গ হয়তো ভাবছেন কাদের কথা বলা হচ্ছে? হ্যাঁ, একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও অন্যজন রিকারডো কোয়েরসেমা।

ক্রিশ্চিয়ানোর ব্যাপারে আর কে না জানে ! ফলত তিনি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ই। সবকিছুতো আর ট্রফি উঁচু করে ধরার সাফল্য দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। তিনি ব্রাজিলিয়ান নন, না আর্জেন্টাইন, না ইটালিয়ান কিংবা ইংরেজ অথবা স্প্যানিশ — তিনি পাক্কা এক পর্তুগীজ, যাকে অখ্যাত হয়েই ধীরে ধীরে জানান দিতে হয়েছে, পূর্বসূরি ইউসেবিও তোমাদের কথিত সর্বকালের সেরা পেলের চেয়ে বড় খেলোয়াড় ছিলেন, অনেকটা বড় ভাই লুইস ফিগো কোন অংশে জিদানের চেয়ে ছোট খেলোয়াড় ছিল না—– আর আমার ব্যাপারে যদি শুনতে চাও তাহলে বলবো, আমার চেয়ে ইতিহাসে কেও আগে বা এখনো ভাল ফুটবল খেলে নাই। রোনালদোর কথাকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই কিন্তু। সে যখন স্পোর্টিং থেকে ম্যান ইউতে যায় তখন বল পায়ে নিয়ে যে ধরণের ড্রিবলিং করতে দেখা গেছে অমন স্কিলস নিয়ে বল বের হয়ে যাওয়ার উদাহরণ আর কোথায় দেখা গেছে ? কে দেখাতে পেরেছে তা ? সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ের না। অস্বাভাবিক– মানুষ পারে কিভাবে তা ! হয়তো ম্যারাডোনা- মেসিরা বল নিয়ে টান দিয়ে ছুটতেন, বাঁধা পার হতেন বা হয় কিন্তু পায়ের কি সব কাজে রোনালদো যা করে তা করে দেখানো কারোর পক্ষেই সম্ভব হয়নি। সেটা দেখতে গেলে স্লো মশান এ রিপ্লে দেখে বুঝতে হয়, রোনালদো কিভাবে বল নিয়ে পায়ের যাদু নয়, খুন করে গোলাকার বস্তুটাকে !

অতঃপর একদিন; রোনালদো হয়ত বুঝে গেলেন ফুটবল গোলের খেলা। কাজেই গোল করাই হোক পরিণতি। মেশিন হয়ে গেলেন। দানব বনে গেলেন প্রতিপক্ষ দলগুলোর কাছে। তিনি খেলতে নামলেই এখন ধরে নেয়া হয় তার দল ১-০ গোলে এগিয়ে গেছে। রোনালদো মানেই এক গোল নিশ্চিত, এরপর একাধিক গোল করলে সেটা বোনাস। সেই রোনালদো অখ্যাত এক পর্তুগীজ ক্লাব থেকে একদিন ইংল্যান্ডে উড়ে গেলেন। কিন্তু কিভাবে গেলেন? ছেলেটা কখনো লেফট আবার কখনো রাইট উইং দিয়ে এমন দ্রুতগতিতে বল নিয়ে উঠে যেত আর গোল করত তা দেখে ফারগুসনেরা ভাবত, একদিন সে বিশ্বসেরা হবে। তবে ওই লেফট উইং আবার কখনো রাইট উইং দিয়ে আরো একজন ওই স্পোর্টিং সিপিতে খেলতেন। রোনালদোর বন্ধু কোয়েরসেমা। তাঁরও ছিল অভিনব স্কিলস। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ক্রস করার সেরার সেরা অস্তিত্ব। প্রতিভার বিচারে তিনি কম ছিলেন না রোনালদোর চেয়ে। অথচ কোয়েরসেমার নাম জান্তেপেরেছেন কতজন দর্শক। বাস্তবতা হল, রোনালদো জানে কোয়েরসেমার সামর্থ্য। এই কোয়েরসেমাকে নিয়েই ২০১৬ ইউরো জয় করে রোনালদো বুঝে গিয়েছিলেন, বিশ্বকাপটাও হাতের মুঠোয় আসতে পারে। যদি বন্ধুটা আমার বারংবার ক্রস, মাইনাস করে আমাকে বল যোগাতে পারে। ওর সে সামর্থ্য আছে। কোয়েরসেমা অদম্য এক সত্তা। সে নিজেও জানে তার বন্ধু তর্ক সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা। কিন্তু তর্কটা থাকবে কেন? সেটা আরো স্পষ্ট হয় যদি ক্রিশ্চিয়ানোর হাতে যদি বিশ্বকাপটা দেয়া যায়। কোয়ারেসমা জানে, সে রোনালদোর মত ভাগ্য নিয়ে জন্ম নেয় নি— কিন্তু তাঁর ক্ষমতাকে স্বীকার করে বন্ধু রোনালদো। তাই গেল দুই দিন আগে একই ক্লাব ও দেশের হয়ে খেলতে খেলতে বন্ধু হওয়া ন্যানির আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপে বাদ পড়াটায় রোনালদো কোচ স্যান্টোসের সাথে হয়তো আলাপচারিতায় থাকেনি। ন্যানি দিয়ে আসলে হচ্ছিল না, শৈশবের বন্ধু ও ফুটবলের এক নিখুঁত শিল্পী কোয়ারেসমা পেলেই রোনালদোর চলবে। ২০ নং জার্সি নিয়ে ৯০ মিনিটের খেলায় ৭০ মিনিটের পর শেষ ২০ মিনিট কোয়ারেসমা মাঠে নামলেই রোনালদো জানেন, খেলার হিসাব একটু পরেই বদলে যাবে। ও শুধু আমার বন্ধু নয়, প্রতিপক্ষের জালে বল ঢুকতে হলে আমি, কোয়ারেসমা আর জাল— যেন একসূত্রে গাঁথা।

