রাজীবও হয়তো দায়ী, হয়তো তাঁরও দোষ আছে, হাত আর প্রাণ হারানোর জন্য- এমন প্রশ্নও যখন উঠে, তখন আয়নায় নিজ মুখের দিকে তাকাতে আর ইচ্ছে করে না। মনে হয় এটাতো আমারই সমাজ, যেখানে রাজীবেরা প্রাণ হারায়, অদিতিরা লাঞ্ছিত হয়, তরুণেরা আত্মহত্যা করে। এমন সমাজের পিতা হিসাবে, অভিভাবক হিসাবে আয়নার সামনে নিজের মুখোমুখি হই কী করে!
নিজের সন্তানকে যে অভিভাবকেরা নিশ্চিত জীবন দিতে পারে না। যাদের সন্তানদের প্রতিপদে যুঝতে হয় বেকারত্বের সাথে, ভয়ের সাথে, মৃত্যুর সাথে, এমন অভিভাবকের আসলে কী প্রয়োজন- সে হোক পরিবারের, সমাজের কিংবা রাষ্ট্রের। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই এমন প্রশ্নগুলো বুকে বাজে। নিজ সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে সাহস হয় না। মনে হয় ওতো রাজীব, অদিতি কিংবা তরুণ।
রাজীবের কী দোষ? ওর নিজের গাড়ি নেই, উবার ডাকার পয়সা নেই, নিদেনপক্ষে সিএনজি- এ দোষ তো রাজীবের নয়, আমার, আমাদের। আমাদের দোষেই রাজীবকে বাসে ঝুলে উঠতে হয়েছিল। ও উঠেছিল বিকৃত দৌড়ের বিষাদ-বিমূঢ় জকি। ক্ষমতাবানদের জন্য এও এক খেলা, মনোরঞ্জনের প্রতিযোগিতা। যেমন অদিতিকে হতে হয়েছে মিশরের তাহারুশের শিকার, বিকৃতমনাদের খানিক মনোরঞ্জনের পুতুল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তরুণ হোসেনকে দারিদ্র্য মহান করেনি, আত্মঘাতী করেছে।
তরুণদের পড়াশোনাও হয় না, জোটে না চাকরিও। তরুণেরা মেধা নিয়ে হতাশ হয়, ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়। অর্থ নেই, সামর্থ্য নেই, নেই কোন কোটাও। কী দিয়ে ‘স্যার’দের মনোরঞ্জন করবে তারা। পরিচিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সার্টিফিকেটও, তাকে কী! ওই পরিচিতি আর সার্টিফিকেট কী কোন কাজের?
প্রশ্নগুলো আয়নার ব্যানারে ঝুলিয়ে রেখে ক্লান্ত তরুণেরা শ্রান্তিতে যায় অনন্ত ঘুমে। আয়নার মুখোমুখি অবনত আমরা, শোকে-তাপে এক করুণ পাথর। হতবাক জেগে থাকি, অসহায়-ন্যুব্জ-চলৎশক্তিহীন।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :