শিরোনাম
◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০১৮, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ১৮ মে, ২০১৮, ০৩:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জামদানী ইলিশের পর খিরসাপাত পাচ্ছে জিআই, তালিকায় রয়েছে ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম

মতিনুজ্জামান মিটু : জিআই সনদ পাচ্ছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, তালিকায় রয়েছে ল্যাংড়া ও আশ্বিনা। জামদানী এবং ইলিশের পর খিরসাপাত আমই হচ্ছে জিআই (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিগেশন) নিবন্ধিত তিন নম্বর পণ্য। গত ফেব্রুয়ারি মাসে খিরসাপাত আমের ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিগেশন) আবেদন অনুমোদন দিয়েছে। খিরসাপাত আমের জিআই সংক্রান্ত জার্নাল বিজি প্রেসে মুদ্রনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় পেটেন্ট ডিজাইন এন্ড ট্রেড মার্ক বিভাগের পরিক্ষক মো. বেলাল হোসেন বলেন, খিরসাপাতের ভৌগলিক নির্দেশক প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে রয়েছে। ছাপার কাজ শেষে খিরসাপাতের ভৌগলিক নির্দেশক প্রকাশ ও প্রচার করা হবে। দুই মাসের মধ্যে কেউ এর বিরুদ্ধে আপত্তি না জানালে খিরসাপাতের জিআই সনদ দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডব্লিউ ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনে’র স্টান্ডার্ড, বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৫ এর আলোকে চাপাইনবাগঞ্জের খিরসাপাতকে জিআই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি) এর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামিম রেজা খিরসাপাত আমের জিআই পাওয়ার আবেদন করেন। খিরসাপাত আমই হচ্ছে জিআই পাওয়া বাংলাদেশের তিন নম্বরের পণ্য। জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিগেশন ক্রপস ক্যাটাগরিতে খিরসাপাত আম অনুমোদিত হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে জিয়োগ্রাফিকাল প্রোডাক্ট হিসেবে বাংলাদেশের জামদানী এবং ইলিস জিআই সনদ পায়। জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিগেশন অনুমোদন পাওয়ার তালিকার ১১ ও ১২ নম্বরে বাংলাদেশের ল্যাংড়া এবং আশ্বিনা আম রয়েছে। গাজিপুরের জয়দেবপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট করা আবেদনের (আবেদন নং- ৩) এর অধিন ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য ‘খিরসাপাত জাতের আম’ যা শ্রেনি ৩১ এ অন্তর্ভূক্ত, তা নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১২ অনুসারে জার্নালে প্রকাশ করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের ডিএনএ সিকুইয়েন্স ও অ্যামপ্লিফিকেশনের ছবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫ টি উপজেলার বড় আমচাষীদের তালিকা এবং অন্যান্য প্রমাণাদি তুলে ধরে জিআই এর জন্য আবেদন করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় সর্বত্রই এই জাতটির বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। ফল মাঝারি আকারের এবং অনেকটা ডিম্বাকৃতির। ফলটি গড়ে লম্বায় ৮.৬ সেন্টি মিটার, পাশে ৭.৫ সেন্টিমিটার, উচ্চতায় ৬.০ সেন্টিমিটার এবং গড়ে ওজন ২৬৩.৯ গ্রাম হয়। পাকা ফলের ত্বকের রং সামান্য হলদে এবং শাঁসের রং হলুদাভ। শাঁস আঁশবিহীন, রসাল, গন্ধ আর্ষণীয় ও বেশ মিষ্টি। গড় মিষ্টতা ২৩ ভাগ। ফলের খোসা সামান্য মোটা ও শক্ত এবং আঁটি পাতলা। এর ভৌগোলিক নির্দেশক নাম: ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম’। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম উৎকৃষ্ট জাতগুলোর মধ্যে একটি মধ্যম মৌসুমী এবং খুবই জনপ্রিয় বাণিজ্যিক জাত। জ্যৈষ্ঠ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আম পাকা শুরু হয়। ফল পাড়ার পর পাকতে ৫ থেকে ৭ দিন লাগে। ফলন খুবই ভাল তবে অনিয়মিত। ফল পরিপক্ব হতে (ফুল আসা থেকে) প্রায় চার মাস লাগে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা পূননির্ধারণ হলে অনেক আমবাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। এতে এই জেলায় বিভিন্ন জাতের আমের সমাহার ঘটে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আম বাগানের ইতিহাস উদ্ধৃতি দিয়ে আবেদনে তুলে ধরা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে একটি বিরাট ঐতিহাসিক আম বাগান রয়েছে। ২০০ বছরের পুরানো এ বাগানটির আয়তন ২০০ বিঘা। ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশ কুমার আচার্য বাহাদুর ব্রিটিশ আমলে এ আম বাগান গড়ে তোলেন। তিনি এখানে এসে কানসাটের কাচারি বাড়িতে থাকতেন এবং তাঁর বাগান দেখাশুনা করতেন। এছাড়া আরো একটি ঐতিহাসিক আম বাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকশায় রয়েছে। এটি চৌধুরীদের আম বাগান নামে খ্যাত। ৩৫ বিঘা জমির এ আম বাগানটির বযস ১৫০ বছর। এটি মনাকশার জমিদার শাহ মোহাম্মদ চৌধুরী তৈরি এবং দেখাশুনা করতেন। এই ঐতিহাসিক আম বাগান দুটিতে খিরসাপাতসহ আরো উৎকৃষ্ট জাতের আমের চাষ হতো।

খিরসাপাত আমের উৎসের ঐতিহাসিক দলিলের প্রসঙ্গ টেনে আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রায় দুইশ বছরের প্রাচিন লোকসংগীত আলকাপ গান। অনন্য বৈশিষ্ট্যর কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলকাপ গান এখন টিকে আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট আলকাপ সরকার (১৯৩৫ থেকে ২০০৪) অসংখ্য গান গেয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলে। আলকাপ গানের বন্দনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের ঐতিহ্যের কথা জানা যায়। বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ারে বৃহত্তর রাজশাহির আমের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমই হলো নওয়াবগঞ্জ জেলার অধিবাসিদের প্রধান অর্থকরী ফসল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের পাল্প দৃঢ় হওয়ায় পরিপক্ব আম বিভিন্ন ডিজাইন করে কেটে খাওয়া যায়। এ জাতের আমের আঁটিতে কোন আঁশ নেই এবং খেতে খুবই সুমিষ্ট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাটি কৃষি পরিবেশিক অঞ্চল ১১ এর উচ্চ গঙ্গা নদী প্লাবন ভূমির অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে বারি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র দাস বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর উৎপাদিত মোট আমের ২২ ভাগ খিরসাপাত আম। বছরে ৩৭ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন খিরসাপাত আম উৎপাদন হয়ে থাকে। খিরসাপাতের জিআই প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে এই আমে আমাদের স্বত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই আমের স্বত্ত্ব আর কেউ পাবেনা। পরে আমরা ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনে ( ডব্লিউআইপিও) খিরসাপাত আমের আন্তর্জতিক জিআই পাওয়ার আবেদন করতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়