মাহবুবুল ইসলাম : বড় ধরনের আন্দোলন না হলে কায়েমী স্বার্থবাদীরা কখনো কিছুই করে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভাগ্যেও তাই হয়েছে। যদি আন্দোলন অব্যাহত থাকে, তবে সমাধান হবে। আর আন্দোলন না চললে, এটা এক স্বেচ্ছাচারিতা থেকে আরেক স্বেচ্ছাচারিতায় রুপান্তরিত হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক আমাদের অর্থনীতিকে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ জাতীয় সমস্যার সমাধান কায়েমী স্বার্থবাদীরা চায় না। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই সরকার নানা রকম কারচুপি ও দুর্নীতির সুযোগ নেয়। কোটা সংস্কার নিয়ে গঠিত কমিটি কী ধরণের পদক্ষেপ নেয় তা দেখতে অপেক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় থাকা উচিত। অনির্দিষ্টকাল ধরে কমিটি কাজ করে যাবে, এমনটা উচিত নয়। অন্তত দিন পনের সময়ের মধ্যে কমিটির রেজাল্ট সরকারের কাছে দিয়ে সরকার থেকে স্পষ্ট ঘোষণা আসা উচিত। এর বেশি সময় নেওয়া উচিত নয়। বিসিএস পরীক্ষায়ও বৈষম্য রয়েছে। এগুলো বড় রকমের অন্যায়। আমাদের দেশে দেখা যায়, বড় রকমের অন্যায়গুলোর সমাধান আন্দোলনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমে যে নিয়োগ হয়, এই নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে, প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তা শতভাগ নিশ্চিত করা উচিত। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সংসদে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন, তিনি তো সংসদেই ঘোষণা দিয়েছেন। আর আমলাতান্ত্রিক দিক থেকে সিদ্ধান্ত আসলে কোন সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত হবে না। তারা শুধু পেঁচাতে থাকবে এবং সমস্যা আরও গুরুতর করবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক আরও বলেন, এই আন্দোলনে ছাত্রদের দাবি একান্ত ন্যায়সঙ্গত। আমি প্রথম থেকেই কোটা আন্দোলন সমর্থন করে আসছি। পুলিশ ছাত্রদের সমাবেশে আক্রমণ করেছে, টিয়ারগ্যাস, গরম পানি দিয়েছে এবং বহু ছাত্রদের আহত করেছে। আবার ছাত্ররাও পাল্টা পুলিশের মোকাবিলা করায় ৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এই ঘটনা সম্পূর্ন অনুচিতজ্ঞাত এবং এর জন্য স¤পূর্ণ সরকারই দায়ী। ভিসির বাড়িতে কারা আক্রমণ করেছে তা জানি না। সরকার এ ব্যাপারে কতটা জানে তাও জানি না। ভিসির বাড়িতে হামলা করা খুবই অন্যায় হয়েছে। তবে এটা আন্দেলনকারীরা করেছে বলে আমার মনে হয় না। কোনো অন্তর্ঘাতমুলক শক্তিই এ কাজ করেছে।
তিনি বলেন, যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তাদেরকে অন্য কোন ভাবে সহায়তা করা খুব যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যে প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিচার ব্যবস্থা থাকে এসব ক্ষেত্রে দুর্বলতার সুযোগ থাকা উচিত নয়। সে দিক থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সমর্থন করি এবং অভিনন্দিত করি। কিন্তু যে টালবাহানা আমলাতন্ত্রের ভিতর দিয়ে চলছে, এটা নিন্দনীয়। আমলাতন্ত্রের হাতে যদি এর ক্ষমতা দেওয়া হয়, তবে তারা এটাকে খারাপ থেকে আরও খারাপতরে নিয়ে যাবে। সুতরাং, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই কোটা সংস্কারের সমাধান হবে বলে আশা করি।
আপনার মতামত লিখুন :