শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০১৮, ০৩:২৪ রাত
আপডেট : ১৩ মে, ২০১৮, ০৩:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতি এমন উন্নয়ন চায় না

ইকতেদার আহমেদ: আমাদের জাতীয় বাজেট বরাদ্দের একটি বড় অংশ উন্নয়নের পিছনে ব্যয় হয়। বাজেটের টাকার প্রধান উৎস জনসাধারণের প্রদত্ত কর। অতীতে উন্নয়ন বাজেট বিদেশী অনুদান নির্ভর ছিল। বর্তমানে উন্নয়ন বাজেটে বিদেশী অনুদানের পরিমান এতই কম যে এটি গুরুত্বহীন। উন্নয়ন বাজেটের অর্থ দিয়ে যেমন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় আবার এ বাজেটের অর্থ এগুলোর আধুনিকায়ন ও সংস্কারের পিছনেও ব্যয় হয়। দেশের বিভিন্ন শহরের অভ্যন্তরস্থ সড়ক ও ভূগর্ভস্থ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের বরাবর বাৎসরিক উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয় এগুলো সংস্থাগুলোর প্রাত্যহিক কাজ।

উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজে যে সকল সামগ্রী ব্যবহার করা হয় এর মধ্যে অন্যতম হলো ইট, বালি, সিমেন্ট, পাথর, রড প্রভৃতি। বালি ও পাথর সরাসরি প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরণ করা হয় অপরদিকে ইট, সিমেন্ট ও রডের নির্মাণ উপকরণ প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরণ পরবর্তী হস্তসাধিত ও যান্ত্রিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয় এটিও প্রাকৃতি উৎস হতে আহরণ পরবর্তী যান্ত্রিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যে কোন ধরণের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের সাথে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। উভয় ধরণের সামগ্রী প্রকৃতি হতে আহরণ করা হয়।

আমাদের দেশে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের একটি বড় অংশ লোপাট হওয়ার কারণে এগুলো খুবই নি¤œমানের হয় এবং বছর না ঘুরতেই এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য পুনঃ অর্থ বরাদ্দের আবশ্যকতা দেখা দেয়। উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের অর্থ লোপাটের সাথে বরাদ্দকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সম্পৃক্ত কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সকলেই জড়িত। সম্প্রতি একটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের অর্থ বরাদ্দের ছাড় পেতে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যে সামগ্রিক বরাদ্দকৃত অর্থের ২০-৩০ভাগ অগ্রিম উৎকোচ হিসেবে প্রদান করতে হয় তা গণমাধ্যম কর্মী ও নগরবাসীর সম্মুখে অবলীলায় প্রকাশ করেন। প্রকাশকালে তিনি আরো ব্যক্ত করেন যে, এ ধরণের অর্থ প্রদানের জন্য তাদের নিজস্ব কোন তহবিল না থাকায় বাধ্য হয়েই তাদেরকে ঠিকাদারের দ্বারস্থ হতে হয় এবং যে ঠিকাদারের নিকট হতে অর্থ নিয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাহিদা মিটানো হয় পরবর্তীতে ঐ ঠিকাদারকে কাজ দেয়া বাধ্যবাধকতার মধ্যে আবদ্ধ বিধায় দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়াটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অঙ্গের অন্যতম বিচার বিভাগের প্রধান সম্প্রতি একটি জেলা শহর ভ্রমণকালে সুধী সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেন যে, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের ৪০ভাগ অর্থ দিয়ে কাজ সমাধা করা হয় এবং বাকী অর্থ লোপাট হয়। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শে উজ্জীবিত সরকারের জনৈক মন্ত্রি কথাচ্ছলে বলেন যে, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ এমপিদের পকেটে ঢুকে। উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প সংশ্লেষে দেশের দুর্নীতির মাত্রা এতো ব্যাপক যে রাষ্ট্রের সবোচ্চ পদধারী রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজ এলাকা সফরকালিন জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকালিন বলেন যে, মন্ত্রণালয়স্থ মন্ত্রিরা দুর্নীতি না করলে অধীনস্থ কর্মকর্তারা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। রাষ্ট্রপতির দুর্নীতি বিষয়ক উক্তিটি দেশের সামগ্রিক দুর্নীতির আলোকে করা হলেও উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের দুর্নীতির বিষয়টি যে এর আওতা বহির্ভূত নয় এ প্রশ্নে কোন সংশয় নেই।

