ডেস্ক রিপোর্ট : গার্মেন্ট খাতে বড় কিছু দুর্ঘটনার পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নজরদারি থাকায় এই খাতের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রম অধিকারে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সম্পৃক্ত থাকায় চামড়া, চিংড়িসহ আরো কয়েকটি খাতেও মনোযোগ রয়েছে শ্রম অধিকার রক্ষায়।
তবে এসব খাতের বাইরেও বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো তেমন আলোচনায় আসছে না। দেশে বেশকিছু খাতের শ্রমিকরা সরকার স্বীকৃত মজুরির আওতায় না থাকায় (অপ্রাতিষ্ঠানিক) আইনগতভাবে ক্ষতিপূরণের দাবিও করতে পারছেন না তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্ট শিল্পের বাইরে অন্যান্য খাত বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার কার্যত উপেক্ষিতই। তবে বর্তমানে ৪৩টি খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক খাত। কিন্তু বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের প্রতিনিধিত্বকারী কৃষি খাতই অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে রয়ে গেছে। এর বাইরে নির্মাণ শ্রমিকদের বড় অংশ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দিনমজুর, গৃহশ্রমিক, প্রাইভেট ড্রাইভারসহ আরো অনেক খাত রয়েছে, যেগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হিসেবে পরিচিত।
ওইসব খাতের শ্রমিকরা দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত হলে আইনগতভাবে ক্ষতিপূরণ চাইতেও পারবেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস্) এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বাইরে প্রায় ৬০টি খাত রয়ে গেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে। এদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদ (বিআইডিএস) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের শ্রম শক্তির ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানক খাতের।
ওই গবেষণায় বলা হয়, আত্মকর্মসংস্থান এবং ব্যক্তিনির্ভর ব্যবসার কাজে শ্রম দিচ্ছে বেশির ভাগ শ্রমিক। কৃষি খাত ছাড়াও নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট কাজ, চাতাল, সেলাই কাজ, ওয়েল্ডিং, তাঁত, চিংড়ি-মৎস্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ, প্রিন্টিং, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কর্ম, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, গৃহস্থালি কর্ম, কুলি, দিনমজুরসহ ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং খাত হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক।
এদিকে সরকার দেশের ৪৩টি শ্রম সেক্টরের মধ্যে ৩৮টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল সচিবালয়ে মহান মে দিবস ২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল ওই গবেষণা কর্মটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, গত বছর বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮৪ জন। আহত হয়েছে ৫১৭ জন। নিহতের মধ্যে ৩০৭ জনই পরিবহন খাতের। তার বাইরে নির্মাণ খাতে ১৩১ জন। এছাড়া দিনমজুর ৫৫, কৃষি ৩৪, বৈদ্যুতিক শ্রমিক ২৪, জাহাজ ভাঙা ২১, পাথর উত্তোলন ২১, চাল কল ২০, মৎস্যশ্রমিক ১৭ ও গার্মেন্ট খাতে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিশ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। গত কয়েক দিনেও দেশব্যাপী বজ্রপাতে বেশ কয়েকজন কৃষিশ্রমিক মারা গেছেন।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যেসব কৃষিশ্রমিক বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন, তাদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর ফলে তারা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। এজন্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করছে বলে জানান তিনি।
এমন বাস্তবতায় বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এই দিন। মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এবং শ্রমিকদেও শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখারও দিন এটি। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে বিশাল শ্রমিক জমায়েত ও বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ জন।
এরপরই ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদেও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১ মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