আহমেদ ইসমাম : ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুষিত শহরগুলোর মাঝে একটি। দুষিত হওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে রাস্তার ধুলা। রাস্তার ধুলার কারণে নাজেহাল অবস্থায় আছে নগরবাসী। এই রাস্তার ধুলা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সঠিক ভাবে পানি না ছিটানো ও ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা। সরেজমিনে দেখা যায় ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় পানি দেওয়া হয় না, পানি দেওয়া হলেও তা নামে মাত্র। শহরের ভিতরে যে ভবনগুলো নির্মাণ হচ্ছে তার অধিকাংশই নিয়ম করে কাজ করা হচ্ছে না।
ঢাকার রাস্তায় সবচেয়ে বেশী ধুলা দেখা গেছে বাবু বাজার ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, বছিলা, গাবতলি, গাজীপুর এর মত মহাসড়ক গুলোতে। এ সব জায়গাগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক প্রকৌশলী জানান, আমাদের এখন পনি দেওয়ার জন্য ৯টি গাড়ি আছে, এত বড় শহরের জন্য এটা পর্যাপ্ত নয় আমাদের আরও গাড়ী দরকার। যে গাড়িগুলো আছে এতে খুব একটা উন্নত প্রযুক্তি নাই। এখন যা আছে তা দিয়ে আমরা সারা শহরে পানি ছিটানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। সামনে আমাদের আরও পানি ছিটানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি দরকার যাতে আমরা খুব কম সময়ে বেশী এলাকা পানি ছিটাতে পারি। তবে গলির ভিতরে পানি দেওয়া সম্ভব নয় তাই পুরো শহর কভার করা সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেন, আমরা ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এবং দুপুর দুইটায় আবার পানি দেই। ধুলা নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার কারণ, এখন প্রায় প্রতিটি সড়কেই কাজ চলছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় মাটি পরে আছে। এই মাটি থেকে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে তাই এই কাজ শেষ হওয়ার পর নিয়মিত পনি দিলেই ধুলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর পরিবহন পুল গাবতলিতে গিয়ে দেখা যায়, পানি দেওয়ার গাড়িগুরো আকেজ হয়ে পরে আছে। এর মাঝে কয়েকটি ভাল থাকলেও মেরামতের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তরের একজন প্রকৌশলি বলেন, আমাদের ঢাকা শহরের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে যতই পানি ছিটাই না কেন কোনো লাভ হবে না। রাস্তায় আতি মাত্রায় বালু পরে থাকে এর উপরে পানি দিলেও কয়েক ঘন্টার মাঝে তা শুকিয়ে যায়। কিন্তু পানি দেওয়ার নিয়ম থাকায় তাই মাঝে মাঝে দেওয়া হয় কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
ঢাকার ধুলার পরিমাণ বেশী হওয়ার বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, আমাদের ঢাকা শহরের চারপাশে অনেক অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে এবং একই সময় শহরের ভিতরে চলে দালান নির্মানের কাজ। ঢাকার এত কাছে ইট ভাটা থাকার কারণে বাতাসে ধুলার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং খোলা অবস্থায় দালান নির্মানের কারণে বাতাসে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে যদি নিয়মিত পানি দেওয়া হয়। আমাদের শহরে যে পানি দেয় এটা পুরোটাই নিজ ইচ্ছার উপর। এটা নিয়ে কোনো আইন নাই। যদি আইন থাকত তবে এদের বিরুদ্ধে কিছু একটা করা যেত। আমরা চাইলেই ইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি কংক্রিট এর ব্লক। এটা ব্যবহার করে না কারণ এতে খরচ বেশী পরে। যেখানে একটি ইটের উৎপাদন খরচ হওয়ার কথা ২০ থেকে ২৫ টাকা অথচ ৫ থেকে ৭ টাকার মধ্যে উৎপাদন করছে। এটা কিভাবে সম্ভব? এটা শুধু মাত্র শ্রমিকদের নেজ্য মূল্য না দিয়ে কাজ করালেই সম্ভব।
এ দিকে বিশ্ব সাস্থ সংস্থা বলছে, ৭৯২ টি শহরের মাঝে ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় দুষিত শহরের একটি। এর পিছনে নানা কারণ থাকলেও রাস্তার ধুলাও একটা বড় অবদান রাখছে। ধুলা এখনি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এটা এক সময় মহা মারি আকার ধারণ করেবে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা
আপনার মতামত লিখুন :