শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৩৮ সকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিচার এগোয়নি পাঁচ বছরেও

আজ ২৪ এপ্রিল, আজ সেই শোকাবহ দিন। পাঁচ বছর আগের এই দিনে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে ঘটেছিল বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে রানা প্লাজা নামের একটি আটতলা ভবন ভেঙে পড়ে ১১শ’র বেশি পোশাক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ওই ঘটনায় হত্যা, ইমারত নির্মাণ আইন এবং ইমারত নির্মাণে দুর্নীতি এ তিন অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। চার্জ গঠন হওয়ার পর প্রথম দুটি মামলায় গত ২ বছরে বিচার একচুলও এগোয়নি। এর আগের তিন বছরে প্রসিকিউশনের সাফল্য শুধু আদালতে চার্জশিট দাখিল ও চার্জ গঠন। আর ইমারত নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় এখন বাদীর সাক্ষ্য চলমান।

এদিকে মামলা তিনটির মোট ৪২ আসামির মধ্যে একমাত্র ভবনটির মালিক সোহেল রানাই এখন কারাগারে। অন্য আসামিদের মধ্যে ৭ জন পলাতক, ৩২ জন জামিনে এবং ২ আসামি মারা গেছেন।
অন্যদিকে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর রানার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সম্পদের হিসাব দাখিল না করার মামলায় তিনি ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট ৩ বছরের কারাদ-ে দ-িত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের একটি এবং শ্রম আদালতে শ্রমিকদের দায়ের করা আরও ১১টি মামলা বিচারাধীন আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের মামলায় সোহেল রানার মা মোসা. মর্জিনা বেগমেরও ৬ বছরের কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আদালত চলতি বছরের ২৯ মার্চ।
হত্যা মামলা
২০১৫ সালের ১ জুন রানা, রানার মা-বাবাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলায় চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। এর পর প্রায় এক বছর ধরে মামলাটির পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য আসে। এর পর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। আসামিদের মধ্যে ৭ জন চার্জগঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে কোয়াশমেন্টের আবেদন করায় হাইকোর্ট মামলাটিতে নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। সম্প্রতি ৬ আসামির স্থগিত আদেশ বাতিল হলেও আসামি কাউন্সিলর মো. আলী খানের স্থগিতাদেশ এখনো বহাল থাকায় আদালত এ পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পারেনি। এ সম্পর্কে পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, একজন আসামির পক্ষে স্থগিত আদেশ এখনো ১২ মে পর্যন্ত রয়েছে। এর মধ্যে যদি বৃদ্ধির কোনো আদেশ না আসে তবে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করবে। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে জামিনে থাকা সিদ্দিক ও আবুল হোসেন নামে দুজন আসামি মারা গেছেন। যার প্রতিবেদনও আমরা পেয়েছি।
ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা ঃ
ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে রানা প্লাজা ভবন নির্মাণ করায় ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ১৩ জনকে আসামি করে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায়ও হত্যা মামলার সঙ্গে ২০১৫ সালের ১ জুন পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির একই কর্মকর্তা। চার্জশিটে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে ১৭ জনই হত্যা মামলার আসামি।
২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
চার্জগঠনের পর আসামিদের মধ্যে ৩ জন চার্জ আদেশ বাতিলের জন্য ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক ৩টি রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ওই রিভিশন মামলার মধ্যে ২টি খারিজ হলেও অপর ১টি রিভিশন মামলা বিচারাধীন থাকায় মামলাটিতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে পারেননি আদালত।
এ সম্পর্কে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, আমরা সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন বিচারাধীন থাকায় আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারছেন না।
ইমারত নির্মাণে দুর্নীতির মামলা ঃ
রানা প্লাজা ভবনে ৬ তলা নির্মাণে অনুমোদন থাকার পরও ৯ তলা ভবন নির্মাণ করে দুর্নীতি করায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দ-বিধির ১০৯ ধারায় সাভার থানায় ২০১৩ সালের ১৫ জুন মামলাটি করে দুদক।
মামলায় রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম দফায় ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। পরে মামলাটিতে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ এম আতোয়ার রহমান ২০১৭ সালের ২১ মে চার্জ গঠন করেন।
এ মামলা প্রসঙ্গে দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। যা চলমান। আশা করি অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করতে পারব।
আসামিরা কে কোথায়
তিন মামলা মিলে মোট আসামি ছিল ৪২। এর মধ্যে ৭ জন এখনো পলাতক। এরা হলেনÑ সাভার পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাভার পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাক্টর, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, রেজাউল ইসলাম, নয়ন মিয়া ও সফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে কারাগারে রয়েছেন ভবনমালিক সোহেল রানা, আবু বকর সিদ্দিক। আর মো. আবুল হাসান মারা গেছেন।
অবশিষ্ট ৩২ আসামি জামিনে আছেন। এরা হলেনÑ প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল ও ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ভবন মালিক সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, সাভার পৌর মেয়র আলহাজ রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইতার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, মো. মধু, অনিল দাস, মো. শাহ আলম ওরফে মিঠু, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কমকর্তা উত্তম কুমার রায়, সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপপ্রধান পরিদর্শক মো. আবদুস সামাদ, উপপ্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক প্রকৌশল মো. ইউসুফ আলী, পরিদর্শক প্রকৌশল মো. মহিদুল ইসলাম, ইতার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো. আবদুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, মো. আবদুল হামিদ, আবদুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ইউসুফ আলী ও মাহবুল আলম।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা নামক ভবনধসে ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়। সে হিসাবে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৬ জন।
অন্যদিকে আহত হয় ১ হাজার ১৭০ জন। মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্তকৃত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে ৭৮ জন। সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়