শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০১৮, ০৫:৫৫ সকাল
আপডেট : ১২ মে, ২০১৮, ০৫:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিরিয়ায় কেন সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিবেশী সিরিয়ায় ডজনখানেক ইরানি সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড গোলান মালভূমিতে ইরানের হামলার অভিযোগ তুলে এই হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির দাবি, গোলান মালভূমির ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এটাই ছিল ইরানের প্রথম হামলা। এরপর বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সিরিয়ায় ইরানি প্রায় সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয় বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান।

সিরিয়ায় কেন ইরানের সামরিক উপস্থিতি?

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শক্তিশালী মিত্র ইরান। সিরীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আসাদের সমর্থনে প্রথমে যুদ্ধে অংশ নেয় তেহরান। পরে আইএসবিরোধী লড়াইয়েও সিরীয় সরকারকে সহযোগিতা করে দেশটি।

সিরিয়ার বিশৃঙ্খল অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখানে বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে তেহরান। শিয়া মিলিশিয়াদের গড়ে তোলা ও প্রশিক্ষণের কাজে তারা কয়েক হাজার যোদ্ধা ও পরামর্শক পাঠিয়েছে সিরীয় সামরিক ঘাঁটিতে। সিরীয় বিদ্রোহীরা ধীরে ধীরে ভূখণ্ড হারানোর পর তারা আসাদের জন্য হুমকি না হলেও ইরান ও দেশটির মিত্ররা সিরিয়ায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। তারা সেখানে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে বিবেচনায় রেখে। ইরাকে শিয়া মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইরান। লেবাননে শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সহযোগিতা করছে তারা। এতে করে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে।

ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসির গবেষণা বিশ্লেষক আমির তৌমাজ বলেন, সিরিয়া যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ইরান। ১৯৭৯ সাল থেকে ইসরায়েল ও দেশটির মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আদর্শ ও কৌশল গ্রহণ করে তেহরান। এর আগ পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েল মিত্র ছিল। তখন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে দেশটির অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আসাদের সমর্থনে ইরান যখন সিরিয়ায় সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা সেখানে ভারী সরঞ্জাম মোতায়েন করে। ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ড্রোনের মতো সামরিক সরঞ্জাম সিরিয়ায় নিয়ে এসেছে তেহরান।

আমির তৌমাজ বলেন, রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপে আসাদের ক্ষমতা সুরক্ষিত। যদিও এখনও কিছু এলাকায় বিদ্রোহীরা রয়েছে। ফলে এখন ইরান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শক্তি নিয়োগ কমিয়ে ইসরায়েলের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে। দক্ষিণ লেবাননের মতো সিরিয়াকে সুবিধাজনক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা ইরানের লক্ষ্য। এটা প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ উভয় কৌশলের জন্যই সুবিধাজনক। এতে করে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন যুদ্ধের সূচনা হতে পারে।

ইসরায়েল পাল্টা কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট পলিসি’র পরিচালক নাটান স্যাকস জানান, ইরান থেকে হিজবুল্লাহ’র কাছে আধুনিক অস্ত্র পাঠানো ঠেকাতে সিরিয়ায় বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি হামলার কথা খুব কমই স্বীকার করে। সিরীয় সরকার ও হিজবুল্লাহও আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় না। কিন্তু গত বছর আগস্টে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর বিদায়ী কমান্ডার মেজর জেনারেল আমির এশেল স্বীকার করেন, ২০১২ সাল থেকে ইসরায়েল প্রায় ১০০টি হামলা চালিয়েছে। তবে রাশিয়া ও ইরানের মতো সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ভূমিকা রাখতে তারা এই হামলা চালায়নি।
স্যাকস বলেন, এই লড়াই নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আসাদের জন্য কোনও ভালোবাসা নেই। কিন্তু আশঙ্কা করছি, বিশৃঙ্খলা থেকে আসাদের মুক্তি ঘটছে না। আসাদ-ইরান পক্ষের আপাত জয়ের পর ইরান সিরিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে। এটার সঙ্গে লেবাননকেও যুক্ত করছে ইরান। এটা এমন পদক্ষেপ যা ইসরায়েল মেনে নেবে না। সিরিয়ায় ইরানের ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠা নিয়ে ইসরায়েল চিন্তিত। ইরান আরও শক্তিশালী হওয়ার আগেই তা থামাতে চায় ইসরায়েল।

