সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির গত ৫দিনের শ্রমিক অসন্তোষ ও খনি কর্মকর্তাদের উপর হামলা ঘটনা বহিরাগত স্বার্থেন্বষী মহলের উস্কানিতে ঘটেছে বলে খনি কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ মে) দুপুরে খনির অফিসার্স ক্লাব মনমেলায় অনুষ্ঠিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে খনির নীতি নির্ধারক কর্মকর্তাবৃন্দ এ মতামত দেন।
কর্মকর্তারা বলেন, ১৩ দফা দাবীতে গত ১৩ মে হতে শুরু হওয়া আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী শ্রমিকদের কেউই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লি. ( বিসিএমসিএল) এর নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী নন। তারা সকলেই খনির কয়লা উৎপাদন, পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক।
তাদের দেয়া চাকুরীর বেতন ভাতা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ও চাকুরী শর্ত মেনে নিয়েই তারা খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তাই শ্রমিকদের সাথে খনি কর্মকর্তাদের দ্বন্দ বিরোধ সৃষ্টির কারণ নেই। তাদের যত দাবী সঙ্গত কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছেই হওয়া স্বাভাবিক। তবে খনি শ্রমিকরা এ দেশেরই নাগরিক হওয়ায় তারা যাতে যথোপযুক্ত সুযোগ সুবিধা পান আমরা তাই চাই।
খনির শুরু থেকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে আসছি। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা আদায় করে দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। এরই ফলশ্রুতিতে খনি শ্রমিকদের ১৩ দফার সাথে কথিত ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের ৬ দফা যুক্ত করে চলা আন্দোলনের ৩য় দিন গত ১৫ মে খনি শ্রমিক ও তাদের উস্কানী দাতা বহিরাগতরা কর্মবিরতি ও অবরোধ কর্মসূচির নামে খনি কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৪ জন আহত হন। এ সত্য বিষয়টি তুলে ধরার জন্য খনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহাম্মদ। এতে উপস্থিত ছিলেন, খনির মহা-ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও অন্বেষণ) প্রকৌশলী এবিএম কামরুজ্জামান, মহা-ব্যবস্থাপক ও সচিব (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহা-ব্যবস্থাপক ( ভূ-গর্ভ খনিজ ও অপারেশন) এটিএম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও মহা-ব্যবস্থাপক (খনিজ) সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
হামলার ঘটনার পর থেকে খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে খনির কোল ইয়ার্ডে এখনো প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মে.টন কয়লা মজুদ থাকায় খনি পাশ্ববর্তী কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিটে কয়লা সরবরাহে সংকটের কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও ক্ষতিগ্রস্থ বিশ গ্রাম সম্বনয় কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে খনি শ্রমিক ও এলাকাবাসীসহ ১৩ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এক বিক্ষোভ মিছিল খনির পাশ্ববর্তী শহর প্রদক্ষিণ করে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে খনির আবাসিক গেটের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউর ইসলাম, সাবেক সভাপতি ওয়াজেদ আলী, সাধারন সম্পাদক আবু সুফিয়ান, ক্ষতিগ্রস্থ বিশ গ্রাম সম্বনয় কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তাদের ১৩ দফা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য দেয়া কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবে না।
আপনার মতামত লিখুন :