শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৭ মে, ২০১৮, ১০:০৩ দুপুর
আপডেট : ১৭ মে, ২০১৮, ১০:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দৃষ্টি এবার গাজীপুরে

ডেস্ক রিপোর্ট : খুলনা সিটির পর সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরে। ভোটের বাকি এখনও দেড় মাস। তাই বলে বসে নেই গাজীপুর সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনের বছরে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে রাজনীতির ময়দান এখন সরগরম। আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের পুনর্নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ জুন ভোট হবে গাজীপুরে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, খুলনার ভোটে পুরোপুরি জাতীয় রাজনীতির আমেজ সৃষ্টি হলেও গাজীপুরের পরিস্থিতি ভিন্ন। এই ভোটে স্থানীয় ইস্যুই গুরুত্ব পাবে বেশি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার মনে করেন, ঢাকার পাশের এই শহরে খুলনার ভোটের পুনরাবৃত্তি হলে সরকার ও ইসিকে খেসারত দিতে হবে।

খুলনার ভোটের ফল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ১৫ মের ভোটে কিছু অনিয়ম ও সহিংসতা হলেও তা ফল পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেনি। গতকাল বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ২৮টি সংগঠনের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) বলেছে, কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এসব ঘটনার ব্যাপকতা না থাকায় ফল পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তারা জানিয়েছে, খুলনার ২৮৯টির মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৪৫টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী অনিয়ম দেখেছে তারা।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে খুলনার নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলেও গাজীপুরে তার পুনরাবৃত্তি চায় না অনেকেই। খুলনার ভোটের পর অনুষ্ঠিত ইসির বৈঠকে একাধিক কমিশন সদস্য উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও মাত্রাতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর ইসির পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা

রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক নির্বাচন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও রংপুরে ভালো নির্বাচনের ধারাবাহিকতা খুলনায় ছিল না। এমনকি কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বর্তমান ইসির সদস্যরা। গাজীপুরে আরও ভালো নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা থাকবে বলেও জানান তারা।

ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লার ভোটে দুপুরের পর অনেক কেন্দ্র বেদখল হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থী হেরে যাওয়ায় এবং বিএনপি বিজয়ী হওয়ায় ইসিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। ওই ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দীন মণ্ডল সম্প্রতি খুলনা ও গাজীপুরে ভোট উপলক্ষে ইসি আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলার বৈঠকে এ বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রকিব মণ্ডল বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

ইসি কার্যালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সমকালকে বলেন, খুলনা সিটি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা সন্তুষ্ট। তবে সব সময়ই ভালো করার তাগিদ থেকে সামনে গাজীপুরের ভোট যাতে আরও ভালো হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো সহায়তা করলে গাজীপুরে আরও ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর ও কুমিল্লা সিটির মানের ভোট খুলনায় রক্ষা করা যায়নি। তার মতে, বিএনপির ফল প্রত্যাখ্যানের মতো অবস্থান রাজনৈতিক অর্বাচীনতা। কারণ, চরম বিরূপ পরিস্থিতিতে তারা এক লাখের বেশি ভোট পেয়েছে। এসব ভোটারকে অভিনন্দন জানানো উচিত বিএনপির। তিনি আরও বলেন, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকতে হয়। ইসির একার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এই নির্বাচনে যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল, তা চিহ্নিত করা না হলে গাজীপুরেও এসব সমস্যা দেখা দেবে।

খুলনার ভোট শেষে গাজীপুরের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুলনার ভোটের সঙ্গে গাজীপুরের পার্থক্য রয়েছে। তার মতে, গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক রয়েছে সাড়ে তিন লাখ এবং নতুন ভোটার রয়েছে দেড় লাখ। এই পাঁচ লাখ ভোটারের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ ভোটের ফলে বড় ভূমিকা রাখবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ২৫ বছর ধরে গাজীপুরের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন এমন দাবি করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, তিনি কখনই জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হননি। জাতীয় পার্টির আমলে সরকারের সমর্থনে তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে বরাবরই তার দূরত্ব ছিল।

নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৪১ দিন সময় বেড়ে যাওয়ায় প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। সব প্রার্থীর জন্যই এটা কষ্টদায়ক। ঈদের ছুটিতে গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাবেন। তারা যাতে ভোটের আগে আবার গাজীপুরে ফিরতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঈদের ছুটি এগিয়ে আনতে বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথাও জানান তিনি।

খুলনা নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটিতেও বিএনপির প্রধান অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে একাধিকবার গাজীপুরের পুলিশপ্রধানকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গতকাল সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, সরকার যেহেতু নির্বাচন দিয়েছে, ইসির দায়িত্ব নিয়ম অনুসারে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। ইসি ব্যর্থ হলে, খুলনার পুনরাবৃত্তি গাজীপুরে হলে সরকারকে তার খেসারত দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ফল যা-ই হোক, নির্বাচনে কে জিতল আর কে হারল- তা জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে। হাসান সরকার আরও বলেন, এ নির্বাচনের পরপরই সংসদ নির্বাচন। তাই ফয়সালা খুবই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়