শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০১৮, ১১:৪২ দুপুর
আপডেট : ১৮ মে, ২০১৮, ১১:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যৌন হেনস্তা হচ্ছে, প্রশাসন ‘চুপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: যৌন হয়রানির দায়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে শিক্ষা, গবেষণা, পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন তিনি। একই দিন থেকে ছয় মাসের স্বেচ্ছা ছুটিতেও আছেন এই শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পাঠ্য পর্ষদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান।

বিভাগের পাঠ্য পর্ষদের এক হাজার ৮০৩তম জরুরি সভায় যৌন হয়রানির দায়ে তার বিরুদ্ধে উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক আকতারুজ্জামান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকারও করেছেন। গত ১৪ মে, সোমবার কৃষি অর্থনীতি বিভাগের পাঠ্য পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা ও প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও দিয়েছেন এই অধ্যাপক।

আকতারুজ্জামানের মতো আরও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ থাকা শিক্ষক দোষ স্বীকার করার পরও ক্লাস-পরীক্ষা-গবেষণা থেকে বিরত রাখার মধ্যেই দোষীর শাস্তি সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। বড়জোর শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগও নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্টদের।

‘সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা’য় বিশ্ববিদ্যালয় এমনটা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোচ্চার রয়েছে তাদের সহকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশ। গত ৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকা তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ১৪২ জন শিক্ষক।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘কৃষি অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের আরেকজন অধ্যাপককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ঘটনায় বাকৃবি শিক্ষক সমাজ আজ বিব্রত। তা ছাড়া কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে নারীসহ এক অধ্যাপকের তালাবদ্ধ হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি, যা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। শিক্ষকদের অনৈতিক কার্যকলাপ রোধে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটির বিরুদ্ধে কাজ না করে চুপচাপ বসে থাকার অভিযোগ রয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তিন শিক্ষকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ থাকা শিক্ষকরা হলেন কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান, অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আওয়াল এবং কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আক্তার হোসেন চৌধুরী।

এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে ১৪২ জন শিক্ষক আবেদন করেছিলেন, তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক পরেশচন্দ্র মোদক।

পরেশ বলেন, ‘একের পর এক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠছে। কিন্তু কোনো রকম তদন্ত বা শাস্তি হচ্ছে না, বরং যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে, তারাই প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রশাসনিক কাঠামো, সেটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

আগে যারা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতেন, তারাও এখন চুপচাপ আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা-ভাবনা করলাম, কী করা যেতে পারে। এসব নিয়ে কথা বলায়, আমাকেই দোষারোপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিভাগের পাঠ্য পর্ষদ। পাঠ্য পর্ষদের সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্তের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আনুমানিক বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা চলার সময় অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামানের অফিস কক্ষে বহিরাগত এক নারীর সঙ্গে তার হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির কারণে বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষার পরিবেশের বিঘ্ণ ঘটে। এই অবস্থায় বিভাগীয় প্রধান সরেজমিনে আকতারুজ্জামানের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং বাস্তবতা দেখতে পান।

তখন ওই নারী দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে আকতারুজ্জামানকে দাবি করেন। এক পর্যায়ে ওই নারী বিভাগীয় প্রধানের কার্যালয়ে গিয়েও অধ্যাপক আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে জমি জালিয়াতি ও তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে না নেওয়ার অভিযোগ করে এর বিচার দাবি করেন।’

ওই লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে একই ধরনের ঘটনায় আকতারুজ্জামানের অফিসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এই নারী। তৎকালীন প্রক্টর ড. এ কে এম জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে হাসপাতালে পাঠান। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে আকতারুজ্জামানকে সতর্ক করে একটি চিঠিও দিয়েছিল বিভাগীয় পাঠ্য পর্ষদ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় অধ্যাপক আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হয়রানি করার মৌখিক অভিযোগও রয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘অধ্যাপক আকতারুজ্জামানকে কেন্দ্র করে নারীঘটিত বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি হওয়ার কারণে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়। এক. অধ্যাপক আকতারুজ্জামানকে জানুয়ারি-জুন ২০১৮ এবং জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৮ সেমিস্টারের জন্য শিক্ষা, গবেষণা, পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

দুই.আকতারুজ্জামানকে চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ছয় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য অনুরোধ এবং এই সময়ের মধ্যে তার অফিস ব্যবহার না করতে অনুরোধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। এই সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটলে পরবর্তী সভার সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।’

সভার বিস্তারিত বিষয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠিও দেওয়া হয় বিভাগের পক্ষ থেকে। ১৬ মার্চ দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, উল্লিখিত সিদ্ধান্তের আলোকে অধ্যাপক আকতারুজ্জামানের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় রেজিস্ট্রারকে।

