শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১২  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘনের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস ◈ ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ◈ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশ: এডিবি ◈ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বিজিপির ১৪ সদস্য ◈ ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার তালিকা প্রকাশ করুন: মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০১ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কালিজিরার অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভবনে নতুন জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করা হচ্ছে

মতিনুজ্জামান মিটু : কালিজিরার অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভবনে নতুন নতুন জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী ২ বছর পর কালিজিরা-১ জাতের তুলনায় অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহিদুজ্জামান বলেন, নতুন সংগ্রহ করা জেনেটিক ম্যাটরিয়াল মূল্যায়নের পাশাপাশি সারের পরিমাণ নির্ধারণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা, তেল বের করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন এর কাজগুলো অনেকটুকু এগিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এ লক্ষ্যে তাদের শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করছে। কালোজিরা বর্তমান বিশ্বের ১০৯ ধরনের মসলা ফসলের অন্যতম। অপ্রধান মসলা ফসল হলেও দেশে এবং বিদেশে কালোজিরার বহুমুখি চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কালোজিরা রফতানি হয়েছে। বিবিএসের তথ্য মতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫২০ মেট্রিক টন কালিজিরা ৫ কোটি ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে রফতানি করা হয়। ফরিদপুর, মাগুড়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলায় কালিজিরা চাষ বেশি হয়ে থাকে। দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুরের চরাঞ্চলে এবং বরেন্দ্র এলাকায় কালিজিরা চাষ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কালিজিরা ফসলের চাষ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করে উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার মেট্রিক টন কালোজিরা। সেক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ছিল ০.৯৫ মেট্রিক টন। পরবর্তীতে ২০১৬-১৭ সালে কালিজিরা আবাদ হয়েছিল ১৫০০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার মেট্রিক টন এবং হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ছিল ১.১২ মেট্রিক টন (সূত্র: ডিএই, ২০১৮)। বাংলাদেশে ১৪,৭৪২ হেক্টর জমিতে ১৬,৫২৬ মেট্রিক টন কালিজিরা উৎপন্ন হয় (সূত্র: ডিএই, ২০১৭)। অনন্য পুষ্টিগুণের কালিজিরা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। প্রতি গ্রাম কালোজিরায় প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম, জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ফোলাসিন ৬১০ আইউ থাকে। আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। কালিজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ, অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ উপশমে কালিজিরা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালিজিরার সহায়ক ভূমিকা আছে। কালিজিরা বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। এমনকি মানুষের স্মরণশক্তি বাড়িয়ে দেয়। কালিজিরা পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে কালিজিরা মেশানো হয়। কালিজিরা ফসলে মৌবাক্স স্থাপন করে কালিজিরা মধু উৎপন্ন করা যায়। কালিজিরার ফুলের মধুও অত্যন্ত উপকারী। কালিজিরা ফসলে মৌবাক্স স্থাপন করলে ফলন বেড়ে যায় ১০ থেকে ১২ ভাগ এবং বীজের গুণাগুণও উন্নত হয়। কালিজিরা মধুর বাজারদামও বেশি। কালিজিরা নিয়মিত ও পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। বেশি খেলে হিতে বিপরীত হয়। গর্ভাবস্থায় কালিজিরার তেল গ্রহণ করা ঠিক না। গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
কালিজিরা মাঝারি জাতীয় নরম মৌসুমি গাছ। স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়। ফুলগুলো নীলচে সাদা কিংবা জাত বিশেষে হলুদাভ পীত বর্ণেরও হয়ে থাকে। গাছ লম্বায় জাতভেদে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। কালিজিরার বীজ লাগাতে হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। বীজ ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু লাইনে বীজ বপন করলে প্রতি হেক্টরে ৩.৫-৪ কেজি বীজ দরকার হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি কালিজিরা-১ এর প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৭ গ্রাম বীজ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম বীজের ওজন ৩.০ থেকে ৩.২৫ গ্রাম। বীজ পরিপক্ব হতে ১৩০ থেকে ১৪৫ দিন সময় লাগে। কালিজিরা ফসলের হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০০-৭০০ কেজি। দেশি জাতের কালিজিরা পরিপক্ব হতে আরেকটু কম সময় লাগে। কালিজিরা গাছে ফুল ফোটে বাংলা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে এবং শীতকালে ফল ধরে। শীতকালীন ফসল কালিজিরার ফল পাকে শীতের শেষে। এ ফসলের কালো বীজকেই কালিজিরা বলা হয়।

কালিজিরা ফসল সম্প্রসারণের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকরা যৌথভাবে কালিজিরার আবাদ সম্প্রসারণে নিবেদিত রয়েছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষিক্ষেত্রে আরো একটি সফলতার ইতিহাস সৃষ্টি হবে। এখন দরকার কালিজিরা ফসল উৎপাদনের মাস্টার প্ল্যান। যাতে করে শুধু কালিজিরা ফসল উৎপাদনই হবে না বরং এ ফসলের দেশীয় বিপণন ও রফতানির মাধ্যমে আর্থিকভাবে উন্নতি করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়