শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৪৩ সকাল
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৪৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অগ্রাধিকার কেবল কথায়, আইন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সড়কে যানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুল্যান্সে মাঝেমধ্যে রোগীর মৃত্যুও ঘটে। যানজট থেকে রক্ষা পেতে সড়কের উল্টোপথে অ্যাম্বুল্যান্স চলতে গিয়েও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ যাচ্ছে কিংবা অঙ্গহানি ঘটছে যাত্রী, পথচারী কিংবা চালকের। মহাসড়কে বেপরোয়া বাস ও ট্রাক কখনো কখনো কেড়ে নেয় অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা রোগীর প্রাণ। অথচ বিভিন্ন দেশে সেবা প্রতিষ্ঠানের গাড়ির জন্য বিশেষ করে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আলাদা লেন রয়েছে। জরুরি অবস্থায়, যানজটে সব সময় অগ্রাধিকার পায় অ্যাম্বুল্যান্স। ওই সব দেশে রোগী পরিবহন সেবা সুরক্ষার জন্য আইন থাকলেও বাংলাদেশে এসংক্রান্ত কোনো আইন বা বিধান নেই। এ কারণে অ্যাম্বুল্যান্সে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞসহ বিশিষ্টজনরা। এসব দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে নাগরিক সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধ উন্নয়নেরও তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ইংল্যান্ডে অ্যাম্বুল্যান্স ও পুলিশের গাড়ি চলাচল সুরক্ষার জন্য স্পষ্ট আইন রয়েছে। সেখানে রাস্তায় এই দুই ধরনের গাড়ি চলাচলের জন্য সাইরেন বাজানো হয়। সেখানে আইনে বলা আছে, এ রকম সাইরেন বাজলেই রাস্তায় যেকোনো ধরনের গাড়িই থাক, সে অ্যাম্বুল্যান্স বা পুলিশের গাড়িকে চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে বাধ্য। এ জন্য অন্য গাড়ি প্রয়োজনে থেমে যাবে। যদি প্রধানমন্ত্রীর গাড়িও হয়, তিনিও অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য সুযোগ করে দিতে বাধ্য।’ তিনি বলেন, সেখানে শুধু আইনি সুরক্ষাই নয়, সড়কগুলোতেও অ্যাম্বুল্যান্সসহ অন্যান্য জরুরি পরিবহনের জন্য রয়েছে পৃথক লেন।

জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে অ্যাম্বুল্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ জরুরি পরিবহন মনিটরিং করার জন্য কোনো আইনগত অবকাঠামো নেই। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বা ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুল্যান্সগুলো কিভাবে সুরক্ষা পাবে তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য গাড়ির মতো অ্যাম্বুল্যান্সের ফিটনেস শুধু বিআরটিএতে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু একটি অ্যাম্বুল্যান্স রোগী পরিবহনে উপযুক্ত কি না তা দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি বিভাগ খুলতে পারে, যাতে অ্যাম্বুল্যান্সের মান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।’

আইনজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মতে, রোগী পরিবহন সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে পারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সড়ক বিভাগ। এ জন্য পরিবহন আইনে বা ট্রাফিক আইনে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলের বিধান যোগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া পরিপত্র জারি করে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা যায়। সিটি করপোরেশন আইনেও এ রকম উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। দেশে সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক। অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না ভেবে দেখা উচিত।

১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশের ১০৬(২)(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন, অ্যাম্বুল্যান্স এবং অন্যান্য বিশেষ শ্রেণির গাড়ি চলাচলে অগ্রাধিকারের জন্য শর্তসাপেক্ষে বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারে সরকার।

নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ চীন, থাইল্যান্ডেও আপৎকালীন জরুরি সেবার জন্য হাইওয়ে ও মেট্রোপলিটন সিটির মধ্যে রয়েছে আলাদা লেন। এসব লেন পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি। আইন ভাঙলে জরিমানা পৌঁছে যায় বাসায় কিংবা বাহনের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় স্টিকার বা টিকিট। শাস্তি হিসেবে জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করা হয়। উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা না ভেবে বাংলাদেশে ভাবা হচ্ছে শুধু ভিআইপিদের কথা মাথায় রেখে আলাদা লেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, সবার আগে রাস্তায় যারা চলাচল করে পথচারী, গাড়ির চালক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানবিক হতে হবে। এই মানবিকতা কেউ শেখাবে না। গাড়ির চালক, মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে তাহলে রাস্তায় যানজট লাগবে না। আর অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিবহন ভোগান্তিতে পড়বে না। তিনি বলেন, রাজধানীতে একদিকে রাস্তার পরিমাণ কম। আবার যেটুকু আছে তার অনেকাংশ অবৈধ দখলে। এগুলো উদ্ধার করা গেলে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলে বিশেষ সুযোগ দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনার খবর আসে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমন দুর্ঘটনার কথা তেমনটা শোনা যায় না। কারন বেশির ভাগ দেশের সড়কগুলোতে জরুরি পরিবহনের জন্য পৃথক লেন রয়েছে। আমাদের দেশের সরড়কগুলো একেবারেই বেহাল। রাজধানীর সড়কগুলোর অনেকাংশ অবৈধ দখলে। ফলে রাজধানীতে যানজট লেগেই থাকে। আমাদের দেশে অ্যাম্বুল্যান্সসহ জরুরি পরিবহনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আইন করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কিছু করা হয়নি। এখন ভাবা হচ্ছে ভিআইপিদের জন্য পৃথক লেন করা নিয়ে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পৃথীবির সব দেশে অ্যাস্বুলেন্সকে জরুরি পরিবহন হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে আমাদের দেশেও এটি হচ্ছে। আইনগত ও মানবিক দিক বিবেচনা করেই অ্যাম্বুলেন্সকে রাস্তায় চলাচলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এজন্য দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ ও কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়