নিজস্ব প্রতিবেদক : ইরি-বোরো মৌসুমের শেষ সময় এখন। মাঠে মাঠে সোনালি ফসল দোল খাচ্ছে। কয়েক দিন পরই ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠবে কৃষক পরিবার। প্রতিটি কৃষকের চোখে-মুখে পাকা ফসল ঘরে তোলার হাসি থাকার কথা। এ যেন প্রতিটি কৃষকের আজন্ম এক স্বপ্ন। কিন্তু টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কৃষকের সেই স্বপ্নে আগুন দিয়েছে ব্লাস্ট নামের ছত্রাক।
ব্লাস্টের আক্রমণে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ক্রমেই পুড়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হয়; মাঠের ফসল পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে কৃষকের মাথায় হাত! ধানের পেটে চাল নেই! কৃষকের মুখের ভাষা নেই। শুধুই হাহাকার। সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্রই দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। রোপণের কিছু দিন পরেই কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিসও এলাকায় এলাকায় ব্যাপক প্রচারণাসহ কৃষকদের পরামর্শ দিতে থাকেন। পরে কৃষকের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ফসলগুলো ফের ব্লাস্টের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
কৃষি অফিস আরও জানায়, সাধারণত ব্রি-২৮ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে। আগামীতে কৃষকদের ব্রি-২৯ জাতের বীজ রোপন করার পরামর্শ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে একাধিক কৃষক ও স্থানীয় সার-বিষ, বীজ ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধানের চারা রোপণের কিছুদিন পর সবুজ পাতায় কালো দাগ দেখা দেয় এবং ধানের পাতা পচে যেতে থাকে। ওই সময় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। এতে কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চার দিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোনো চাল নেই। মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় শীষের সবক’টি ধানই চিটে। কৃষি কর্মকর্তারা ফের স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার ছোটমৌশা গ্রামের কৃষক নজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ধানক্ষেতে তিনবার বিষ দিছি (দিয়েছি)। কিন্তু এই হিনজা মরা (শীষ মরা) রোগ ভালো হইলো না। শেষে সব ধান মইরা গেলো।’ উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার দুই একর জমিতে দুই-একটা শীষ মরা দেইখাই ক্ষেতে বিষ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে হাজার হাজার টাকা ভরে সেচ দিয়েছি। টাকাও গেলো, ধানও গেলো। এখন আর কোনো আশা নাই।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সাধারণত স্প্রে করার পর নতুন করে এ রোগ আক্রমণ করার কথা নয়। অনেক সময় কৃষক স্প্রে’র ডোজ না মেনে কম পরিমাণে স্প্রে করেন। যে কারণে হয়তো ছত্রাকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। আমরা উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরও শেষ রক্ষা হবে কিনা জানি না। তিনি কৃষকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :