শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০১৮, ০৮:৫৮ সকাল
আপডেট : ১৫ মে, ২০১৮, ০৮:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগারে বসেই জীবনের অর্থ খুঁজে পান দস্যু আকরাম

ডেস্ক রিপোর্ট : সুন্দরবন, গোলপাতা আর লতাগুল্মের নান্দনিকতা। আছে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কতশত পশু-পাখির কিচির-মিচির। এতসব সৌন্দর্যের লীলাভূমিতেও বাস করে ভয়, আতঙ্ক।

না, বাঘে ধরবে, সাপে কাটবে— এ আতঙ্ক নয়। আতঙ্ক মানুষ নামের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীকে নিয়ে, সুন্দরবনে যাদের নাম দেয়া হয়েছে বনদস্যু। এরা অগ্নিশর্মা চোখে রাত-বিরাতে অবিরত ছুটে চলে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। বারুদ পুড়িয়ে অন্যের স্বপ্ন কাড়ে, বোনে নিজের স্বপ্ন।

এদের কেউ ইচ্ছে করে বনদস্যু। কেউ বাধ্য হয়ে। কেউ বা প্রতিশোধের আগুন নেভাতে গিয়ে অন্ধকার গহ্বরে ডুবে গেছেন। দিন শেষে তাদেরও ভাবনায় আসে— আমি ভালো হব, অন্য সবার মতই সংসারী হব। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখের দিন গড়ব। কিন্তু, দস্যুতা জীবনের একটিই পিছুটান— একবার যে এ পথে পা বাড়ায়, ফিরে যাওয়ার থাকে না উপায়। মরে না হয় মেরে টিকে থাকে।

এতেই কী জীবনের সমাপ্তি! না, দিনশেষে যে সুখ স্মৃতিগুলো সম্পদ, সেখান থেকেই দস্যুরাও ফিরে আসতে চায় স্বাভাবিক জীবনে? হয় তো চায়, হয় তো না!

ভুল পথে সুন্দরবনের এসব স্বপ্ন বুনে চলা দস্যুগুলোর জন্যই আলোকবর্তিকা হয়ে আসেন মোহসীন-উল হাকিম। পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও যিনি গভীরে ভেবেছেন দস্যুদের একান্ত কষ্টগুলো। তাই তো বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভি’র এই বিশেষ প্রতিনিধি এগিয়ে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সুন্দরবনের আতঙ্ক দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

ইতোমধ্যে অনেকে ফিরে এসেছেন। আরও অনেকে আসার প্রক্রিয়ায় আছেন। কিন্তু, তাদের ফেরানোর পথে তাকে কতশত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিতে হয়েছে। গহীন বনে না খেয়ে, না নেয়ে ঘুরতে হয়েছে। এরই মাঝে কোনো দস্যুর জীবনের গল্প শুনে হয়তো কেঁদেছেন, কারোটাতে ক্রোধে জ্বলেছেন। সে সব ক্ষুদ্র হাসি- কান্না, দুঃখ-বেদনা আর জীবন নিয়ে জীবন গড়ার জমিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো মোহসীন-উল হাকিম ‘জীবনে ফেরার গল্প’ শিরোনামে পরিবর্তন ডটকমের পাঠকদের জানিয়েছেন—

গ্রামের বেশ স্বচ্ছল পরিবারের বড় সন্তান আকরাম। বাড়ি কয়রার চাঁদ আলী ব্রিজের কাছে। বাবার ব্যবসা-সম্পত্তি ছাড়াও ছিল নিজের তিনটি ট্রলার, ৪টি নৌকা। আবার মৌসুমে ইট ভাটার সরদারিও করত গ্রামের এই যুবক।

বলছি তিন বছর আগের কথা। অভাব ছিল না। তাই বাউন্ডুলে জীবনে জুটেছিল খারাপ সঙ্গ। এদিকে বাবার ব্যবসায় ধস নামে। ধারদেনা মেটাতে সুদে ঋণ নিয়ে সেই চক্রে সর্বশান্ত হয় পুরো পরিবার। ইট ভাটার মালিকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হারায় সেই ব্যবসাও।

আকরাম এখন কী করবে? সবে বিয়ে করেছে। অন্যদিকে চূড়ান্ত অভাব পুরো পরিবারে। সবচেয়ে কাছের বন্ধু জুয়েল তখন সুন্দরবনে দস্যুতা করছে। সুমন বাহিনীর উপনেতা। বন্ধুর প্রলোভনে আকরাম পা বাড়ায় সুন্দরবনে, দস্যু সুমন বাহিনীতে।

নিজের দেখা বনের হিংস্রতম দস্যু সুমন বাহিনী। আত্মসমর্পণ নিয়ে বাহিনীর সঙ্গে আলাপে গিয়ে পরিচয় আকরামের সঙ্গে। তারপর দলের সঙ্গে অস্ত্র জমা দিয়ে ফিরে আসে স্বাভাবিক জীবনে।

জেলে থাকাকালীন একবারও বাবা তাকে দেখতে আসেনি। তিন মাস জেল খেটে জামিনে বের হয় আকরাম। তারপর সোজা বাড়ি। মুখ ফিরিয়ে রাখা বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজের বাড়িতে ফেরে আকরাম। তারপর বাবার কাছে থেকে দেড়শ’ টাকা নিয়ে চলে আসে খুলনা।

আকরাম এখন রিকশা চালায়। দৈনিক আড়াইশ’ টাকা জমিয়ে তা দিয়ে নিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। খুলনা শহরের রাস্তায় রাস্তায় আকরাম যাত্রী টানে মহাসুখে। সিটি নির্বাচন কাভার করতে এসে দেখা হলো আকরামের সঙ্গে।

দস্যুতা ছেড়ে আসা আকরাম এখন মাসের প্রথম পাঁচ দিন থাকে নিজের বাড়ি। তিন দিন শ্বশুর বাড়ি। এরপর আবার চলে আসে খুলনা শহরে। রিকশা চালিয়ে আয়-রোজগার বেশ ভালো।

বিগত নয় দিন রিকশা চালিয়ে আকরামের দুই হাজার টাকা জমেছিল। সেই টাকা পাঠিয়েছে বাবার কাছে। জীবনে ফিরে এই সামান্য আয় এ জীবনকে আবারও গড়ে তোলার চেষ্টায় আকরাম।

খুলনার শিববাড়িতে সাবেক এই বনদস্যুর রিকশায় চড়লাম। গল্পে গল্পে সে জানাল, জেলখানায় বসে জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছে সে। তাই আর কখনো খারাপ পথে যাওয়ার কথা চিন্তাও করে না আকরাম।

সমাজে ফিরে আকরাম এখন নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি। মাসে তিন দিন ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে দেখা হবে। সেই আনন্দেই খেটে বেড়ায় মাসের বাকি দিনগুলো। আহা... এমন দৃশ্য আমি বারবার দেখতে চাই। চলবে...
সূত্র : প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়