ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের ১৯টি পয়েন্টে ৩৫ কি.মি. অবস্থা বেশ খারাপ। সড়কটির ৮২ কি.মি. জরুরি ভিত্তিতে পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। এজন্য দরকার প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। রাঙ্গামাটি-চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়কে তিন কিলোমিটারের বেশি অংশের পিচ উঠে গেছে। স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিতে এসব অংশে জরুরি ভিত্তিতে ৫০ মিলিমিটার ওভারলে করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পড়বে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ দুই সড়কের মতোই কম-বেশি ভাঙাচোরা দশায় আছে দেশের প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) প্রতিবেদন বলছে, এসব সড়ক স্বাভাবিক করতে কোথাও ওভারলে, কোথাও আবার ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্টের (ডিবিএসটি) প্রয়োজন হবে। পুনর্নির্মাণ, সিলকোট ও পুনর্বাসনও করতে হবে কোনো কোনো সড়কে। এজন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা যাচাইয়ে দুই বছর অন্তর সমীক্ষা পরিচালনা করে এইচডিএম। সড়কের অবস্থার ভিত্তিতে তা মেরামতে অর্থের চাহিদা নিরূপণ করে বিভাগটি। সর্বশেষ বার্ষিক চাহিদা প্রতিবেদন ২০১৮-১৯-এ ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতে আগামী অর্থবছর ১১ হাজার ৯২২ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় সারা দেশে সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৮১২ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৪৬ ও জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। অধিদপ্তরের ১০ জোনের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কে জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এইচডিএম। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর সড়ক সংস্কারে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে রাজশাহী জোনে। জোনটির ২ হাজার ২৮২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করতে হবে। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।
রাজশাহী শহরের তালাইমারী থেকে স্টেশন পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ ভারী যানবাহন চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে এর বিভিন্ন অংশে ভাঙাচোরা রয়েছে। কোথাও কোথাও পিচ উঠে গেছে পুরো সড়কের। ইট-বালি-মাটি ফেলে সড়ক কোনো রকমে যান চলাচলের উপযোগী রাখা হয়েছে। সড়কটির মতোই অবস্থা এ জোনের অন্যান্য সড়কেরও।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম অর্থের প্রয়োজন সিলেট জোনে। এ জোনে সংস্কার করতে হবে ৬১৫ কিলোমিটার সড়ক। এতে অর্থের প্রয়োজন প্রায় ৫৮৩ কোটি টাকা। একইভাবে বরিশাল জোনে সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন ৯৬৬ কোটি টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম জোনে ৮৬৪ কোটি, কুমিল্লায় ১ হাজার ৮৬২, ঢাকায় ১ হাজার ৪৩৯, খুলনায় ৯৫৩, ময়মনসিংহে ১ হাজার ২৪, রংপুরে ১ হাজার ১৭০ ও গোপালগঞ্জ জোনের ৫৬২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ৫৯৩ কোটি টাকার চাহিদা নির্ধারণ করেছে এইচডিএম।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) সফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের সড়কগুলো ভালো অবস্থায় (গুড কন্ডিশন) রাখতে আঞ্চলিক অফিসগুলো প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে পাঠায়। আমরা সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়ার চেষ্টা করি। তবে সারা দেশের সড়কগুলো ভালো অবস্থায় রাখতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তার পুরোটা অনেক সময় দিতে পারি না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দের পরিমাণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনুকূলে বরাদ্দের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
গত নয় বছরে সড়কের দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। একই সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা তৈরি ও সম্প্রসারণে ব্যয়ের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ সত্ত্বেও দেশের সড়ক-মহাসড়কের উল্লেখযোগ্য অংশ ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে।
২০১৬ সালের আগস্টে পরিচালিত এইচডিএমের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোর ৩৭ শতাংশের বেশি ভাঙাচোরা। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ফের জরিপকাজ শুরু করে এইচডিএম। প্রতিবেদনের ফলাফল জানা সম্ভব না হলেও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ তেমনভাবে কমেনি।
বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার জন্য সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, আমাদের দেশে সড়ক নির্মাণের সময় প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় মানা হয় না। সড়ক দ্রুত নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা থেকে সড়ক রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সড়ক নির্মাণে তা মানা হয় না। একইভাবে সড়কের পাশের অবকাঠামোও এর ক্ষতি করে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
সড়ক রক্ষণাবেক্ষণও ঠিকমতো হয় না জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচল, বিভিন্ন কাজে সড়ক ব্যবহারের কারণেও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যা অনেকটা দূর করা সম্ভব হবে। সূত্র: বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :