এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। টানা ২২ দিন ধরে সরকারি এ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নেই। দৈনন্দিন খাবার ও ব্যবহৃত পানির যোগান না থাকায় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুর্ভোগ ও দুর্দশা এখন চরম সীমায় পৌঁছেছে। পৌরসভার পানি সরবরাহ কম ও হাসপাতলের পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় পানির এ সংকট দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৭ সাথে এটি ৫০ শয্যায় রুপান্তর হয়। উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ বন্দর এলাকায় প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ভরসা এক মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুধু এ উপজেলার জন্য নয় পার্শ্ববতী মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলার রোগীরাও আসে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। তীব্র গরম আর আবহাওয়াজনীত কারণে বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী আসছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। আর গড় ভর্তি থাকার সংখ্যাও অর্ধশত। এসব রোগীর সঙ্গে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে এসে বিশুদ্ধ পানির অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়ছেন।
রোগীদের খাওয়া,গোসল,হাতমুখ পরিস্কার এমনকি টয়লেটের পানিও মিলছে না এখানে। এ অবস্থায় হাসপাতালের বাইরে থেকে টাকা দিয়ে সামর্থ অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে নাম মাত্র বিশুদ্ধ খাবার পানিও সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতলের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টার্ফ নার্স দিপ্তি মল্লিক জানান, শুধু রোগীরাই নয়,হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরাও রয়েছেন বিশুদ্ধ পানির এ সংকটের মধ্যে। অপারেশন ও ডায়রিয়াসহ অন্য জটিল রোগিদের চিকিৎসা শেষে হাত মুখ পরিস্কার করার জন্যও তারা পানি পাচ্ছে না। প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে পানির এ ভয়াবহ সংকট চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পানির একমাত্র উৎস নিজেদের পুকুর আর একটি গভীর নলকুপ। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
হাসপাতালে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-ব্যবহৃত পানির অভাবে তারা গোসল, টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না। আর হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের রয়েছে অবহেলা। এখানে আয়া এবং সুইপার পদে ৮ জনের নিয়োগ থাকলেও কাজ করছে মাত্র ৩ জনে। আয়া ছালেহা ও পাপিয়া আক্তার এরা নিজ বাস ভবনে নিজেদের কাজ(এম আর) নিয়ে থাকেন ব্যাস্ত।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, পৌরসভা থেকে পাইপলাইনে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা যতসামান্য। এ পানিতে রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুই ঘণ্টার চাহিদা পূরণ হয় না। অপর দিকে নিজস্ব পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। যে কারনে হাসপাতলে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে চেষ্ঠা চলছে। আগামী বছর নাগাদ এ সংকট পুরোপুরি সমাধান হবে।
আপনার মতামত লিখুন :