শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৫৮ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নৈরাজ্যের শেষ কোথায় পরিবহনের?

আবু হোসাইন শুভ : রাজধানীর গণপরিবহনে নজিরবিহীন নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে। নগরীর পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। ভাড়া আদায়ে স্বেচ্ছাচারিতা, সিটিং, গেটলক, স্পেশাল সার্ভিসের নামে প্রতারণা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন গাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে গণপরিবহন এখন যাত্রীদুর্ভোগের নিত্য বাহন হয়ে উঠেছে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থের সিন্ডিকেটের কারণে পদে পদে লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীতে ছোট গাড়ির বিস্তার, সিটি সার্ভিসে ট্রাফিক নৈরাজ্য, চালকদের আইন না মানার প্রবণতা, অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে বাসের রেসসহ বিভিন্ন কারণেই রাজধানীর গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। উপরন্তু যানবাহনের তুলনায় নগরীতে রাস্তার পরিমাণও কম, মাত্র ৮৮ কিলোমিটার। এর মধ্যেই চলছে রিকশা ও হিউম্যান হলার বাদেই প্রায় সাড়ে ৫ লাখ যানবাহন। বিদ্যমান রাস্তারও এক-তৃতীয়াংশ বেদখল হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যান চলাচলের জন্য কোনো শহরের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা উচিত। রাজধানীতে সড়ক রয়েছে আয়তনের প্রায় ৮ শতাংশ। ফলে যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। তার পরও প্রতিদিন নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে ৬০টির বেশি। অন্যদিকে দিনে দেড় শর বেশি মোটরবাইক নামছে রাজপথে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজধানীর গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করা যাবে না।

এদিকে নগর পরিবহনে সিটিং, ডাইরেক্ট, গেটলক ও স্পেশাল সার্ভিসের নামে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। মোটরযান আইন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া সবকিছু উপেক্ষা করে যথেচ্ছ হয়রানিতে লিপ্ত পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ফলে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে মালিকদের নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া। সেটাও কিলোমিটার হিসাবে নয়, পরিবহন মালিকদের ইচ্ছামতো চাপিয়ে দেওয়া। অল্প দূরত্বের যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে পুরো পথের ভাড়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অল্প দূরত্বের যাত্রীদের বাসেও তোলা হচ্ছে না।

সকালে মিরপুর-পল্লবী থেকে যেসব বাস ছেড়ে আসে তার প্রায় সবই “সিটিং”, “গেটলক” হিসেবে দরজা বন্ধ করে মাঝপথের হাজার হাজার যাত্রীর সামনে দিয়ে গন্তব্যের দিকে চলে যায়। আমরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার যাত্রীরা এ সময় বাসে উঠতে পারেন না। এজন্য তাদের সকাল ৯টার অফিস ধরতে ৭টার আগেই রাস্তায় নামতে হয়।

ভাড়া ডাইরেক্ট, সার্ভিস লোকাল : রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মালিক সমিতি সিটিং, ডাইরেক্ট, লোকাল সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ইত্যাদি বাহারি নামে যাত্রীপীড়নের সব পন্থা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। অনেক বাসে একটাই ভাড়া, যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন। ভাড়া ডাইরেক্ট হলেও যাত্রী কম পেলে তারা যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকাল বাসের মতোই যাত্রী তুলতে দ্বিধা করে না। টঙ্গী-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সুপ্রভাত পরিবহন একসময় ছিল এই রুটের সবচেয়ে খারাপ বাস সার্ভিস। এটি এখন ‘সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিস’ নাম দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।

লোকাল বাসের খোঁজ নেই : যানবাহন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর কার্যকর তদারকির অভাবে বর্তমানে মিরপুর-মতিঝিল বা মিরপুর-গুলিস্তান রোডে কোনো লোকাল বাস নেই। সব সার্ভিসই ডাইরেক্ট, সিটিং। কিন্তু অফ পিকআওয়ারে এসব বাস চলে লোকালের মতো, ভাড়া দিতে হয় ডাইরেক্ট বাসের। একই অবস্থা মিরপুর থেকে নগরীর অন্য রুটগুলোয় চলাচলকারী বাস সার্ভিসের ক্ষেত্রেও। মিরপুর থেকে চলাচলকারী চয়েজ, সিল্কসিটি, বিকল্প, বিহঙ্গ, শিখর, ইটিসি, ইউনাইটেড, দিশারী, নিউভিশন, সুপার সিটিং, শিকড়সহ বিভিন্ন কোম্পানির মিনিবাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে। এ ছাড়া বিমানবন্দর সড়কে চলাচলকারী গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী, আজমেরী, সুপ্রভাত স্পেশালসহ আরও কয়েকটি পরিবহন একই কায়দায় সিটিংয়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ শোনার কেউ নেই : অনিয়ম দূর করা দায়িত্ব যাদের, তাদের নাকের ডগায় এভাবে অনিয়ম ঘটছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএতে যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাই নেই। তারা মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও পুলিশি সহযোগিতার অভাবে তা কার্যকর হয় না। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে বেপরোয়া। পুলিশও প্রায় সব ক্ষেত্রেই নির্বিকার থাকে। যাত্রী তুলতে এবং আগে যেতে পরস্পরের সঙ্গে বাসের রেষারেষিতে প্রায়ই জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝেই দুই বাসের মাঝে পড়ে পথচারীর মৃত্যু ঘটছে সড়কে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে দুই বাসের মাঝে পড়ে বাঁ হাত হারিয়েছেন রাজীব হোসেন (২২) নামে এক যুবক।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নগর পরিবহনের নৈরাজ্য রোধে যাত্রীদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটিতে (মেট্রো আরটিসি) যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। পরিবহন মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নগর পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মহাসড়কে লেন যত বাড়ানো হবে কিংবা সড়ক যত বাড়বে গাড়ির সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে। ঢাকায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গাড়ি নামছে। এসব ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজধানীর ভোগান্তি কমানো যাবে না। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে চালকদের ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়