শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এখনো ভয়ে তারা, অসহায়ত্ব দেখবে কে?

রবিন আকরাম : রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত পোশাক শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক কাজ করতে পারছেন না। শারীরিক অক্ষমতা ছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত আতঙ্কের কারণে তাঁদের এই অবস্থা হয়েছে। কোনো ধরনের কাজ করতে গেলেই তাঁরা ভীত হয়ে পড়েন।

দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এইড রানা প্লাজা ধসে আহত দুইশ' শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৪৮ ভাগ কোনো কাজ করতে পারেন না। শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তাঁদের এ অবস্থা হয়েছে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে প্রতিবছর অ্যাকশন এইড এই জরিপ চালিয়ে আসছে৷ এবারের জরিপে দেখা যায়, জীবিত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনো কোনো কাজ করতে পারছেন না। আর দুর্ঘটনার আগে রানা প্লাজার পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাত্র ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এখন পর্যন্ত পোশাক কারাখানার কাজে ফিরে যেতে পেরেছেন।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, আমরা গত তিন বছর ধরে রানা প্লাজার শ্রমিকদের নিয়ে একটিপ্রকল্পের আওতায় কাজ করি। এবছরই প্রকল্পটি শেষ হয়েছে৷ আমরা প্রতিবছরই গবেষণা করেছি৷ এবছর সাক্ষাৎকারভিত্তিক গবেষণায় যে চিত্র উঠে এসেছে প্রায় ৫০ ভাগের সবাই-ই যে কাজ করতে অক্ষম, তা নয়। তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। এর মূল কারণ হলো তাঁদের মধ্যে এখনো সেই ভয় কাজ করে। বিল্ডিংয়ের ভিতরে গেলে মনে হয় সেটা ভেঙে পড়বে। তাঁদের ট্রমাটা অনেক বিশাল। এটা বোঝাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার তাঁরা অন্য কোনো কাজও পায়নি।

তিনি বলেন, আমরা তাঁদের তিন বছর ধরে সাইকো সোশ্যাল কেয়ার, ফিজিও থেরাপি, নতুন কাজের ট্রেনিং দেয়ার কাজ করেছি। গত জুলাইতে আমাদের সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। এর কিছু সুফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু তাঁদের তো এই চিকিৎসা ও সেবা অব্যাহতভাবে এখনো প্রয়োজন। তাই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাদেরকে হেলথ কার্ড দিতে হবে৷ তাঁরা যে এলাকায় থাকেন, সেই এলাকায় যাতে সহজেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার কমবেশি সহায়তা করেছে৷ আর আইন অনুযায়ী মালিকরা আহত শ্রমিকদের এক লাখ টাকা করে দিয়েছে৷ সরকার সেটা আইন পরিবর্তন করে বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। আর কোনো বিশেষ উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি।

ফারাহ কবির বলেন, সরকার তো করবেই৷ কিন্তু প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মালিকপক্ষ এবং ব্র্যান্ডের। তারা তো শ্রমিকদের এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজে নিয়োগ করেছে। তাঁদের ইন্সুরেন্সও করা হয়নি৷ তাই দায়িত্ব নিতে হবে মালিকপক্ষ এবং ব্যান্ডকে (ক্রেতা)।

এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন বলেন, এই শ্রমিকরা এখন শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তাঁদের ভীতি এখনো কাটেনি। ১১০ জন শ্রমিক পুরোপুরি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন। আরো সাতশ'র মতো আছেন গুরুতর আহতের তালিকায়। তাঁদের জন্য ধারাবাহিক একটা স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমরা যাঁদের নিয়ে কাজ করেছি, আমাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর ধারাবাহিক কোনো স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নেই। কেউ কেউ আবার থাকতেও পারেন। কিন্তু এটাতো হলো রিকারিং ইনজুরি। একটা থেকে আরেকটা আসে। তাই তাঁরা সুস্থ হতে অনেক সময় নেবেন। তাঁদের ট্রমা থেকে বের করে আনতে আরো কাউন্সেলিং দরকার। সেটার কোনো ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, তাদেরতো কাজে যুক্ত করতে হবে। ট্রমার কারণে হয়তো পোশাক কারখানার কাজে যেতে পারবেন না। আবার তাঁদের সে সুযোগ অবারিত না-ও হতে পারে। তাই তাঁদের নতুন স্কিল ডেভেলপমেন্ট দরকার। আবার কোনো একটা কাজে স্কিল ডেভেলেপ করে দেয়ার পর তাঁরা সে কাজে সফল না-ও হতে পারে। তখন তাঁদের জন্য আবার ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সবার ওপরে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১,১৫৩ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২,৪৩৮ জনকে। মোট পাঁচটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। ডয়চে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়