লিহান লিমা: ইন্টারনেট প্রাচীন ভারতের আবিষ্কার এমন দাবি করে ঠাট্টা ও তোপের মুখে পড়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তিনি বলেন, খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগেই প্রাচীন ভারতে ইন্টারনেট আবিষ্কার করা হয়েছিল!
মঙ্গলবার জনসম্মুখে এক সম্মেলনে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমার কথার সত্যতা হিন্দুদের পুরাণ মহাভারতে রয়েছে। বিপ্লব জানান, ‘কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় দুর্যোধনের বাবা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের দ্বারা তাৎক্ষণিক যুদ্ধের যে তথ্য সংগ্রহ করতেন তা একটি বড় প্রমাণ।এটি ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের জন্যই সম্ভব হয়েছে। ’ বুধবার ত্রিপুরার গর্ভনর তথাগত রায় বিপ্লব দেবের মন্তব্যকে সমর্থন জানান। তিনি এই বিষয়ে বলেন, ‘সঞ্জয় দিব্যদৃষ্টি নয়, নিজের ইন্টারনেট অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করতেন।’
ইতোমধ্যেই টুইটারে ‘ত্রিপুরা সিএম বিপ্লব দাস’ ট্রেন্ডটি ভাইরাল হয়েছে। অনেক ভারতীয়েরও ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি। সমালোচকরা বলছেন, এই একটি ভয়ঙ্কর রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুটগার বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অদ্রি ট্রুসেকি মজা করে বলেন, ‘কৃষ্ণের তখন ফেসবুক লাইভে আসা উচিত ছিল।’
তবে আধুনিক প্রযুক্তিকে নিজেদের আবিষ্কার বলে দাবি করার তালিকায় বিপ্লব দাসই প্রথম নন। এর আগে বর্তমান বিজেপি সরকারের অনেক এমপি এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক অর্জনকে কয়েক শতাব্দী আগের ভারতীয় আবিষ্কার বলে দাবি করেছেন।
২০১৪ সালে মোদি মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে ডাক্তার এবং মেডিকেল কর্মকর্তাদের এক সম্মেলনে বলেছিলেন, কসমেটিকস সার্জারি প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার আবিষ্কার। উদাহরণ হিসেবে তিনি দেবী দুর্গার ছেলে গণেশের শরীরে হাতির মাথা প্রতিস্থাপনের কথা বলেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, ‘গরু এই পৃথিবীর হৃদয়, কারণ সে অক্সিজেন উৎপন্ন করে।’
কয়েকমাস আগে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে উপ-শিক্ষামন্ত্রী সত্যপাল সিং ‘অ্যারেপ্লেন’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব পৌরাণিক যুগের দাবি করে সবার ভ্রু কুঁচকে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অ্যারোপ্লেনের ধারণা সর্বপ্রথম হিন্দু পুরাণ রামায়ণে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক কথায় চালর্স ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নাকচ করে বলেন, এটি বৈজ্ঞানিক ভুল। স্কুলের বইপত্র পরিবর্তন করা প্রয়োজন। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানুষ মানুষই ছিল।’
অর্থনীতিবিদ রুপা সুব্রুমণ্য বলেন, বিজেপি সদস্যদের বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। বর্তমান সমস্যা সমাধানের বদলে তারা অতীতের কল্পকাহিনী গুলোকে আরো রোমাঞ্চকর করে তুলতে ব্যস্ত।
ভারতের কিছু মানুষ দাবী করেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ৫০০০ বছর আগে সংগঠিত হয়েছিল। যদিও খ্যাতিমান ইতহাসবীদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয় এর সাবেক উপাচার্য রমেশ চন্দ্র সেন এই ধারণাকে বহু আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার দাবী মতে এই যুদ্ধের বয়স সর্বোচ্চ ২৫০০ বছর। এক্ষত্রে সিন্ধু সভ্যতাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। কারণ আর্য সভ্যতার আগমনের ফলেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সিন্ধু সভ্যতা। যার বয়সই ৪০০০ বছরের বেশী নয়। বিবিসি।
আপনার মতামত লিখুন :