ট্রাম্পের ঘোষণা কি নতুন সংঘাতে ভূমিকা রেখেছে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ২০১৫ সালের বহুদেশীয় পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হয়। চুক্তি স্বাক্ষর ও ট্রাম্প এটি প্রত্যাহারের পক্ষে প্রচারণা চালানোর আগ থেকেই ইসরায়েল এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের ছায়াযুদ্ধ চলছিল। সর্বশেষ তা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রকাশ্য রূপ নেয়।

ইসরায়েলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্টিন এস. ইন্ডিক বলেন, এটা কোনও ছায়াযুদ্ধ নয়, এটা একেবারে সরাসরি যুদ্ধ, যা এটাকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। হয়তো প্রায় ২০ বছর ধরে ইরান-ইসরায়েল শীতল যুদ্ধ করছে। কিন্তু এখন তারা প্রকাশ্যে ও সরাসরি এবং সেনাদের নিয়ে লড়ছে। ইসরায়েলি হামলায় ইরানিদের নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।

সাবেক এই কূটনীতিকের মতে, ট্রাম্পের ঘোষণা সংঘাত শুরুর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেনি। এই সংঘাতের ভিত্তি এই বছরের শুরু থেকে বপন হতে শুরু করে। মিলিশিয়া মিত্রদের গোলান মালভূমির দিকে পাঠানো শুরু করে ইরান। একই সঙ্গে সিরিয়ায় রকেট উৎপাদন শুরু করে তেহরান। লক্ষ্য ছিল হিজুবল্লাহকে আরও নিখুঁত ও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করা। এছাড়া ইরান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করে সিরিয়ায়, যা ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম।
এখন কী ঘটবে?

নাটান স্যাকস মনে করেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত থেমে যাবে না। তিনি বলেন, গোলানে ইরানের হামলা ও সিরিয়ায় ইরানি স্থাপনায় ইসরায়েলের বড় ধরনের পাল্টা হামলা বিচ্ছিন্ন নয়। সিরিয়ায় ইরান ও ইসরায়েলের পরিকল্পিত সংঘাত উন্মোচনের অংশ ছিল এসব হামলা।

স্যাকস বলেন, উভয় পক্ষই একে অন্যের শক্তি পরীক্ষা করছে। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের সীমাবদ্ধতা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। ইরান ভাববে এখন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। সিরিয়ায় নিজেদের লক্ষ্য হাসিল না করে ছাড়বে না দেশটি। কোনও ক্ষেত্রে তারা লেবাননের হিজবুল্লাহকে এই সংঘাতে টেনে নিয়ে আসবে। আর সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতি বন্ধ করার পদক্ষেপ থেকে বিরত হবে না ইসরায়েল।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্টিন এই উত্তেজনাকে ব্রেকহীন গাড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই উত্তেজনার পরিণতি খারাপের দিকেই যাবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, সবচেয়ে খারাপ যা ঘটতে পারে তা হলো এই সংঘাত লেবাননে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট হামলা চালাতে পারে। আর তখন ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালাবে। তিনি বলেন, সিরিয়ার সংঘাত বজায় থাকলে ইসরায়েলের লাভ বেশি। এক্ষেত্রে ইসরায়েল সুবিধা পাবে। ইরান হয়তো অন্য স্থানে নিজেদের অবস্থান জোরদার করতে পারে যেখানে তাদের সুযোগ নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। আর তাতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়