নূর মাজিদ: ২০১৪ সাল থেকেই যখন পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার পুনরায় সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে ঠিক সেই সময় জাপান এক কঠিন ভারসাম্যের খেলায় অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের এই উত্তেজনাকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ অবহিত করছেন নতুন শীতলযুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হিসেবে। অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানকে এবার তাই কোন এক পক্ষ অবলম্বন অবশ্যই করতে হবে। আফগানিস্তানে তালেবানদের রুশ অস্ত্র এবং অর্থ সহযোগিতার অভিযোগের পাশাপাশি সিরিয়া এবং ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া এবং পশ্চিমের সম্পর্কে নতুন যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে তা জাপান খুব সহজেই উত্তরন করতে পারবেনা বলেই ধারণা করছেন তারা। বিশেষত জাপানের সবচাইতে বড় অর্থনৈতিক স্বার্থগুলো যখন পশ্চিমা সভ্যতার দেশগুলোর ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল।
তবে একই সময়ে জাপান তার উত্তর সীমান্তের বৃহৎ মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত জাপান ও রাশিয়া উভয় পক্ষই দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর সীমান্তের অঞ্চলগুলো নিয়ে এক ঐতিহাসিক সীমান্ত দ্বন্দ্বে জড়িত। জাপান ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে এবং রাশিয়ার সঙ্গে যেকোন সামরিক উত্তেজনা জাপানকে ঐ সমস্ত এলাকায় নিজের অধিকার কায়েম করা বিরত রাখতে পারে।
সাম্পতিক সময়ে ব্রিটেনে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার জেরে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে জাপানও কিছু রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থেই জাপান এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। যেমন এর আগে রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিকার করলে জাপানও দেশটির ওপর কিছু সীমিত মাত্রায় বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে একই সময় শিনজো অ্যাবে সরকার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যৌথ ৮টি ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব করেছে যার অধিকাংশই অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার দ্বার উন্মোচনে অ্যাবে সরকার আলাদা মন্ত্রালয়ও গঠন করেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাশিয়ার ওপর আরোপিত ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং কূটনীতিক নিষেধাজ্ঞার আলোকে জাপানের এই ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির এমন ভারসাম্যহীনতা অবশ্যই জাপানকে কোন পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করবে। দ্যা ডিপ্লোম্যাট
আপনার মতামত লিখুন :