অতি সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রি সচিবদের সাথে মতবিনিময়কালিন তাদের যে ১৩ দফা নির্দেশনা দেন এর প্রথম দফাতে তিনি দুর্নীতির মাত্রা কমানোর ওপর গুরুতারোপ করেন। ১৩দফা নির্দেশনার প্রথম দফায় দুর্নীতির বিষয়টি স্থান পাওয়ায় দেশের সামগ্রিক দুর্নীতির সূচকের মাত্রা নি¤œমুখী না হয়ে যে উর্ধ্বমুখী এ সত্যটি আজ ফুঠে উঠেছে।

সর্বশেষ ঘোষিত বেতন স্কেলে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিদের বেতন ও ভাতার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধির মাত্রা ১২৩ভাগ। এ বৃদ্ধির মাত্রা সার্বিক পরিসরে এতো ব্যাপক যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে এ ধরণের বৃদ্ধি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বেতন বৃদ্ধি পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত অনুরূপ দেশবাসীর মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছিল যে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের কাছ হতে নিঃস্বার্থ সেবা পাবে। কিন্তু বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমানে দেশবাসীকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের নিকট হতে সেবা পেতে আগের তুলনায় আরো অধিক পরিমাণ অর্থ উপরি বা উৎকোচ হিসেবে প্রদান করতে হয়।

আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির জনগণের সেবা প্রদানে সচেষ্ট থাকার আবশ্যকতা রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত অধিকাংশ ব্যক্তি যে সংবিধানের এ নির্দেশনাটি হতে বিচ্যুত সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে এমন খুব কমই লোক আছে যাদের সে অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।

উপরোল্লিখিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য হতে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের অর্থ লোপাটের যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা দেশের জন্য খুবই হতাশাব্যঞ্জক। এ দুর্নীতির চিত্র হতে ধারণা পাওয়া যায় বর্তমানে মন্ত্রি ও মন্ত্রণালয়স্থ কর্মকর্তাদের অধিকাংশের মধ্যে নীতি ও নৈতিকতার কোন বালাই নেই।

দেশে বর্তমানে যে সামগ্রিক দুর্নীতির চিত্র এর বড় অংশই উন্নয়ন ও সংস্কার সংশ্লিষ্ট। উন্নয়ন ও সংস্কারের অর্থের বড় অংশ লোপাট হলে সে উন্নয়ন দেশ ও অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনে। তাছাড়া উন্নয়ন ও সংস্কারের উপকরণ প্রকৃতি হতে আহরিত হওয়ার কারণে এর আহরণ যতবেশী হবে প্রকৃতি ততবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ধরণের ক্ষতির মাত্রা অসহনীয় পর্যায় গেলে তা বিপর্যয় বয়ে আনে। আমাদের উন্নয়ন ও সংস্কারের অর্থ লোপাট এবং প্রকৃতি হতে সম্পদ আহরণ নিয়মনীতির তোয়াক্কা ব্যতিরেকে হওয়ায় সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন ও সংস্কার দেশ ও জনগণের জন্য সুফল বয়ে না এনে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর উন্নয়ন ও সংস্কার সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি রোধ করা না গেলে সে বিপর্যয়ের ভয়াবহতা সমূলে আমাদের সকল অর্জনকে যে গ্রাস করবে অন্তত: এ সত্যটুকু উপলব্ধি করে এ লাগাম টেনে ধরা জরুরি নয় কী?

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়