মাসুদ কামাল: সর্বশেষ খবর হচ্ছে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে যে তিনজন মেয়েকে মধ্যরাতে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে আবার হল কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে এনেছে। আর এর আগের খবরগুলো ছিল (ধারাবাহিকভাবে); এক. ছাত্রীকে প্রহারের অপরাধে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছাত্রত্বও বাতিল করেছে। দুই. এশাকে সাধারণ ছাত্রীরা গলায় জুতার মালা পরিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। তিন. এশার কর্মকা- নিয়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার. কমিটির তদন্তে এশা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে, ফলে সংগঠনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাঁচ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে এশার ছাত্রত্ব বাতিল করে বহিষ্কার করেছিল, সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ছয়. এশার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সুফিয়া কামাল হলের ২৪ ছাত্রনেত্রীকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাত. ছাত্রলীগ নেত্রী এশার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সুফিয়া কামাল হল থেকে তিন ছাত্রীকে মধ্যরাতে বের করে দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। আট. তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছাত্ররা। সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেছে তারা। নয়. হল থেকে বের করে দেওয়ার দুদিনের মাথায় তিন ছাত্রীকে আবার হলে ফিরিয়ে এনেছে হল কর্তৃপক্ষ।
এই সবই বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর। আর এসব ঘটেছে এই এপ্রিল মাসেই। এই খবরগুলোর দিকে তাকালে সচেতন মানুষ মাত্রেই মনে হতে পারে তাহলে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে অনুসরণ করছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যক্তিত্ব এবং স্বাতন্ত্র কি তাহলে এতটাই নাজুক হয়ে গেছে? আমরা যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হই তখন ভিসি ছিলেন অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী। কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে পুলিশ প্রবেশের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সেই ব্যক্তিত্ব এখন কোথায় গেল? ফজলুল হালিম চৌধুরীর মেয়ে বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। শোনা যায়, তিনি বেশ ক্ষমতাধরও। তাহলে কি পিতার বৈশিষ্ট্য কিছুই থাকতে নেই সন্তানের মধ্যে?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/ আমাদের অর্থনীতি
আপনার মতামত লিখুন :