শিরোনাম
◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:১৫ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নদী-খাল মারা গেলে আমরা বাঁচব কীভাবে?

ড. সা’দত হুসাইন : বহুল প্রচারিত অনেক পত্রিকা দেশের নদী-খালের করুণ চিত্র তুলে ধরে খবর ও ফিচার প্রকাশ করছে। এসব খবর/ফিচার বিবেকবান মানুষের চিন্তা-ভাবনা অনুভূতিকে ভয়ানকভাবে নাড়া দিয়েছে। নিজেদের  অজ্ঞতা, ঔদাসীন্য এবং স্বার্থান্ধতায় গ্রাম-শহর জনপদকে আমরা কীভাবে বিপর্যস্ত করেছি তা চিন্তা করলে শরমে মরে যাবার অবস্থা হয়। এখন আমাদের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। নদীতে পানি নাই, যে নদী খালে বড় বড় নৌকা চলত সেখানে এখন গরুর গাড়ি চলে। স্থানে স্থানে চাষাবাদ হচ্ছে। ধান, গম, সবজি গাছে পুরো জায়গা ভরে গেছে। কোথাও শুধু ধূলি-বালু। দেখলে বুঝা যায় মরুকরুণ শুরু হয়েছে।

নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। আলাদা করে এটি ব্যাখা করার প্রয়োজন নাই। নদীপথই ছিল এ দেশের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের প্রধান উপায়। মাছে-ভাতে বাঙালির মৎস্য সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল নদী-নালা, খাল-বিল ও হাওর বাঁত্তর। ভূমির উর্বরতা ধরে রাখতে নদীর অস্তিত্ব অপরিহার্য। পানীয় জল, গোসল করা এবং সাঁতার কাটার জন্য শহর গ্রামের লোক অবাধে নদীকে ব্যবহার  করত। এক কথায় নদী আমাদের প্রাণ।

আজ সে প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রাকৃতিক কারণে অনেক নদী খাল বিপদের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ সাগর মোহনায় অবস্থিত একটি বদ্বীপ। এদেশের অর্ধ শতাধিক (এক হিসাবে ৫৪) নদীর উৎপত্তি স্থল দেশের বাইরে, উজান এলাকায়। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে নদী গুলি বাংলাদেশে  ঢুকেছে। এঁকেবেঁকে চলে অবশেষে তারা সাগর-উপসাগরে পড়েছে। তাদের চলার পথে বিধৌত হয়েছে বাংলাদেশ। উর্বর হয়েছে বাংলার শ্যামল প্রান্তর। এখন অনেক নদীর উজানে নানারকম বাঁধ দিয়ে, ব্যারেজ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে, ভাটি এলাকায় নদীর স্বাভাবিক চলা আজ বাধাগ্রস্ত।  গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীতে পানি  আসছে না, নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। উর্বর ভূমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় চর পড়েছে। নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। ধূলি-বালিতে নদীর পাড় ভরে যাচ্ছে। এক কথায় নদী মরে যাচ্ছে, একইসঙ্গে মরে যাচ্ছে খাল। কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে মরুকরণ প্রক্রিয়া।

এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে দখল-অপদখলের পালা। ক্ষমতাবানরা অনেকটা বিনা বাধায় এ কাজটি করে চলেছে অনেক বছর ধরে, দুর্নীতিবাজ কর্মকতা-কর্মচারীদের সহায়তায়। নানা রকমের নির্মাণ কাজ চালিয়ে নদী-খালের গতিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এ দেশে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাবান হওয়ার একটি বড় প্রকাশ হচ্ছে নদী-খাল, বিল মাঠ-ঘাট, সড়ক গলিপথ, জোর-দখল করা। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে। সমাজপতিরা নির্বিকার  থাকে, নাগরিক সমাজ ঝামেলায় যেতে চায় না, কোর্ট-কাচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব কেস আমলে নিতে চায় না। আমাদের অবহেলা-উদাসীনতায় আমাদের চোখের সামনে নদী খাল মরে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বনাশের সর্বগ্রাসী দৈত্য হা করে এগিয়ে আসছে। আমরা চুপ করে বসে আছি।

আমাদের গণমাধ্যম এ ব্যাপারে  এগিয়ে এসেছে। বহুল প্রচারিত অনেকগুলো দৈনিক দেশের প্রায় সব জেলার নদী-খালের করুণ অবস্থা তুলে ধরে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কয়েকটি পত্রিকা বৎসরাধিক কাল ধরে মাঝে মাঝে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এখন তারা সমস্বরে এই বিষয়ের ওপরে জোরেসোরে লিখছে। এ মহৎ প্রচেষ্টার জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাতে হয়।

আমাদের কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ এসব প্রতিবেদনকে আমলে নেয়নি। তারা একে গতানুগতিক সংবাদ হিসেবে দেখে আসছে। কত খবরই তো প্রকাশিত হয়, তাতে কার কি আসে যায়। এসব সংবাদকে গুরুত্ব দিলে ঝামেলা বাড়ে, কাজ বাড়ে। অতএব, চুপ থাকাই বু্িদ্ধমানের কাজ।

এভাবে চলতে পারেনা। এখন আমাদের জনপদ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। আমরাও আস্তে আস্তে বাঁচা-মরার দ্বার প্রান্তে উপনীত হচ্ছি। মরুকরণ প্রক্রিয়া, নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া, পানির অভাবে আমাদের পরিবেশ ও জীবন আক্রান্ত হয়েছে। পানির অভাব ও পরিবেশ দূষণে এক সময় জনপদ বিরান হয়ে যাবে। অপদখল করা নদী-নালা, খাল-বিল থেকে ক্ষমতাবান অপদখলকারীরা আর কিছু পাবে না। বিরান ভূমিতে তাদের স্থাপনা দাঁড়িয়ে থাকবে। এখনই একে অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে অপদখল বন্ধ করতে হবে। নদী-খাল পুনঃখনন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়