মাহমুদুল হাসান রতন: নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সালমারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আইয়োব খান (৪০)।
ন্যায্য বিচারের দাবিতে মাতাব্বুরদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে এখন পাগলপ্রায়। আইনের আশ্রয় চেয়েও শান্তিতে থাকতে পারেননি, প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ গ্রামের মাতাব্বুরদের চাপ প্রয়োগে আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন।
২০১৪ সালের ১৬ মার্চ নিজের ক্রয়কৃত জমিতে চারা গাছ রোপন করতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিবেশি আব্দুল মালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসী কায়দায় তার উপর হামলা চালায়। আব্দুল মালেক আইয়োব খানকে বাঁশ দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকলে মুখ, বাম চোখ, ভ্রু ও তার আশেপাশের অংশ মারাত্মক জখম হয়।
পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক আইয়োবকে জরুরি ভিত্তিতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
জীবনে বাঁচলেও চিকিৎসকেরা বাঁচাতে পারেনি আইয়োবের বামপাশের চোখটি।
তারপর থেকেই বিচারের জন্য আইনের আশ্রয়নিয়েও তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি। মাতাব্বুরদের চাপের মুখে আদালতে করা অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন।
সালিশি দরবারে তারা আইয়োবের বাম চোখ অন্ধ হওয়ায় ক্ষতিপূরণ বাবদ আব্দুল মালেককে নাম মাত্র ৪০হাজার টাকা জরিমানা করে এবং ঐ বিরোধপূর্ণ জমিটুকুও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু সলিশি দরবারের পর থেকে আজ পর্যন্ত আব্দুল মালেক আইয়োবকে কোন টাকা দেয়নি, জমিটুকুও ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে আইয়োব মামলা তুলে নিয়ে আইনের আশ্রয় থেকেও বঞ্চিত হন।
তারপর থেকে মাতাব্বরদের সাথে দেখা করলেও তারা বারবার আইয়োবের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন।
একদিকে নিজের চোখ হারানোর যন্ত্রণা অন্যদিকে আইনের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হওয়া, মাতাব্বুরদের কাছ থেকে সহযোগীতা না পেয়ে এখন আইয়োব পাগলপ্রায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
আইয়োবের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৫ বছর থেকে আইয়োব চোখ হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা মাতাব্বরদের কাছে বারবার গিয়েছি বিচারের জন্য কিন্তু তারা আমাদেরকে কোন প্রকার সহযোগিতা করেননি।
প্রথমে আমাদেরকে আদালত থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করেন। তারপর সালিশি দরবারের আয়োজন করে জমি ফেরত দেওয়া ও ৪০হাজার টাকা জরিমানার নাটক সাজায়। এরপর থেকে জমি, টাকা এবং বিচার না পেয়ে বর্তমানে পাগলের মত দিন কাটাচ্ছেন আইয়োব খান।
বর্তমানে পুনরায় আদালতে অভিযোগটি উস্থাপন করা হলে আদালতের নির্দেশে আইয়োবের চোখ হারানোর বিষয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে গেলে দীর্ঘ ৫বছর পর এর সঠিক কাগজপত্র সংগ্রহ না করেই মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করে। এতে আইয়োবের অভিযোগের সঠিক বিচার পেতে যথেষ্ট হবে কি না তাতে রয়েছে পরিবারের সন্দেহ। তাদের দাবী আইনি প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাসী আব্দুল মালেকের বিচার হোক।
আপনার মতামত লিখুন :