শিরোনাম
◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী ◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ১৩  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০৯ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুজিবনগর শুধু একটি নাম নয়

ড. এম এ মান্নান : মুজিবনগর শুধু একটি নাম নয়। এটি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এদেশবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক। এখান থেকেই বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু। রক্তক্ষয়ী নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ এই মুজিবনগরের নামেই পরিচালিত হয়। সকল মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে গ্রোথিত হয়ে যায়  এ নামটি। অন্য দেশের সমর্থন পেতেও প্রয়োজন ছিল একটি রাষ্ট্রের রাজধানীর। আর মুজিবনগর হয়ে উঠল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী। বহু বছর অবহেলিত থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবগাহিত রাজনৈতিক দলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ২০০৯ থেকে মুজিবনগরের বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অনেকগুলো প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে। সবগুলো বাস্তবায়িত হলে মুজিবনগর হয়ে উঠবে একাত্তরের স্মৃতিজড়িত ভাস্কর্যম-িত বাংলাদেশ।
দশনার্থীরা দেখতে পাবেন স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র, প্রায় তিরিশ একর জমির উপর বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র, মুজিবনগর সরকারের ছয় ’অশ্বারোহী’, সাতটি স্তম্ভের তৈরি বঙ্গবন্ধু তোরণ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানরত আনসার বাহিনী,  ছয়দফা ভিত্তিক গোলাপ বাগানের অপরূপ দৃশ্য, বহু ভাস্কর্য ও মুরালের বাগান যেখানে উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের নানা রকম ঘটনা-পাক বাহিনীর গণহত্যা, নারী নির্যাতন, নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শরণার্থীর ঢল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আঙ্গুল উঁচিয়ে তেজস্বী ভঙ্গিতে সাতই মার্চের ভাষণ, আনসার দলের গার্ড অব অনার প্রদান, সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক আর রেসকোর্স ময়দানে নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য। দেয়ালের কারুকাজের মধ্যে দেখতে পাবে নিপীড়িত বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ছবি। সোজা কথায়, মুজিবনগরে খুঁজে পাওয়া যাবে একাত্তরের বাংলাদেশকে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন পাক বাহিনীর নৃশংসতার শিকার বাঙালিদের মনোবলকে আকাশচুম্বি করে তুলেছিল। শাণিত হয়েছিল তাদের অঙ্গীকার। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বদৌলতে সারা দেশের মানুষসহ সারা পৃথিবীর জনগণ বাংলাদেশে সামরিক জান্তার অকল্পনীয় নৃশংসতার কাহিনী মুজিবনগরের  ডেটলাইনেই জানতে পেরেছে। মুজিবনগর সরকার গঠনের কারণে বিশ্বজনমত যেমন যুদ্ধমান বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে, তেমনি দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাও জীবন বাজি রেখে দেশ মুক্ত করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল তাদের নৈতিক সাহস। বিশ্বের নিকট এ মেসেজ চলে গিয়েছিল যে বাঙালিরা দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করছে, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বা সহিংসতা করছে  না।

সে সময়কার সংকটপূর্ণ সময়ে এমন মেসেজ খুবই প্রয়োজন ছিল। কারণ পাক সরকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আর মুজিবনগর সরকারকে ভারতের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যাপক প্রচারে নেমেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের মতোই মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত হওয়ায় বিশ্ববাসীর আস্থাও জন্মেছিল। পাকিস্তানের প্রচারণা ধোপে টিকেনি। তাই মুজিবনগর দিবস অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। রাজীব আহমেদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর : দলিল ও ইতিহাস’ নামক গবেষণা-পুস্তকে যথার্থই বলেছেন: ‘বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ধাত্রীপনার মহান দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর হয়ে ওঠে বাঙালি জাতির তীর্থভূমি।

বাঙালি জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর এই আয়োজন মুজিবনগর থেকেই। আর খ- ক্ষুদ্র বিদ্রোহ নয়, আর নয় ৬-দফা, ১১-দফা, আর নয় স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসন; সোজাসুজি স্বাধীনতা অভিমুখে যাত্রা শুরু। তারপর আর ফিরে তাকায়নি এ জাতি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে হাজারো মা-বোনের অশ্রুজলে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। আর অস্থায়ী রাজধানী নয়; বিজয়ী সরকার বীরের বেশে বাংলাদেশের স্থায়ী রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়