শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৫৭ সকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এরাই যমদূত, ১৩ লাখ অবৈধ চালকের হাতে স্টিয়ারিং

ডেস্ক রিপোর্ট : একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ে কারও যাচ্ছে হাত, কারও পা থেঁতলে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবারও রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সুমি (৮) নামে এক শিশুর বাঁ হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার ডান হাতও গুরুতর জখম হয়। পরিস্থিতি এমন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের তালিকায় যে কারও নাম যে কোন সময় উঠতে পারে! কারণ পাশেই যমদূত বাস চালক!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী চালকরাই। অর্থাৎ বেপরোয়া বাস চালানোর কারণেই ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো বৈধ ও প্রশিক্ষিত চালক হয়ে থাকলে, কেন এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয়েছে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দফতরে।

সরকারী হিসেবে দেশে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩৪ লাখ ১৯ হাজারের বেশি। ঢাকায় এই সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। এর বিপরীতে দেশে বৈধ চালকের সংখ্যা ২১ লাখ। অর্থাৎ সরকারী হিসেব অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের বিপরীতে চালক সঙ্কট ১৩ লাখের বেশি।

কিন্তু অনুমোদিত যানবাহন চলাচল কি বন্ধ? গবেষণা বলছে, সরকারী হিসেবে ১৩ লাখের বেশি অবৈধ চালক। এর বাইরেও একই গাড়ি একাধিক চালক চালাচ্ছেন। অর্থাৎ দেশজুড়ে সড়ক মহাসড়ক দাবড়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ চালক। তবে অবৈধ চালকের সংখ্যা কত এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান কোন দফতরেই নেই।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, অন্তত ৫০ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে। সারাদেশে চালক রয়েছে এমন সংখ্যা অন্তত ৭০ লাখ! এই হিসেবে প্রায় ৫০ লাখ লাখের কোন নিবন্ধন নেই। এই পরিস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনা খুবই স্বাভাবিক বিষয় বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, অবৈধ চালক সামলাতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। বিআরটিএ বলছে, পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য রোধে নিয়মিত কাজ করছেন তারা। তবে জনবল সঙ্কট রয়েছে।
এ তো গেল সবার বক্তব্য। কিন্তু অবৈধ চালক সামলানোর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা আসলে চলমান সমস্যা সমাধানের পথ কী?

পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সরাসরি চাপের মুখে বিআরটিএ অবৈধ পরিবহন ও চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পুলিশের ক্ষেত্রেও বাস্তবতা একই। বাস মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতা ও পুলিশের একাধিক কর্তাব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আন্দোলনের হুমকি দিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের ভাল কাজ করতে দেয় না। অর্থাৎ গোটা পরিবহন সেক্টর এই দুই সংগঠনের হাতে জিম্মী। সংগঠনের নেতাদের ইশারায় সরকারের কর্মপন্থা নির্ধারণ হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, অনেক আগেই দক্ষ চালক তৈরি ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল। ২০০৭ সালে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশে কাজ করেছে।

এতে প্রস্তাবটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে প্রতি বছর গাড়ি বেড়েছে। এখনও বাড়ছে কিন্তু চালক বাড়েনি। দক্ষ চালক তৈরি হচ্ছে না। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মরছে মানুষ। অনেকে দুর্ঘটনায় সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
একটি লাইসেন্সও বাতিল হয়নি ॥ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, সরাসরি শ্রমিক ইউনিয়নের সুপারিশে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে অনেক চালককে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেয়ারও নজির রয়েছে।

এই সংখ্যা দুই লাখের বেশি। শ্রমিক ফেডারেশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। নানা আলোচনা সমালোচনার পরও একটি লাইসেন্সও বাতিল করা হয়নি। এমন বাস্তবতা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়- অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে বিআরটিএ কতটুকু সোচ্চার হতে পারবে।
তবে পরিবহন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঙ্কট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিআরটিএ ও পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ না হলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি একদিন মাত্রা ছাড়াবে। অবিলম্বে শিক্ষিত বেকারদের চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তারা। সেইসঙ্গে নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

দেশজুড়ে ৭০ লাখ চালক ॥ সমিতির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত ৩৪ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নাম্বারধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যান রাস্তায় চলছে। যার ৭২ শতাংশ ফিটনেস অযোগ্য। অন্যদিকে সারাদেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ’র লাইসেন্স আছে মাত্র ২১ লাখ চালকের হাতে। রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে। ফলে এসব বাসে দুর্ঘটনায় কারও হাত, কারও পা, কারও মাথা, বা কারও জীবন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্য মতে, সারাদেশে জানুয়ারি ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ১৮ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮৪১ জনের প্রাণহানি ৫ হাজার ৪৭৭ জন আহত হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ২৮৮ জন মানুষ।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, এটা সত্য, দক্ষ চালকের অভাব আছে। তাদের মধ্যে মাদক সেবনের হারও বেড়েছে। তাই প্রত্যেক মালিককে মাসে অন্তত দুবার চালকের সঙ্গে বসে আলোচনা করা ও সচেতনতা বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত চালকদের তিন ধরনের লাইসেন্স দেয়া হয়। এ জন্য সারাদেশে বিআরটিএ অনুমোদিত চালক প্রশিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৪২! দেশে রেজিস্টার্ড ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের সংখ্যা মাত্র ৯৮। সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, অনুমোদিত ড্রাইভিং প্রশিক্ষকদের একটা বড় অংশ কোন কাজ করেন না। ট্রেনিং সেন্টারগুলোতেও প্রতিষ্ঠানের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ ইচ্ছেমতো চলছে ট্রেনিং সেন্টারগুলো। এমন বাস্তবতাই পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সেক্টরের প্রয়োজনীয় নজরদারির যথেষ্ট অভাব। এই সুযোগে চালকরা ইচ্ছেমতো বৈধ হয়েই রাস্তায় নামছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে সারাদেশে গাড়ি নামছে চার শতাধিক। এর মধ্যে ঢাকাতেই নামছে ৩১৭। গাড়ির বিপরীতে গড়ে দিনে ১০ চালকও তৈরি হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় নতুন চালক তৈরিতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালক তৈরির ক্ষেত্রে মূল উদ্যোক্তা বেসরকারী খাত। তবে মান নিশ্চিত করতে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে কঠোর ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।

দক্ষ চালক তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা ২১ লাখ। তবে অবৈধ চালক আছে কী না আমাদের জানা নেই। অবৈধভাবে বা লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালালে যারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ধরার কথা। অবৈধ চালকদের হাইওয়ে পুলিশ, মহানগর পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পুলিশের দেখা বা ধরার কথা। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্ঘটনা রোধ বা চালক সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার। দক্ষ চালক তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। সূত্র : জনকন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়