পর্তুগাল বিশ্ব জয়ের নেশায় বুদ হয়ে আছে সেটা মিডিয়া কিংবা অন্য মাধ্যমে আসেনি ও আসবে না। এটাই এখন পর্তুগাল ফুটবলের কৌশল। তাঁরা সেরা আন্ডারডগ হয়ে খেলতে চায়। ফেবারিট হয়ে নয়। তাতে করে চাপ বেড়ে যায়। পর্তুগালের এক বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক গেল কনফেডারেশন কাপে পর্তুগালের সাফল্য কামনা না করে লিখেছিলেন, “কাপ নেয়া যাবে না, টার্গেটে পড়তে হবে তবে ! যার প্রভাব রাশিয়া বিশ্বকাপে যেয়ে পড়বে। ”

পর্তুগাল তাই নিজের মত করেই এগোচ্ছে। দুই বন্ধু রোনালদো ও কোয়েরসেমা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ— গোল করতে হবে ও করাতে হবে। আর রক্ষণের নেতৃত্বে রোনালদো রেখেছেন তাঁর জীবনের আরেক সেরা বন্ধু পেপেকে। পেপে, অতি বিশ্লেষণে তিনিই বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্টপার ব্যাক। পেপে মানেই রোনালদো যা করবে তাতেই আনন্দে ভেসে যাওয়ার সত্তা। পেপে যেভাবে কথা বলে তাতে করে বোঝা যায়, এক রোনালদোর জন্য তাঁর জীবনটা দিতেও সে কার্পণ্য করবে না। রোনালদো তাই মহাসুখে আছেন। খেলার ভেতরে ও মাঠের বাইরে এমন দুই বন্ধু থাকলে তাঁর আর কী লাগে ! সব কিছু জয় করা যায়। অথচ, গেল বিশ্বকাপ শুরুর আগেই রোনালদো বলেছিলেন, একটা বিশ্বকাপ জিততে পাঁচ থেকে ছয় জন অতি বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকতে হয়। সেটা সেবার ছিল না, নিজেও শতভাগ ফিট ছিলেন না। জার্মানি আর আমেরিকার বহুল বিতর্কিত গ্রুপ পর্বের ম্যাচটাও পর্তুগালকে দ্বিতীয় রাউন্ডে পর্যন্ত নিতে পারেনি। সেই পর্তুগাল এবার বিশ্ব জয়ের মিশনে আছে। হ্যাঁ, দলে গুয়েডেসের মত তরুণ প্রাণ আছে, বারনান্ডো সিলভা নামে মেসির খেলার ধরণের মত একজন খেলোয়াড় আছেন, আছেন ম্যানুয়েল ফারনান্ডেজ— ফুটবলের এক নিখুঁত শিল্পী, এই মুহূর্তের বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার উইলিয়াম কারবালহো ও রাফায়েল গুরেইরা থেকে শুরু করে আদ্রিয়েনরা পর্যন্ত তাই কল্পনায় ভাসছেন, সব কিছুই সম্ভব।

