শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:১৬ দুপুর
আপডেট : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ওহ! আই সি..

রাশিদ রিয়াজ : এমননিতে বিবৃতি স্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে আগেই। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি’র কথা বলছি। মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য, দেশগুলোর তরুণদের জ্ঞ্যান নির্ভর আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা তো দূরের কথা কোনো অঘটন ঘটে যাওয়ার পর বিবৃতিতে নিন্দা জানানো ছাড়া আর কিছুই করা থাকে না এমন এক সংগঠনে পরিণত হয়েছে ওআইসি। সেই জন্যে অনেকে রসিকতা করে একে বলে ওহ! আই সি। সেই ওআইসি এবার ইরান-মার্কিন দ্বন্দ্বে ওয়াশিংটনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এতে মুসলিম দেশের কোনো উপকার হয়েছে কি না তা সংগঠনটির কর্তাব্যক্তিরা বলতে পারেন। ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমাদ আল আসিমে এক বিবৃতিতে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা নিয়ে বিতর্কে রিয়াদ ও তেলআবিবের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি এই চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার প্রতি সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওআইসি মহাসচিবের এ বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিহিত করে বলেছেন, তিনি এ সংস্থার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করেছেন।

কাসেমি বলেন, আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সঙ্গে সমন্বয় করেই ওআইসি মহাসচিব ট্রাম্পের ইরান বিরোধী নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যা থেকে মুসলিম দেশগুলোর এই সংস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওআইসি মহাসচিবের ইরান বিরোধী অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দখলদার ইসরায়েল ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষে অবস্থান না নেয়ার জন্য ওআইসি'র প্রতি আহ্বান জানান।
কই এই ওআইসি তো রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে মিয়ানমারকে বিন্দু মাত্র বাধ্য করতে পারেনি। কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোট যখন অবরোধ দিয়ে বসে আছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন তা অগ্রহণযোগ্য বলছে তখনো তো ওই অবরোধ নিয়ে গঠনমূলক কোনো সংলাপ বা দিক নির্দেশনামূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাহলে কি সৌদি আরব ও ইসরায়েলের হিজ মাস্টার ভয়েসে পরিণত হয়েছে ওআইসি।সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যখন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের উচিত ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া না হয় নিশ্চুপ থাকা। এমন বক্তব্যেরপরও ওআইসি নিশ্চুপ থেকেছে। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় অনেক প্রভাবশালী অমুসলিম দেশের সমর্থন আছে কিন্তু ওআইসি’র নেই। থাকলে নিশ্চুপ থাকে কি করে ওআইসি। কোনো উদ্যোগ নেয় না কেন ওআইসি।

ইসি এর আগেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য বহুবার সমালোচিত হয়েছে । যখন ইসলামকে জড়িয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা জঙ্গিবাদ প্রচারে পশ্চিমা বিশ্ব অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে তখন তার কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব দিতে পারেনি এই সংস্থা। এই সংস্থার কাজ কি তাহলে? ইসলামফোবিয়ায় সারাবিশ্ব যখন আক্রান্ত তখন মুসলিম দেশগুলোর সাংস্কৃতিক কোনো প্রস্তুতিতে দেখা যায় না এই সংস্থাকে। কিন্তু সৌদি বাদশাহ যখন ইচ্ছা করেন তখন সে সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিতে সংস্থাটি পিছপা হয় না। এভাবে প্রতিনিয়ত ওআইসি তার নিরপেক্ষ মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে। এই সংস্থাকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ওআইসি নিজেই। বিশ্বে অন্য ধর্মীয় সংগঠন, কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলন অনেক সংকটজনক সমস্যায় এক দিক নির্দেশনা দিয়ে মেধাবী ভূমিকা পালন করছে তখন ওআইসি পরিণত হয়েছে এক নিরব ঘাতক হিসেবে। ঘাতক এ জন্যে যে যখন সারাবিশ্ব ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে মেনে নিতে পারেনি, জেরুজালেমকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইসরায়েলি রাজধানী ঘোষণায় প্রতিবাদ জানিয়েছে, চীন, রাশিয়া, ইউরোপ সহ প্রায় সবগুলো দেশ একদিকে যখন অবস্থান নিয়েছে তখন সৌদি আরবের বোকামিপূর্ণ ও বিদ্বেষী নীতি চরিতার্থ করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে ওআইসি। ইসরায়েলের লেজুরবৃত্তি করছে ওআইসি। এবং রিয়াদ ওআইসিকে একটি অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় সংস্থায় পরিণত করেছে। ওআইসি মুসলিম দেশগুলোর সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা না করে বরং রিয়াদের পরামর্শ অনুযায়ী এমনসব কাজ করছে যা কেবল ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করছে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হাসান হানি যাদেহ বলেছেন, দুঃখজনকভাবে ওআইসি সৌদি আরবের পুতুলে পরিণত হয়েছে এবং এই সংস্থা আমেরিকার দ্বারা প্রভাবিত সৌদি আরবের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

সৌদি আরবের অনুমতি ছাড়া ওআইসি কোনো বিবৃতি প্রকাশ করতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন সাতটি মুসলিম দেশকে ‘ব্যান’এর তালিকায় ফেললেন তখন অমুসলিম অনেক প্রতিষ্ঠান এর প্রতিবাদ জানিয়েছে কিন্তু ওআইসি নিশ্চুপ থেকেছে। ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমিকে ইসরায়েলি সেনারা প্রতিবাদ করায় ধরে নিয়ে কারাদণ্ড দিয়েছে, ওআইসি কিছুই বলেনি। একের পর এক মুসলিম দেন যেমন ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়ার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, ওআইসির কোনো ভূমিকা ছিল না, আগামীতেও আশঙ্কা করা হচ্ছে থাকবে না। বসনিয়ায় যখন মুসলিম নিধন হয়েছে তখনো কোনো ভূমিকা নেয়নি নি ওআইসি।এ ধরনের বিবৃতি সর্বস্ব বাদশাহী ইচ্ছার তালিম সংগঠনের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোর কি উপকার হচ্ছে বা হবে তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ অবস্থায় এই সংস্থার বিবৃতিকে মুসলিম বিশ্বের মতামত হিসেবে মনে করার কোনো কারণ নেই। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাবাহ জাঙ্গানেহর মতে, ওআইসি’র কাঠামো ও নীতিমালায় এমনভাবে পরিবর্তন আনা জরুরি যাতে এই সংস্থাটি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু যে দেশের ইচ্ছেতে এ প্রতিষ্ঠানটি চলছে সে দেশে বাকস্বাধীনতা বলে কিছু নেই। তাই সংগঠনটির কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিশ্বের কোনো স্থানে মুসলমানদের ওপর যত খড়গ নেমে আসুক ওআইসি কোনো কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে এমন উদাহরণ বিরল।

ওআইসি'র গঠন কাঠামোয় যতদিন পরিবর্তন আনা যাবে না ততদিন পর্যন্ত সংস্থাটি আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সেবাদাস হয়ে কাজ করবে এবং মুসলিম দেশগুলোর সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবে না। এ অবস্থার আশু পরিবর্তনের কোনো আভাস পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। আর এধরনের পরিবর্তন সৌদি বাদশাহ কখনো চাইবেন না। তার পুত্র সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যতই সংস্কারের পথ ধরুন ভুলেও ওআইসির ভূমিকায় সংস্কারের কথা মুখে আনবেন না। মুসলিম দেশগুলো থেকে কোনো যোগ্য নেতৃত্ব বা আলেম ওলামাকে ওআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না সৌদি শাসকরা। তারা তাদেরকেই এর নেতৃত্বে রাখবেন যারা হিরক রাজার মন্ত্রীদের মত, ঠিক. ঠিক বলে যাবেন। তাই কলের পুতুলের মতই ওআইসি বুঝে বা না বুঝে সৌদি শাসকদের ইচ্ছে মত বিবৃতি দিয়ে যাবে। এবং এধরনের বিবৃতি আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে, ইসরায়েলের পক্ষে যাবে মুসলিম দেশগুলোর কোনো স্বার্থ রক্ষা করবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়