দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি বারবার আপত্তি জানালেও দুই হাজার ৫৩৫ সেট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে আরও পাঁচ থেকে ১০ হাজার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ‘ক্ষমতাসীন দলের আগ্রহের কারণেই ইসি এ পথে হাঁটছে’ বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান।
ইসি সূত্র জানায়, ইভিএম সংগ্রহের লক্ষ্যে দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি বাংলাদেশ মেশিন অ্যান্ড টুলস ফ্যাক্টরি থেকে ইভিএম ক্রয় করবে।
২০১০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এক হাজার ৮০টি ইভিএম ক্রয় করে ইসি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি এসব ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ও কারিগরি ত্রুটি সারাতে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয় হয়। পরে সেগুলো অকেজো হয়ে গেলে সম্প্রতি তা ধ্বংস বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ইসি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ইভিএম কেনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কেন্দ্রে এসব মেশিন ব্যবহার করতে গেলে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে অধিকাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে মত দেয়। তারা স্থানীয় ও জাতীয়, সব নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে আবারও ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। অথচ এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হয় কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, সংগ্রহ করা ইভিএম স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার হবে। সফল হলে আগামী সংসদ নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যবহৃত হবে। অথচ বিএনপি বারবার বলে আসছে, ‘পরীক্ষামূলকভাবেও ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে তারা’।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকেও ইভিএম ও ডিভিএম (ডিজিটাল ভোটিং মেশিন) ব্যবহার না করতে সুপারিশ করেছি।
বিএনপির আপত্তির বিষয়ে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আইনে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ব্যাপারে যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রত্যেকটি ইভিএম দেখাবে। বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে দেখার জন্য হ্যাক করা যায় কিনা ?’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরনো ইভিএমে ত্রুটি থাকায় ভোটগ্রহণে ছয় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। ভোট নিলেও ভোটের ফলাফল পাওয়া যেত না। ভোটারের পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত করা যেত না। মেশিনের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত।
তবে এবারের কারিগরি কমিটির দাবি, নতুন ইভিএমে ১০ ধরনের সুবিধা সংযোজন করা হবে। সেগুলো হলো- ভোটগ্রহণের আগে মেশিন চালু না হওয়া এবং মেশিন ছিনতাই হলেও অবৈধ ভোটদান থেকে বিরত রাখা সম্ভব, পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত থাকায় অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে মেশিন চালু করতে না পারা, ভোট শুরুর আগে ও পরে শূন্য ভোটিং ও প্রিন্টিংয়ের সুবিধা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল প্রিন্ট, ঘোষণা ও বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে নতুন ইভিএমে।
এছাড়া ভোটারদের বোঝার সুবিধার্থে ব্যালট ইউনিটের ভোট দেয়ার বোতামগুলো বড় আকারের ও ভিন্ন রঙের করা, ভোট শেষ হওয়ার পর ভোটারের সন্তুষ্টির জন্য ধন্যবাদ শব্দ যুক্ত করা, ইভিএমের কাঠামো, টাচ স্ক্রিন, কি-বোর্ড এবং ভোটদানের বোতামগুলোর মান উন্নত করাসহ নানা পরিবর্তন আনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, মহাজোট সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকদের অধিকাংশই ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এজন্য আবার ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। সূত্র: জাগো নিউজ