এদিকে বস ওয়ান নামে পরিচিত পর্তুগীজ হোসে মারিন হো বলছেন, যে দলে রোনালদো থাকে তাঁদের সব কিছু করা সম্ভব। রোনালদোর জন্য অসম্ভব বলে কিছু নেই। রোনালদোও জানে এবারের দলটাকে নেতৃত্ব দিতে পারলে ইতিহাসের খুব কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। আর্জেন্টাইন গ্রেটেস্ট ম্যারাডোনাও বলেছেন, ওই রোনালদোর মাঝে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা আছে আর সে নিজে যেভাবে গোল করে তাঁকে শ্রদ্ধা করার সুযোগ তো আছেই।

এদিকে রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে ইউরোপিয়ান পাওয়ার-হাউজ পর্তুগাল । ২০১৬ সালে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বড় শিরোপা ইউরোপিয়ান ট্রফি জয়ের পর রাশিয়া বিশ্বকাপে পর্তুগাল যাচ্ছে আরও বড় কিছু প্রাপ্তির আশায় , আর সেটা অবশ্যই বিশ্বকাপ জয় । সেই লক্ষ্যেই একটু আগেভাগে নিজেদের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করলেন পর্তুগীজ কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস।

দিন কয়েক আগে ৩৫ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল পর্তুগাল । কয়েকদিনের মধ্যেই সেই দল থেকে ছেঁটে ফেললেন স্যান্টোস ১২ জনকে । রাখলেন নিয়মমাফিক ২৩ জনের চূড়ান্ত দল ।

বৃহস্পতিবার পর্তুগালের ঘোষিত দলে অনুমিতভাবেই অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো । এই দলে আছে সাবেক রিয়েল মাদ্রিদ তারকা পেপে আর তার সাথে বর্তমানে বেসিকতাসে খেলা সেই রিকার্ডো কোয়েরসেমা । সেই সাথে আছেন স্পোর্টিং লিসবনে খেলা উইলিয়াম কারবালহো । এছাড়াও আছেন মোনাকোর মিডফিল্ডার হুয়াও মুতিনিও ।

তবে এই দলে সুযোগ হয় নি এডারের । ২০১৬ সালের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে স্ট্রাইকার এডার গোল করে শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন পর্তুগালকে। সেই এডারকে স্থান দেওয়া হয়নি রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে। জায়গা হয়নি লাৎসিওর উইঙ্গার ন্যানি, বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আন্দ্রে গোমেজ ও বায়ার্ন মিউনিখের রেনাটো সানচেজেরও।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর লুইস ফিগোর পর পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশী ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে ন্যানির । গেল বছরের কনফেডারেশনস কাপের পর থেকে জাতীয় দলের বাইরে ন্যানি , এবার বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়লেন সাবেক এই ম্যান ইউ তারকা ।

বিশ্বকাপে পর্তুগাল রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন, মরোস্কো ও ইরান। ১৬ জুন স্পেনের বিপক্ষে পর্তুগাল তাদের প্রথম ম্যাচটি খেলবে। ২০ জুন মরোক্কোর বিপক্ষে খেলবে রোনালদোরা। আর ২৬ জুন শেষ ম্যাচে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ইরান।

পর্তুগালের ২৩ সদস্যের স্কোয়াড :

গোলরক্ষক : অ্যান্থনি লোপেজ, বেতো ও রুই প্যাট্রিসিও।

ডিফেন্ডার : ব্রুনো আলভেস, সেডরিক সোয়ারেস, হোসে ফন্তে, মারিও রুই, পেপে, রাফায়েল গুয়েরিও, রিকার্ডো পিরেইরা , রুবেন দিয়াস।

মিডফিল্ডার : আন্দ্রিয়েন সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্দেস, জোয়াও মারিও, জোয়াও মৌতিনহো, ম্যানুয়েল ফার্ন্দান্দেস , উইলিয়াম কারভালহো।

ফরোয়ার্ড : আন্দ্রে সিলভা, বার্নার্ডো সিলভা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, গেলসন মার্টিনস, গোনকালো গুইদেস ও রিকার্ডো কোয়ারেসমা।

বস ফারনান্দোর ২৩ সদস্যের ঘোষিত দলে কনসেলো নেই। এটা মেনে নেয়ার সুযোগ দেখছে না পর্তুগালের জনগণ। একই সঙ্গে মাঝমাঠে দানিলো পেরেইরার ইনজুরিগত কারণে খেলতে না পারার দিকটা রয়েছে, রয়েছে ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় প্রতিভাবান কোয়েন্ট্রার স্বেচ্ছায় দল থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণাও। তবে দুই বন্ধু ক্রিশ্চিয়ানো ও কোয়ারেসেমার আক্রমণে উঠে যেয়ে যা ইচ্ছে করার দিক এবং রক্ষণে বন্ধু পেপেকে হাত উঠিয়ে বলা, সামলিয়ে নিও বন্ধু প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলোকে। গুয়েডেসদের পিঠ চাপড়িয়ে উৎসাহ যুগিয়ে রোনালদো যদি সকলের সেরাটা বের করে নিয়ে আসতে পারেন তিনি তো সর্বকালের সেরার অমরত্ব পাবেনই— পর্তুগাল ফুটবল নতুন উচ্চতার শিখরে পৌঁছে যাবে। দুই একবার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ থেকেও পূর্বসূরিরা যা পারেনি রোনালদোর তো পারাই উচিত। ইউসেবিওর আজীবনের কষ্টকে বিলীন করতে ওই প্রয়াত আত্মাকে সুখী করতে রোনালদোর তাই জাগা উচিত। ইউসেবিওকে তো খেলার সময় আর গ্যালারীতে দেখতে পারবে না ওই রোনালদো। বাবার মত অসুস্থ ফারগুসন এর জন্য হলেও রোনালদোকে জিততে হবে। যে ফারগুসন বড়াই করে সব সময় বলে থাকেন, আমার ছেলেটার মত আর কেও নেই। পর্তুগাল এর প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সে দেশের জনগণ এবার তাকিয়ে আছে ক্রিশ্চিয়ানোর দিকে। কথিত আছে, দেশের অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে এই রোনালদো স্পেনের কাছ হতে অর্থ নিয়ে পর্তুগালে সঁপে থেকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপে স্পেনকে জেতানোয় অদৃশ্য ভুমিকা রেখেছিলেন ! আচ্ছা, ২৬ মে উয়েফা ফাইনালে আবার সেরা কিছু করতে যেয়ে অক্ষত পা নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে পারবে তো রোনালদো ?

রোনালদো লড়ুক, যাক বিশ্বকাপে। এই বাংলাদেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সমর্থকদের মাঝে ছোট করে হলেও আরেকটা দেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম পর্তুগাল। তা তো শুধু ওই রোনালদোর জন্যই। রোনালদোও জানে আমার দুই বন্ধু কোয়ারসেমা ও পেপেকে নিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। বাংলাদেশকে জানতে হবে, চিনতে হবে তাঁর ওই দুই বন্ধু ইস্যুতে। কোয়ারসেমা জীবনে কী পেল? রোনালদোর মত সাফল্য পেল না কিন্তু দুই বন্ধু পারবে সবাইকে গুড়িয়ে দিতে। ত্যাগই অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুত্বকে বড় করে। কোয়ারসেমা একটু উদার হলেই রোনালদোর অমরত্ব নিশ্চিত হবে। ওরা মাঠে আজো খুনসুটি করে, দুষ্টুমি করে—- আরেকটু দুষ্টুমি ব্রাজিল, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সদের সাথে তাঁরা করে বসলেই ব্যাস। পর্তুগালের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে। বাংলাদেশেও কিছু সংখ্যক মানুষ রসগোল্লা খেতে বসবে, আনন্দে আহ্লাদে রোনালদোর প্রতি সম্মান জানিয়ে। ভাল কথা, রসগোল্লার মত মিষ্টিটা এই বাংলায় পর্তুগীজ শাসকেরাই তো এনেছিলেন। ক্রীড়াবোদ্ধা দর্শক কিংবা পাঠকেরা সেটা জানেন তো ?ক্রীড়ালোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়