আসিফুজ্জামান পৃথিল : ৬৮ বছরের দ্বন্দের অবসানে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিলেন কোরিয় উপদ্বীপের দুই নেতা। দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমে ঐতিহাসিক বৈঠকে কিম জং উন আর মুন জে ইন ঘোষণা দিলেন আর নয় যুদ্ধ। দুই কোরিয়ার দুই নেতা ঘোষণা দিলেন কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তির। সম্মেলন শেষে কিম এবং মুন ‘কোরিয় উপদ্বীপে শান্তি, সমৃদ্ধ এবং একত্রিভূতকরণ সংক্রান্ত পানমুনজাম যৌথ ঘোষণা’য় স্বাক্ষর করেন। সিএনএন
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এই দুই নেতা একে অপরের সাথে করমর্দন এবং আলিঙ্গন করেন। এর আগে সারাদিনব্যাপি দুই কোরিয়ার বৈঠক চলে। এর মধ্যে কিম এবং মুন ৩০ মিনিটব্যাপী একান্ত বৈঠক করেন। আলাদা বক্তব্যে তারা কোরিয়া উপদ্বীপে এক নতুন যুগের ঘোষণা দেন। কিম জং উন বলেন, ‘দুই কোরিয়া একদিন একক দেশ হবে।’ তিন পৃষ্ঠার সমঝোতা স্বারকে কোরিয় উপদ্বীপকে পরমাণু মুক্ত করার প্রয়াসে ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়ার সেনারা দক্ষিণে অভিযান চালালে কোরীয় যুদ্ধের সূচনা হয়। ৩ বছর পর ১৯৫৩ সালে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্রবিরতী স্বাক্ষর হলেও কোন আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়নি। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোরিয় যুদ্ধ এখনও চলমান।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটিতে বলা হয়েছে, ‘ দুই নেতা ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ঘোষণা দিচ্ছেন, আজ থেকে কোরিয় উপদ্বীপে কোন যুদ্ধ নেই। এবং শান্তির এক নতুন যুগের সুচনা হলো।’ এই বৈঠকে আরো বলা হয়েছে কোরিয় যুদ্ধ বন্ধের জন্য দুই কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি বৈঠকে বসবে। সকল প্রতিকূল আইন বাতিল করা হবে এবং সামরিক কর্মকা-মুক্ত অঞ্চল পানমুনজনকে এখন থেকে শান্তি অঞ্চল নামে ডাকা হবে। এই বছরের ১৫ আগষ্ট যুদ্ধে আলাদা হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠিত হবে। সীমান্তের কাছের অংশীদার অর্থনৈতিক অঞ্চল কেসিয়ং-এ একটি সম্মিলিত লিঁয়াজো অফিস স্থাপন করা হবে। সরকারের সকল পর্যায়ে দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা হবে। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে দুই দেশ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলোতে সংযুক্ত দল পাঠাবে।
সম্মেলন চলাকালে কিম এর পাশে পুরোটা সময় উপস্থিত ছিলেন তার বোন এবং ওয়ার্কাস পার্টি অফ কোরিয়ার প্রচার সম্পাদক কিম ইয়ো জং। ৬ সদস্যের উত্তর কোরিয়া প্রতিনিধিদলের একমাত্র নারী সদস্য। সম্মেলন চলাকালে কিম ইয়োকে, কিম জং উনকে ফাইল এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবারহ করতে দেখা গেছে। এমনকি ঘোষণা স্বাক্ষরের পর তাকে কালি শুকাতে সাহায্য করতেও দেখা যায়। এর আগে গেল ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত শীতকালিন অলিম্টিপকে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধী দলকেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৫৩ সালের কোরিয় যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির পর কিম জং উনই প্রথম নেতা যিনি সিমানা পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন। ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে দুই কোরিয়া একীভূতকরণের সম্ভাবনা আরো তীব্র হলো। কবে সরকারী নথিতে দুই কোরিয়া সংযুক্ত করার উদ্যোগ এই প্রথম নয়। ৭০-এর দশক থেকেই দুই কোরিয়ায় একটি করে একত্রীকরণ মন্ত্রনালয় গঠন করেছে। যারা নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিয়ে থাকে।
বেশ হৃদ্যতা ও আন্তরিক পরিবেশে শেষ হয়েছে এই শান্তি সম্মেলন। সম্মেলনের শেষে এই দুই নেতা একত্রে নৈশভোজে অংশ নেন। এই নৈশভোজে দুই কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশিত হয়। এবং খাবার শেষে সুইজারল্যান্ডের মিষ্টান্ন পরিবেশিত হয়। ধারণা করা হয় কিম তার উচ্চশিক্ষা এই দেশেই সম্পন্ন করেছেন। এই সম্মেলনে কিম একবারও নিজ মুখে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধের কথা না বললেও পানমুনজাম ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই দূরপ্রাচ্যে শান্তির বার্তাই দিচ্ছে। হয়ত একদিন বার্লিন প্রাচীরের মতো ৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখার সীমানা দেয়ালও ভেঙে দিয়ে উত্তর দক্ষিণ ভুলে কোরিয়ায়রা নিজেদের শুধুই কোরিয়ান বলে পরিচয় দেবে। সেদিন হয়ত সূদুর নয়।
আপনার মতামত লিখুন :