শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৩২ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে গৃহকর্মী নির্যাতনকারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট : গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এমন বীভৎসতার শিকার এই শিশুরাঅভাব-অনটনের তাড়নায় অন্যের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে ঠাঁই হয় অনেক নারী ও শিশুর। সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে দিনরাত খাটলেও অনেক সময়ই ঠিকমতো খেতে-পরতে না পারার সঙ্গে জুটছে নির্যাতনের শিকার হওয়ার নির্মম অভিজ্ঞতা।

মুখ বুঝে এসব নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করার কারণে অনেক ঘটনাই থেকে যায় ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই। আবার কেউ কেউ এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে আইনের আশ্রয় নিলেও প্রভাবশালীদের প্রভাবের কাছে হার মানতে হয় অধিকাংশকেই। অর্থের কাছে ঠুনকো হয়ে পড়ে গৃহকর্মীদের অশ্রুজল। নির্মম নির্যাতন করেও পার পেয়ে যান গৃহকর্তা-কর্ত্রীরা।

নির্যাতনের শিকার এক গৃহকর্মীসামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত অসংখ্য গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর দেখা যায়। যাদের বেশিরভাগই শিশু। মারধর, ধর্ষণ থেকে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। এসবের বেশিরভাগেরই যথাযথ সুরাহা হয় না। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও নির্যাতনকারী গৃহকর্তা-কর্ত্রীরা অপরাধের সাজা থেকে বাঁচতে অনেক সময় টাকা দিয়ে জোর করে আপস রফা করে নেন। অপরাধীদের প্রভাবে টিকতে না পেরে আদালতে গিয়ে অভিযোগ পরিবর্তন করে ফেলেন হতদরিদ্র গৃহকর্মী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা।

নির্মম শিকার এক শিশু গৃহকর্মীগৃহকর্মী হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটছে। পুলিশের করা প্রতিবেদনে শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও হত্যার ধরণ উল্লেখ থাকে। কিন্তু মেডিক্যাল রিপোর্টে প্রায়ই তা হয়ে যায় আত্মহত্যা। এক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রতিবেদন যাচাই করেও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শুধু আইন দিয়ে নয়, সমাজের সব পর্যায়ে জনসচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তন না হলে গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। গৃহকর্মীকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে দেখতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন–এটি মানুষের মন-মানসিকতার ব্যাপার। যারা ভালো মানুষ, তারা কখনও গৃহকর্মীদের নির্যাতন করবে না। মানুষের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার অভাব রয়েছে, আর মানুষ তা শিখতেও চায় না।’ তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে সব জায়গাতেই মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের খুব অভাব। যদি মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা যায়, তবেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।’

২০১৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছরের শিশু গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতন করে পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান ও তার মা ইসরাত জাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণ হলে ঘটনার চার বছর পর ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই নওরীন জাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। নওরীন কারাগারে রয়েছেন।

দেশব্যাপী আলোচিত গৃহকর্মী নির্যাতনের এই ঘটনায় গৃহকর্ত্রীর বিচার হয়েছে। এছাড়া আর কোনও ঘটনার বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫ সালে গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে (১১) মারাত্মকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আদালত মাহফুজা নির্যাতনের মামলায় ক্রিকেটার রাজীব ও জেসমিন জাহানকে বেকসুর খালাস দেন। এ দম্পতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্নভাবে ২৮৬ জন গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। তাদের মধ্যে ১৮৩ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ২৮৬টি ঘটনার মধ্যে থানায় মামলা হয় ১২২টি। শারীরিক নির্যাতনে ৩২ জন এবং অজ্ঞাত কারণে ১১৭ জনসহ মোট ১৪৯ জন গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়।

এছাড়াও গত ৫ বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৬৪ জন গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ২০১৩ সালে ৬১ জন, ২০১৪ সালে ৪৪ জন, ২০১৫ সালে ৬৩ জন ও ২০১৭ সালে ৪৩ জন গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ১১ জন গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন, তাদের মধ্যে ৮ জনই শিশু।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী নিনা গোস্বামী বলেন, ‘এ পর্যন্ত শুধু শিশু গৃহকর্মী আদুরী নির্যাতনের ঘটনায় বিচার হয়েছে। আর কোনও মামলার বিচার এখনও হয়নি। কিন্তু ক্রিকেটার শাহাদাত ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে আদালত থেকে তারা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সেটি তাদের মধ্যে মিলমিশ হয়ে গিয়েছিল বলে। ভুক্তভোগী তার স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করে ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী যে স্টেটম্যান্ট দিয়ে অভিযোগ করেন, এরপর আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তার এই স্টেটমেন্টটি পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ উল্টে যায়। এ কারণেই অনেক মামলার বিচার হয় না। কারণ আসামিপক্ষ ও বাদীপক্ষের মধ্যে মিলমিশ হয়ে যায়। সেই ভিত্তিতে আদালত আসামিকে খালাস দিয়ে দেন। এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়।’ নিনা গোস্বামী বলেন, ‘এই জায়গায় আইনের একটি কঠোরতা থাকা প্রয়োজন। নয়তো গৃহকর্মী নির্যাতনের কোনও বিচার সম্ভব নয়।’

এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুরে লাবনী (১২) নামের এক গৃহকর্মীর গায়ে গরম ভাতের মাড় ঢেলে নির্যাতন চালানোর অভিযোগে গৃহকর্ত্রী মারিয়া সুলতানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, ‘এই ঘটনায় চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। গৃহকর্ত্রী মারিয়া সুলতানা বর্তমানে কারাগারে আছেন।’

২০১৭ সালের ২৭ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহআলী থানার প্রিয়াংকা হাউজিংয়ের একটি বাসায় নির্যাতনের শিকার হন গৃহকর্মী বুলি (১৭)। এই ঘটনায় গৃহকর্তা এ বি এম হাসানুজ্জামান (৪৮) ও গৃহকর্ত্রী রেহেনা আক্তারকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। পরে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই দু’জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে শাহআলী থানা পুলিশ। কিন্তু পরে আসামিপক্ষ দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বাদীপক্ষের সঙ্গে আপস করে ফেলে। তবে বুলির পরিবারকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও বাকিটা এখনও দেয়নি আসামিপক্ষ। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়