মো. আল মামুন খান, ধামরাই: ধামরাইয়ে ট্রাফিক এবং হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদা বাণিজ্য রীতিমতো ছিনতাই-ডাকাতির পর্যায়ে চলে গেছে। দিন-রাতের এ চাঁদা বাণিজ্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে পরিবহন শ্রমিক-মালিক ও দরিদ্র চালকসহ তাদের স্বজন এমনকি নিরীহ-সাধারণ মানুষের কাছেও।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলা নিষিদ্ধ অটোরিকশা থেকে দৈনিক চাঁদা ওঠে লাখ লাখ টাকা। এমনকি মাটি বহনকারী চলাচলের অনুপযোগী কয়েকশত ট্রাক সচল রাখতে নির্দিষ্ট পরিমান মাসিক টাকা অগ্রিম পৌঁছাতে হয় থানায়। ফলে এই ভাঙাচোরা ট্রাক খাত থেকেও প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা ওঠে।
এসব ছাড়াও অবৈধ টার্মিনাল, সড়ক-মহাসড়ক দখল, চোরাই গাড়ি চলাচল, বাস-মিনিবাস-লেগুনা স্ট্যান্ড, দেড় শতাধিক পরিবহন এজেন্সি, শতাধিক কোচ কাউন্টারসহ অন্যান্য খাত থেকে ও মাসোহারা হিসেবে প্রতি মাসে আরও ৪০ লক্ষাধিক টাকা ওঠে।
সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা তোলা হয় কাঠ, বাঁশ, রড ও পোশাক পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিক-আপ ছাড়াও লেগুনা, দূরপাল্লার কোচগুলো থেকে। আর দিনের চাঁদাবাজির শিকার হয় বাস-মিনিবাস, মাইক্রো-প্রাইভেটকার, লেগুনা, অটোরিকশা, এমনকি মালামাল বোঝাই রিকশাভ্যানও।
মাসোহারা টোকেনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি চলে আশুলিয়া দিয়ে চলাচলকারী দুই সহস্রাধিক দূরপাল্লার কোচ, স্থানীয় ট্রাক, লোকাল বাস-মিনিবাস, লেগুনা, সিএনজি ও রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেট-মাইক্রোতেও।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালক জানিয়েছেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানো চালকদের সারা রাত গাড়িসহ আটকে রাখা, চড়-থাপ্পড়-লাথি মারা, মিথ্যা সন্দেহের দোহাই দিয়ে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সব মালামাল নামানোসহ নানা ধরনের মামলার ভয়-ভীতি দেখানো হয়।
সম্প্রতি ঢাকার ধামরাইয়ে কালামপুর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দিন মজুর রিক্সা ও ভ্যান চালকরা।
এপ্রিল ২৫ (বুধবার) সকাল ১১টার দিকে প্রায় সহস্রাধিক রিকসা ও ভ্যান চালক তাদের রিক্সা ও ভ্যান নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ সময় হাইওয়ে পুলিশের হয়রানি থেকে পরিত্রানের জন্য চালকরা তাদের বিভিন্ন দাবী স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এম এ মালেকের নিকট তুলে ধরেন।
রিক্সা চালক বাবুল,সাইজুদ্দিন,জসিম,ওহাব সহ কয়েকজন জানান, ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন কালামপুর বাসষ্ট্যান্ড ও বাজার বাসষ্ট্যান্ডে আমাদের কোন চালক তাদের অটো রিকসা ও ভ্যান দাঁড় করালেই শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানি করা হয় । রিকসাগুলোর ব্যাটারী খুলে নিয়ে যায় ও লাইট ভেঙ্গে ফেলে দেয় হাইওয়ে পুলিশ। আবার রিকসা গুলোকে খাদেও ফেলে দেয়া হয়। প্রতিদিন এমন হয়রানি থেকে প্ররিত্রান পাওয়ার জন্যই এ বিক্ষোভ করেন।
এ সময় স্থানীয় এমপির নিকট চালকরা হয়রানি বন্ধের ব্যাপারে তাদের দাবী তুলে ধরেন। পরে স্থানীয় এমপি এম এ মালেক বলেন, আমরা হাইওয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোমভাগ ইউপি চেয়ারম্যান আজহার আলী, সূতিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি প্রমুখ।
মানিকগঞ্জের গোলড়া হাইওয়ে থানা থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা আরিচা মহাসড়ক একটি ব্যস্ততম সড়ক তিন চাকা চালিত রিকসা, ভ্যান, সিএনজি সহ যে কোন ধরনের গাড়ি হাইওয়ে সড়কে চালানো ও ওঠা নিষেধ। এই তিন চাকা চালিত গাড়ির কারনে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। এর আগেও সব ধরনের তিন চাকা চালিত গাড়ি গুলোকে নিষেধ করার পরও তারা এই মহাসড়ক দিয়ে অটো রিকসা ভ্যান চালাচ্ছে । কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের গাড়ি গুলো আটক করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :