বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তুলতেই রাসায়নিক হামলার ভিত্তিহীন অজুহাত তোলা হয়েছে এবং সিরিয়ার ওপর তিন পশ্চিমা দেশ মিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সিনেটর র্যান্ড পল এ মত প্রকাশ করেছেন।
ইরাক, লিবিয়ার তেল লুণ্ঠনের পর পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীদের চোখ সিরিয়ার তেলসম্পদের দিকে। অন্যদিকে নিজেদের সীমান্ত সংলগ্ন দেশটিতে আসাদ সরকারের পাশাপাশি এর মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহ বাহিনীকে হুমকি মনে করে ইসরায়েল। রাশিয়া ও ইরানের যৌথ অভিযানে আইএস সন্ত্রাসীরা পরাজিত হওয়ার পর তারা ‘আসাদবিরোধী বিদ্রোহী’ বলে মদদ যুগিয়ে এসেছিল জাইশ আল ইসলাম-সহ বেশ কিছু সালাফিপন্থি সশস্ত্র সংগঠনকে। মিত্রদের সহযোগিতায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে, তখনই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। অবশ্য এর আগে সেদেশের বিমানঘাঁটিতে ইরানি সেনাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
তিন পশ্চিমা দেশের হামলার পর আরব দেশগুলোকে নিয়ে যৌথ বাহিনী গড়ে তুলছে ইরানের ক্রমশ উত্থানে রাজতন্ত্র পতনের শংকায় থাকা সৌদি আরব। এই যৌথ আরব বাহিনী সিরিয়ার মাটিতে লড়াই করবে রাশিয়া-সিরিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে।
সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে র্যান্ড পল বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনও প্রমাণ নেই, যা দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় দুমা শহরে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে বাশার আল আসাদের সরকার। সিরিয়ার ওপর সামরিক আগ্রাসন চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
রাসায়নিক হামলার জন্য সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও আসাদের মিত্র রাশিয়াকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকার ও রাশিয়া এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা বিদ্রোহীরাই এ হামলা চালিয়েছে। হামলার পর শ্বাসকষ্টে কাতরাতে কাতরাতে মারা যায় ৮০ জনের বেশি লোক।
রাসায়নিক হামলার ব্যাপারে র্যান্ড পল বলেন, আমি এখনও রাসায়নিক হামলার বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছি এবং বলতে চাই, হয় আসাদ বিশ্বের নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক, না হয় তিনি এ হামলাই করেননি। তিনি যে এ হামলা করেছেন, আমাকে তার প্রমাণ খুঁজে দেখতে হবে।
কেনটাকির এ সিনেটর বলেন, দুই বছর ধরে সিরিয়ার সেনারা উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাফল্য পেয়ে আসছে এবং সেখানে তারা বিজয়ের পথে রয়েছে। ফলে সিরিয়ার সরকারের রাসায়নিক হামলা করার কথা নয়। তিনি বলেন, রাসায়নিক হামলার কথা বলা হয়েছে শুধু এ কারণে, যাতে আসাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তোলা যায় এবং দেশটির ওপর সামরিক হামলা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় সাধারণ বোমা দিয়ে যত লোক হত্যা করা হচ্ছে, রাসায়নিক হামলার মাধ্যমে তার চেয়ে কম মানুষ মারা যাচ্ছে। তাহলে কোন যুক্তিতে প্রেসিডেন্ট আসাদ রাসায়নিক হামলা করবে- সেটাই বড় প্রশ্ন।
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাশার আল জাফারি জানিয়েছেন, বুধবার আন্তর্জাতিক তদন্ত দল দুমা শহরে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যখন ঠিক করেই ফেলেছে যে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জন্য কে দোষী এবং আমাদের আহ্বানে তদন্তের আগেই যেহেতু তারা দোষীকে শাস্তি দিয়েছে, তখন রাসায়নিক হামলার জন্য নতুন করে দোষীকে আর খোঁজার কোনও যুক্তি নেই। সূত্র: প্রেস টিভি
আপনার মতামত লিখুন :