শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০১৮, ০৪:৫৪ সকাল
আপডেট : ১৩ মে, ২০১৮, ০৪:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাক বাজেট আলোচনায় জনপ্রতিনিধিত্বের প্রসঙ্গ

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : এখন চারদিকে প্রাক বাজেট আলোচনার ধুম পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রাক বাজেট আলোচনার গুরুত্ব ও কিভাবে এর তাৎপর্য উৎকর্ষতায় উন্নীত হতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনার অবকাশ বা যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। এটি প্রণিধানযোগ্য যে বাজেট জনজীবনের নিত্যনৈমিত্তিক চলাচলের, আশা আকাঙ্খার, আনন্দ সর্বনাশের সীমা বেধে দেওয়ার দলিল। জনগণের প্রতি সরকারের আয়-ব্যয়ের দায়বদ্ধতার দলিল হিসেবে বাজেটকে প্রকৃতঅর্থে বাজেট মনে করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত বা জনমত সৃষ্টি করে বাজেটের বিধি-বিধান, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, ভ্যাট ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা উচিত।

বাজেটে জনমানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন যদি না ঘটে কিংবা যদি না শোনা হয় তাদের কথা, প্রক্ষেপিত পরিসংখ্যানে শুমারে যদি না থাকে তাদের উপস্থিতি তাহলে সে বাজেট অপরিচিতের অচলায়তনের চাপিয়ে দেয়া দায়সারা সঞ্জননা বৈ কিছুই নয়। আর দশটা উন্নয়নশীল দেশের মতো, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অবগাহনকালে উদীয়মান শিল্পউদ্যোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও শুল্কায়ন আর করারোপের ক্ষেত্রে নানমুখী সমস্যা আর বহুমুখী দাবি দাওয়ার যেন অন্ত নেই। ২০০৭ সালের অক্টোবরে এনবিআর-এ দায়িত্ব গ্রহণের একদিন পরই দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে আমাদের প্রধান শুল্ক ভবন পরিদর্শন ও সেখানকার ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে এবং পরের সপ্তায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে শুভেচ্ছা সাক্ষাতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল সহস্র সমস্যার আবর্তে সবাই, সকলের দাবি দাওয়ার তালিকা দেখে, বিশেষ করে রাজস্ব বোর্ডের প্রধান পুরোহিতকে কাছে পেয়ে অনুযোগ-অভিযোগ পেশের পারঙ্গমতা পর্যবেক্ষণে এটা উপলদ্ধি না করে কোনো উপায় রইল না যে অন্তহীন সমস্যার সাগরে সবাই। একটি দৈনিকে পরদিন শিরোনাম হয়েছিল ‘সমস্যার পাহাড়ের নীচে…’। সমস্যা জনে জনে, পদে পদে, খাতওয়ারি দাবি দাওয়াও গোত্রে গোত্রে ভিন্ন ও মাত্রার।

চল্লিশ পেরুনো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটা এখনো যেন উপলদ্ধির অনিবার্যতার পর্যায়ে আসার অপেক্ষায় যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারিত হলে, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনীতিতে সম্পদ সৃষ্টি হবে এবং অধিক রাজস্ব অর্জিত হবে। সেকারণে পরিবেশ সৃষ্টিতে তথা সমস্যা সমাধানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তরফে যা যা করণীয় সে ব্যাপারে সকল পক্ষের সাথে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। প্রাক বাজেট আলোচনার প্লাটফর্ম সে নিরীখেই নির্মিত ।

বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন প্রয়াস, ব্যবসা বাণিজ্য বিনিয়োগ পরিবেশ পরিস্থিতি, নিঃসন্দেহে, এখনো ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পর্যালোচনায় এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ’তোপখানা’র কেšদ্রীভূত পাবলিক সেক্টরের প্রণোদনা প্রত্যাশা ও নিয়ন্ত্রণ নিগড় থেকে ’মতিঝিলে’ প্রাইভেট সেক্টরের ’ স্বাধীন আশায় পথ চলা’র ক্ষেত্রে প্রকৃত পথ্য ও পাথেয় প্রদানে উভয় পক্ষের মধ্যে মুক্ত আলাপ আলোচনার অবকাশ ফুরিয়ে যায়নি , বরং বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব নীতি প্রণয়ণ প্রয়োগের সাথে শুধু সংশ্লিষ্ট হলেও গোটা অর্থনীতির সবল ও সার্বিক সুস্থতা তার কাম্য। তাই পরিপোষনের বিভিন্ন পর্যায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপলদ্ধির স্তর আরো শানিত এবং এর কার্যক্রমকে ব্যবসা বানিজ্য বিনিয়োগ বান্ধব করণের তাগিদ অনুভূত হয়। সে নিরিখেই রাজস্ব বাজেট তৈরীর প্রাক্কালে সকল স্টেকহোল্ডারের সাথে ব্যাপক আলাপ আলোচনা ও মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করা হয়। শিল্প ও বনিক সমিতিসমূহের এ্যাপেক্স বডি এফ বিসিসিআই এর সাথে বাজেটের আগে কনসালটেটিভ সভা অনুষ্ঠানের যে রেওয়াজ আগে থেকে ছিল সেটার অতিরিক্ত হিসেবে ক্ষৈত্রিক পর্যায়ে সকল আমদানী রফতানিকারক সমিতি, পণ্যওয়ারী উৎপাদক সমিতি, ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প বণিক ও সংগঠন সমিতি, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব অর্থনীতিবিদ শিক্ষাবিদ সকলের সাথে প্রাক বাজেট আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। আগে এ সভা হত সীমিত সময়ে ও গন্ডীতে। একে অর্থবহ ও প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল করতে ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রায় ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রাক বাজেট আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয় এনবিআরে এ। সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মুখ্য শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ্জ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক- অর্থনীতিবিদ এবং এমনকি মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও পন্য বা খাতভিত্তিক এসব আলোচনায় উপস্থিত থেকে নিজেদের আভিমত পেশ করতেন। সেক্টরওয়ারী ব্যবসাবানিজ্য পরিস্থিতি, তাদের দাবি দাওয়া কর ও শুল্ক ও কর প্রস্তাবনা শোনার সুযোগ এনবিআরের কর্মকর্তারা পেতেন। এ সভায় একই খাত বা পণ্যের আমদানী -রপ্তানীকারক, উৎপাদক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং এমনকি বন্ড সুবিধা ভোগকারী এবং উন্মুক্ত আমদানীকারক তাদের পারস্পরিক স্বার্থসংরক্ষানাত্মক দাবি দাওয়া যা শুল্ক সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান আন্তবিরোধাত্মক প্রতীয়মান হলেও তা এক টেবিলে বসে যুক্তিতর্কসহকারে পেশ করার সুযোগ পেতেন । এসব সভা থেকে যে সমস্ত বক্তব্য, প্রস্তাব ও মতামত বেরিয়ে আসে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন ও সারাংশ তৈরি করেন এফবিসিসিআইয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ আবদুল খালেক এবং এনবিআরের কর ও শুল্ক বিভাগের উর্দ্ধৃতন কর্মকর্তারা। এ সমস্ত সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা/অর্থ মন্ত্রীমহোদয়ের নিকট এপ্রিল মাসেই উপস্থাপন করা হত। এপ্রিল মাসের শেষার্ধে কিংবা মে মাসের প্রথম ভাগে এফবিসিসিআইয়ের সাথে অনুষ্ঠেয় কনসালটেটিভ কমিটির সভার আগেই খাতওয়ারী স্টেকহোল্ডারদের বাজেট প্রস্তাবনা কর্তপক্ষের কাছে পৌছানোর ফলে নীতি নির্ধারণে অবস্থানগ্রহনের অবকাশ মিলত যা কনসালটেটিভ কমিটির সভায় উভয়পক্ষের ঐকমত্য সুলভ মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করত। এনবিআরের প্রাক বাজেট আলোচনা মার্চ-এপ্র্রিল নাগাদে পিছিয়ে এলে আলোচনার সুযোগ যেমন সংকুচিত হয়ে পড়ে, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর ও বিবেচনার জন্য সময় অত্যন্ত অপ্রতুল হয়ে দাঁড়ায়। প্রাক-বাজেট আলোচনার সুপারিশসমূহ নীতি নির্ধারক পর্যায়ে যথাময়ে পৌছানো সম্ভব হলে বাজেট প্রণয়ণে সরকার ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ অর্থবহ হতে পারে।

এটা প্রাসঙ্গিক যে, জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর তার ওপর আইন প্রণেতাদের বিস্তারিত আলোচনা পর্যালোচনার বিদ্যমান সময় ও সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হলে বাজেট প্রণয়ণে জনপ্রতিনিধিত্বের এখতিয়ার বৃদ্ধি পেতে পারে। উপস্থাপিত বাজেট স্ব স্ব সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাও প্রবর্তিত হতে পারে। ওয়েস্ট মিনিস্টার সংসদীয় পদ্ধতিতে ( বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথ দেশ সমূহে যা অনুসৃত হয়) সংসদীয় কমিটিতে বাজেট পরীক্ষা পর্যালোচনার ব্যবস্থা আগে না থাকলেও ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা প্রভৃতি দেশে সে সুযোগ প্রবর্তিত হয়েছে।

লেখক : সরকারের সাবেক সচিব এবং এন বি আরের সাবেক চেয়ারম্যান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়