শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১৪ মে, ২০১৮, ০৫:১২ সকাল
আপডেট : ১৪ মে, ২০১৮, ০৫:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জট খুলতেই ব্যস্ত প্রধান বিচারপতি

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন আজ সোমবার। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের টানাপড়েন থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আমলে ঝুলে থাকা জট খুলতেই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এ সময়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারপতি নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে শতাধিক জনবল নিয়োগ ও অধস্তন আদালতের বিচারকদের সহায়ক জনবল-সংক্রান্ত দুই হাজার ৪৬৮টি পদ সৃজনের প্রস্তাব, নতুন ২৬টি পরিবেশ আদালত ও তিনটি নতুন শ্রম আদালত গঠন, সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালসহ দেশের সব আদালতকে ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় আনার বিষয়ে গৃহীত 'ই-জুডিসিয়ারি' প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি। জনপ্রশাসন, অর্থসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জনবল নিয়োগ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্পর্ক থাকায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।

তবে তিন বছর অপেক্ষার পর সম্প্রতি অধস্তন আদালতে ১২৯ জন জেলা জজের পদোন্নতি কার্যকর হয়েছে। দুই বছর অপেক্ষার পর আরও ৬৩ জন যুগ্ম জেলা জজ এবং ৭০ জন সিনিয়র সহকারী জজের পদোন্নতি পরবর্তী পদায়ন প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। পাশাপাশি অধস্তন আদালতে আরও ২০০ সহকারী জজ নিয়োগ এবং বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর এসবই বর্তমান প্রধান বিচারপতির তৎপরতায় আলোর মুখ দেখছে। এতে সার্বিকভাবে নিম্ন আদালতের বিচার প্রশাসনে স্বস্তি ফিরলেও অবকাঠামো ও জনবলের কারণে সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সংশ্নিষ্টরা নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে এখন কর্তৃত্বের টানাপড়েন না থাকার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার পদত্যাগের পর বিচার বিভাগ এখন পর্যন্ত কতটা 'কার্যকর' অবস্থানে রয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে হলে দীর্ঘমেয়াদে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ সময় বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের করা অভিযোগের বিষয়েও প্রধান বিচারপতির দৃঢ় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন, ৬৪ জেলা অধস্তন আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ২০১৫ সাল থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের কর্তৃত্বের টানাপড়েন দৃশ্যমান হয়। এরই জের ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের মুখে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১০ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। পরে ২ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাও। অবশ্য এর আগের দিন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেয় সরকার। বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। চাকরি বিধি অনুসারে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন প্রধান বিচারপতি।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শেষ দুই বছরে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিচারপতি নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের জট তৈরি হয়েছিল। অধিকাংশ প্রস্তাবই তখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে এক পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিভিন্ন সময় সভা ও সেমিনার এবং আদালতে প্রকাশ্যে আইনমন্ত্রী ও সরকারকে দায়ী করে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তবে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার শুনানিতে বিরূপ মন্তব্য এবং ওই মামলার রায়কে ঘিরে গত আগস্টে সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। পরে দুর্নীতি-অনিয়মের ১১টি অভিযোগের মুখে বিদেশে ছুটিতে যাওয়ার দেড় মাস পর পদত্যাগ করেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন যোগদানের পর পরই উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের (আইন, শাসন ও বিচার) মধ্যে সমন্বয় রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। বিশেষ করে বিচারাধীন মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা আদালতে যেন এমন কোনো মন্তব্য না করেন যেটা রায় ঘোষণার আগেই 'মিডিয়া ট্রায়াল' হয়।

জানা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতির আমলে উচ্চ আদালতে বিভিন্ন মামলায় বিচারপতিরা শুনানিতে বিভিন্ন ধরনের কটাক্ষমূলক মন্তব্য করলেও গত ১০০ দিনে তেমনটি ঘটেনি। এ ছাড়া বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের করা অভিযোগের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে 'ভিজিল্যান্স টিম' সক্রিয় করা হয়েছে। তবে দুর্নীতির রাশ টানা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তার বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।

এখনও জট : গত তিন বছর ৮৪ দিনেও উচ্চ আদালতে কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে বিচারপতির সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। যার মধ্যে আপিল বিভাগে চারজন এবং হাইকোর্টে বিভাগে ৮০ জন বিচারপতি কর্মরত। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ১০ জন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। তখন উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা ছিল ১০৫ জন। বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার তিন বছরের দায়িত্ব পালনের সময় সরকারকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে গণমাধ্যমেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও দায়িত্ব গ্রহণের পর আইন প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বর্তমানে বিচারপতি নিয়োগে সুপারিশের তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়েই জট তৈরি হয়েছে। একটি তালিকায় ৩০ জন এবং আরেকটি ১৫ জনের তালিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সুপারিশ অনুসারে অধস্তন আদালতের বিচারক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নাম রয়েছে। তবে সুপারিশের তালিকা থেকে চূড়ান্ত করার মানদণ্ড নিয়ে জটিলতায় নিয়োগের প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এ অবস্থায় আইন প্রণয়ন করেই বিচারপতি নিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য আইন প্রণয়নের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ আইন পাওয়া যাবে। তবে গত কয়েক মাসে একাধিকবার 'শিগগিরই' বিচারপতি নিয়োগের আশ্বাস দিলেও এবার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বিচার বিভাগে আশার আলো : উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জট না খুললেও নিম্ন আদালতে আরও ২০০ বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে সহকারী জজ পদে ১৪৩ জনের স্ব্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিধি অনুসারে প্রার্থীদের তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশি যাচাই-বাছাইয়ের পর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া আরও ৫০ জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য গত ১২ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, নিম্ন আদালতে এক হাজার ৭৩৪টি অনুমোদিত বিচারকের পদ রয়েছে।

এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির তৎপরতায় প্রথমবারের মতো ১১০ জন অতিরিক্ত জেলা জজকে গাড়ি সুবিধা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে খুলনা ও পাবনায় পৃথক বহুতল আদালত ভবনও উদ্বোধন করা হয়েছে।

আইনজ্ঞদের অভিমত : প্রধান বিচারপতির ভূমিকা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতির ভূমিকা ইতিবাচক। কিন্তু রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে তার একার পক্ষে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। এ জন্য সরকারকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিতে হবে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, টানাপড়েন নেই এটিই ইতিবাচক দিক। তবে মামলাজট কিন্তু বাড়ছেই। এ জন্য বিচারপতি নিয়োগ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকরের দিকে তার আরও ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রধান বিচারপতি দীর্ঘ সময় ওই পদে থাকবেন। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয়, মামলাজট নিরসন, বিচারপতি নিয়োগ, বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধসহ এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা উচিত।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির সিনহার আমলে বিচার বিভাগ মহাসংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। তবে এখন সেটা নেই। কারণ বর্তমান প্রধান বিচারপতি শুধু রুটিন মাফিক কাজ করছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকার কখনোই পিছপা হয়নি। সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই বিদেশে বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করেছে। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়