কৃষি অর্থনীতি বিভাগের নেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য গত ১৪ মে, সোমবার বিভাগের পাঠ্য পর্ষদ বরাবর চিঠিও দেন অধ্যাপক আকতারুজ্জামান।

বিভাগের আনা যাবতীয় অভিযোগ সত্য স্বীকার করে ওই চিঠিতে আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভাগের পাঠ্য পর্ষদের ১৮০৩তম জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার মৌখিক অনুরোধ করেছিলাম। ছয় মাসের ছুটির পরিবর্তে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি বহাল রাখার জন্যও অনুরোধ করেছিলাম। আমার অনুরোধ পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাঠ্য পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার দুই মাস পার হওয়ার পরও কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’

আকতারুজ্জামান ওই চিঠিতে আরও জানান, জরুরি ভিত্তিতে তার অনুরোধগুলো পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেন তিনি। ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার এবং সংশোধিত আকারে আবার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক অভিযোগ

অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আওয়ালে বিরুদ্ধে সম্প্রতি নতুন একটি যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। বাকৃবির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, আবদুল আওয়াল সম্প্রতি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তিনি টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন।

এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল আওয়াল বলেন, ‘বিভাগে থাকলে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হতেই পারে। আমি বিভাগের সবার সাথেই সুসম্পর্ক মেইনটেইন (বজায় রেখে) করে চলি।’

প্রতিবেদক এই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে চান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মেহেদি হাসান রাসেলকে চেনেন কি না। এর বাইরে এই সেকশন অফিসারের বিষয়ে আর কিছু জানতে চাওয়া হয়নি শিক্ষকের কাছে।

১৬ মে, রাত ১০টা ১৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৩ মিনিট কথা হয় আওয়ালের সঙ্গে। এর এক ঘণ্টা পর ১১টা ১৪ মিনিটে প্রতিবেদককে ফোন করে মেহেদি হাসান রাসেল জানতে চান, অধ্যাপক আওয়ালকে কেন ফোন করা হয়েছিল।

কথা প্রসঙ্গে মেহেদি হাসান বলেন, ‘ওই মেয়েটা (অভিযুক্ত কর্মকর্তা) একটা ব্ল্যাকমেইলার। সে ওয়ান কাইন্ড অব (এক ধরনের) দেহ ব্যবসায়ী। সে বিভিন্নভাবে এই কাজগুলা করে, এগুলা করে। এইভাবে মানুষকে ফাসায়, টাকা-পয়সা হাতায় নেয়। এইটুকুই আমি জানি।

এই বিষয়ে র‌্যাবের কাছে ইতোমধ্যে অভিযোগ দেওয়া আছে। ওই প্রফেসরকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করার কোনো একটা পাঁয়তারা আছে তো। এখন এইখানে যারাই থাকবে, তারাই ইনক্লুড (অন্তর্ভুক্ত) হবে। তো সেই জায়গা থেকেই আপনাকে ফোন দিলাম, প্রফেসরকে কোনো ব্ল্যাকমেইলার ফোন দিলো কি না।’

এত কিছু কীভাবে জানেন জানতে চাইলে মেহেদি হাসান বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ওই মেয়েটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জব করে। সেই হিসাবে জানি।’

আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম গেটসংলগ্ন কেওয়াটখালীতে এক নারী হোমিও চিকিৎসকের বাসার কক্ষ থেকে তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি তখন গণমাধ্যমেও আসে।

এ বিষয়ে আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘এই ঘটনাটি পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। উনি তো একজন চিকিৎসক। উনি যদি দাওয়াত দিয়া নিয়া যায়...। তাদের পরিবারের আদি-অন্ত সবার সাথেই আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।’

সাজা ভোগের পর বিভাগে ফেরা

বাকৃবি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন চৌধুরীকে ২০১৪ সালে নারীসহ তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে তদন্ত প্রক্রিয়া ধামাচাপা পড়ে যায়। তারপর গবেষণারত ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিভাগের পাঠ্য পর্ষদ। দুই বছর বহিষ্কার থাকার পর আখতার হোসেন বিভাগে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিভাগের সভাপতি।

২০১৪ সালের ২ জুলাই পাঠ্য পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত ছাত্র-ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ বিস্তারিত পর্যালোচনা করে বিভাগীয় পাঠ্য পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। তাকে জুলাই ২০১৪, জুন ২০১৬ পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব শিক্ষক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।’

এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা অভিযোগ করেছে, তারাই জানে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেটারই পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো তারা আমাকে জড়াইছে। পাঁচ-দশ বছর আগের ঘটনা তো আর সাম্প্রতিক ঘটনা না। তারপরও তারা আমার নাম সম্প্রতি ঘটা ঘটনার মধ্যে দিয়েছে। কেউ কাউকে পছন্দ করে না, একটা বিষয় দিয়ে সমাজে ছোট করা। এসব কারণে হয়তো তারা আমার নাম জড়াইছে।’

তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীকে নিয়োগ দেন বাকৃবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. রফিকুল হক। ২০১৬ সালের মার্চে ওই কর্মচারীর সঙ্গেই যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। পদত্যাগের পরের দিনই তিনি শিক্ষকতা থেকেও অবসর নেন। পদত্যাগ আর শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়াতেই যেন তার সব অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি ঘটে। এরপর সাবেক এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রশাসন ও তদন্ত কমিটির

তদন্তের কাজ এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে তথ্যের অপেক্ষায় আছেন বলে জানান তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার দুই দিন পর আমরা বিষয়টি নিয়ে সভায় বসছিলাম। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছি। নামসহ কিছু তথ্য-প্রমাণ দিলে আমরা আবার বসব।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অফিসে যত কাগজপত্র আছে, সব ওই কমিটিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে অবশিষ্ট আর কোনো কাগজপত্র নাই।’

গণস্বাক্ষরে নাম না দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক পরেশচন্দ্র মোদক জানান, তারা প্রথমে অভিযোগ থাকা তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ নাম উল্লেখ থাকায় তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি হচ্ছিলেন না। ওই সব শিক্ষকদের বক্তব্য ছিল, তদন্ত করলে তো তাদের নাম চলেই আসবে। তাহলে আলাদা করে অভিযোগ থাকা শিক্ষকদের নাম দেওয়ার দরকার কী।

পরেশচন্দ্র আরও জানান, কিছু শিক্ষককের বক্তব্য ছিল, শুধু তিন শিক্ষক না, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক শিক্ষক এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে ওই তিন শিক্ষকের নাম গণস্বাক্ষরে উল্লেখ করা হয়নি। তবে অধিকাংশ শিক্ষকই নাম উল্লেখ করে দেওয়ার পক্ষে ছিল। তবে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে যদি শিক্ষকদের নাম চাওয়া হয়, তা দেওয়া হবে।

প্রশাসনের ভাষ্য

রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তিন শিক্ষক দোষী কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটি করা হয়েছে।

তারা ঠিক মতো কাজ করছে কি না সেটা কীভাবে তদারকি করছেন জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমরা তাদেরকে সময় বেঁধে দিয়েছি। বলেছি, যথাশিঘ্র প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য।’

সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বললেও ঠিক কবে প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে তা উল্লেখ করা হয়নি বলেও জানান এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আকবরকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

যৌন নির্যাতনবিরোধী কমিটি ‘অকার্যকর’

বাকৃবির যৌন নির্যাতনবিরোধী একটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি ছিল। সেটাও এখন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে আছে বলেও অভিযোগ করেন পরেশচন্দ্র মোদক। তিনি বলেন, ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটি ইনভ্যালিড (অকার্যকর) হয়ে আছে। কোনো যৌন নির্যাতন হলে তার প্রতিবেদন দেওয়া, এ রকম নানা কাজ করত ওই কমিটি।’

তবে ওই কমিটি কার্যকর আছে দাবি করে রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী যে কমিটি ছিল, তা এখনো কার্যকর আছে। তারা কোনো ঘটনার আপডেট দেয় না। যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন তারা কাজ করে। কোনো অভিযোগ না থাকলে কমিটি সভা করে কী করবে?’

আইনে কী বলে, প্রশাসন যা করে

উপাচার্যসহ অভিযোগ থাকা চার শিক্ষকের মধ্যে একজন নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা-গবেষণা বর্জনের মতো ব্যবস্থা নিলেও দেশের প্রচলিত আইনে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু প্রচলিত আইনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যজনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে দেশের প্রচলিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা ভুক্তভোগী ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না জানতে চাওয়া হয় হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমানের কাছে। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘যিনি ভুক্তভোগী বা তার পরিবার কিংবা আত্মীয় স্বজন থানায় মামলা করতে পারেন, কিংবা কোর্টে গিয়েও মামলা করতে পারেন তারা। সে ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

এহসানুর রহমান বলেন, ‘যখন একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যায়, এটা তদন্ত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক যে আইনগুলো আছে, সে আইন অনুযায়ী অসৎ আচরণের দায়ে শিক্ষককে বরখাস্ত করতে পারে প্রশাসন। বরখাস্তের পরে দায়ী শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ করবেন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে, সে রকম কোনো বিধি-বিধান নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সত্যতা পেলে ভুক্তভোগীকে দিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দিয়ে থানায় মামলা করাতে পারেন বা করা দরকার।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম জানান, দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসে না। যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ আসে, প্রশাসন সেই ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হলে তো কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ আসতে হবে। কিন্তু সেটা তো আসে না। যেটুকু আসছে, সেটুকু আমরা মেকআপ করে ফেলছি।’

সূত্র: প্রিয় ডট কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়