দেখতে ঢেউটিনের মতো। পাট বা জুট থেকে তৈরি এর নাম ‘জুটিন’। ধারণাটি শুধু উদ্ভাবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রথমবারের মতো এ ধরনের পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও রপ্তানিতে এগিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ,আরো সাথে রয়েছে একটি সুইডিশ কোম্পানি। এরইমধ্যে এ ধরনের পণ্য নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। আর তাতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে সরকারও। দেখতে প্লাস্টিক পন্য মনে হলেও এগুলো পাটের তৈরী। যা তৈরী হয়েছে পাটের সাথে প্লাস্টিক গ্রানুয়েলস বা পলিমার মিশিয়ে।
দেখতে ঢেউটিনের মতো। পাটের সঙ্গে পলিমারের মিশ্রণ দিয়ে এটি তৈরি। এতে মরিচা ধরে না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় না লবণাক্ত পানিতেও। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিসা নেই এতে। এটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমদ খান। থেকে পাট বা জুট তৈরি বলে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘জুটিন’।
মোবারক আহমদ খান বলেন, জুটিন নির্মাণে কোনো ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে ঢেউটিনের আঘাতে মানুষ ও পশু আঘাতপ্রাপ্ত হয়, সেই দিক বিবেচনায় জুটিন কম বিপজ্জনক। তিনি বলেন, জুটিন তৈরিতে ৩৩-৪০ ভাগ পাট ব্যবহার করা হয়। ঢেউটিনের চেয়ে জুটিন মজবুত, দৃঢ়, তাপ বিকিরণরোধী।
পরমাণু শক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আরেক পরীক্ষার ভিত্তিতে মোবারক আহমদ খান বলেন, জুটিন ৫০ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত টেকসই হবে। তিনি জানান, বাজারে প্রচলিত ঢেউটিনগুলোর প্রতি বর্গফুটের দাম ৪৫ থেকে ৮০ টাকা। একই স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তাসম্পন্ন জুটিন তৈরি করা যায় প্রতি বর্গফুট ৩০-৩৫ টাকায়।
যেভাবে তৈরি হয়: শহর কিংবা গ্রামে বাড়ির আঙিনা বা উঠানে নারী-পুরুষেরা সহজেই জুটিন তৈরি করতে পারবেন। জুটিন বানাতে প্রথমে একটি ঢেউটিনের ওপর পলিথিন বা মোম অথবা তেলের প্রলেপ দিতে হয়। এর ওপর ঢেউটিনের সমান মাপের পাটের চট বিছিয়ে তার ওপর পলিমারের মিশ্রণ লেপে দেওয়া হয়। পলিমারের মিশ্রণের ওপর আরেকটি চট বিছিয়ে তার ওপর আবারও পলিমারের মিশ্রণ লেপে দিতে হয়। পলিমারমিশ্রিত ওই চটটির ওপরে আরেকটি ঢেউটিন চাপ দিয়ে রাখতে হয়। ২০ মিনিট পর ঢেউটিন ও পলিথিন সরিয়ে ফেললে পাওয়া যাবে জুটিন। তবে তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেও এটি করা সম্ভব।
গুণগত মান: পরমাণু শক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পাট তাপ কুপরিবাহী হওয়ায় জুটিন দিয়ে নির্মিত ঘর গ্রীষ্মকালে শীতল থাকে। শীতকালে টিনের সঙ্গে জলীয় বাষ্প তরলীভূত হয়ে জলকণায় রূপ নেয়, কিন্তু জুটিনে তেমনটি হয় না।
দু বছর আগে উদ্ভাবনের পর এধরণের পন্যের উৎপাদন ও ব্যবহারে আগ্রহ বেড়েছে। দেশেই উদ্ভাবিত এসব পন্যের প্রসার ঘটাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ । তারা বলছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা ইউরোপের বাজারে রপ্তানীর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, দেশে পাটজাত নতুন এই পণ্যে বিনিয়োগে সহযাত্রী হচ্ছে সুইডিশ কোম্পানী জুটবর্গ। তারা জানায়, সুইডেনে এ জাতীয় পণ্য পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে পাঁচ বছর ধরে গবেষণা চলছে। যা সফলতার পথে।
যে গবেষক দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছেন, নতুন এই বিনিয়োগকে আশাব্যঞ্জক বলছেন তিনি। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী জানান, দু বছর ধরে পাটজাত গণ্য রপ্তানীকারক দেশীয় কোম্পানীকে ২০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানী আগ্রহী হলে তাদেরও সব ধরণের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সরকার। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী জানান, নতুন এসব পণ্যে বিনিয়োগ ও রপ্তানী বাড়লে দেশের রপ্তানী আয় বাড়বে কয়েক হাজার ডলার। সূত্র: চ্যানেল ২৪, প্রথম আলো