শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০২:৪৪ রাত
আপডেট : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০২:৪৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দিশা গ্রুপ অর্ধশত কোটি টাকা নিয়ে উধাও

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম বাবু। পুরনো গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শোরুমে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দামের একটি গাড়িও পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু এত টাকা তার কাছে নেই জানতে পেরে শোরুম থেকে দিশা গ্রুপ নামের একটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সন্ধান দেয়া হয় তাকে। সাইফুলের ৩ লাখ টাকাসহ আরো অনেকের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা জামানত নিয়ে এখন সেই দিশা গ্রুপই নিরুদ্দেশ।

সাইফুল ইসলাম জানান, কারওয়ান বাজারের এসএস কার নামের পুরনো গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শোরুমে গিয়ে দিশা গ্রুপের সন্ধান পান তিনি। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের অফিসে গিয়ে জানতে পারেন ১০ লাখ টাকা মূল্যের পুরনো গাড়ি কিনতে হলে তাকে দিতে হবে ৫০ ভাগ অর্থ। বাকি ৫০ ভাগ মাসিক ১২ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ দেবে দিশা গ্রুপ। তবে গ্রাহকের ৫০ ভাগের মধ্যে ৩০ ভাগ টাকা দিশা গ্রুপে জমা দিতে হবে। বাকি ২০ ভাগ টাকা গাড়ির শোরুমে ডাউনপেমেন্ট করতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী সাইফুল প্রথমেই ৩ লাখ টাকা জমা দেন দিশা গ্রুপে। আর ২ লাখ টাকা দেন এসএস কার নামের ওই গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে। এই ৫ লাখ টাকা তিনি পরিচিত একজনের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেন, যার মাসিক সুদ ১০ হাজার টাকা। এ টাকা দিশা গ্রুপে জমা দেয়ার পর তাকে বলা হয়, এক মাস পরেই তিনি গাড়ি পেয়ে যাবেন। কিন্তু এক মাস পর ওই শোরুমে গিয়ে জানতে পারেন তার পক্ষে দিশা গ্রুপ কোনো টাকাই দেয়নি। পরে দিশা গ্রুপের অফিসে গিয়ে দেখেন প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও লাপাত্তা।

সাইফুল ইসলাম একা নন, পুরনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে দামের ৫০ শতাংশ ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দিশা গ্রুপ। এ ঘটনায় দারুসসালাম থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশ বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

গতকাল সরেজমিন দারুসসালাম থানাধীন প্রিয়াঙ্গন আবাসিক এলাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান রোডের ১৩৭/৭ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দিশা গ্রুপের অফিসে তালা ঝুলছে। অফিসের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়েছেন কয়েকশ প্রতারিত গ্রাহক। তাদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ, যারা বাড়তি উপার্জনের আশায় একটি গাড়ি কিনে উবার বা পাঠাওতে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কেউ সুদে টাকা এনে দিয়েছেন, কেউ আবার দিয়েছেন শেষ সম্বল ভিটার জমি বিক্রি করে।

দিশা গ্রুপের প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের একজন ইয়ামিন খান। তিনি জানান, একটি টয়োটা হাইয়েস মাইক্রোবাস কেনার জন্য দিশা গ্রুপে ৮ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। আর শোরুমে ডাউনপেমেন্ট দিয়েছিলেন ৭ লাখ টাকা। কথা ছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তাকে গাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শোরুমে গিয়ে জানতে পারেন তার গাড়ি বাবদ দিশা গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো টাকায় দেয়া হয়নি।

মোতালেব নামে আরো এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। পেশায় তিনিও একজন গাড়িচালক। নিজের পুরনো গাড়ি বিক্রি করে ৫ লাখ এবং ঋণ করে আরো ৪ লাখ টাকা মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা তিনি দিশা গ্রুপে জামানত দিয়েছিলেন ভালো একটি গাড়ি কেনার আশায়। আর শোরুমে দিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে শোরুমে গিয়ে জানতে পারেন, দিশা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি। পরে দিশা গ্রুপের অফিসে গিয়ে দেখেন প্রধান ফটকেই তালা। এরপর থেকেই সংজ্ঞা হারিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোতালেব।

গ্রাহকের জামানতের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় গতকাল দিশা গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে দিশা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রেজাউল হক বিশ্বাস, তার ছেলে শাওন বিশ্বাস এবং স্ত্রী বিলকিস বিশ্বাসকে। এছাড়া এ মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস বিশ্বাস, ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েট রুবায়েত লিমন, ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী মণ্ডল, রাজু, পরিতোষ বৈরাগী, শরিফুল রহমান ও সবুজকে। এরা সবাই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দারুসসালাম থানার উপপরিদর্শক মো. রায়হান বলেন, দিশা গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারিত হয়ে ভুক্তভোগীরা একটি মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেনেসাঁ কমার্স অ্যান্ড ট্রেড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৭ সালে মাঝামাঝি সময়ে যাত্রা করে দিশা গ্রুপ। মূলত ব্যবহূত গাড়ির ওপর ঋণ প্রদানের লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। শুরুর দিকে গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে ছয়টি গাড়ি প্রদান করলেও পরবর্তীতে দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে উধাও হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

দিশা গ্রুপের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, দিনা মোটরস ও মামা-ভাগিনা কার ওয়ার্ল্ড নামেও দিশা গ্রুপের আরো একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া দিশা গ্রুপের পক্ষ থেকে গাড়ি কেনা, বাড়ি করা, জমি কেনা থেকে শুরু করে নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রেও ঋণ দেয়া হয় বলে ওয়েবসাইটের তথ্য রয়েছে। তবে ওয়েবসাইটে দেয়া তিনটি ফোন নম্বরের সবগুলোই বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে দিশা গ্রুপের কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সূত্র: বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়