সাজিয়া আক্তার: অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও প্রকৃত বিশ্লেষণ না করেই এলএনজি আমদানিতে নজর দিয়েছে সরকার। ফলে মিলবে না বিনিয়োগের সুফল, এমন মত জ্বালানী বিশেষজ্ঞদের। তবে সরকার বলছে এই কার্যক্রম বাংলাদেশকে হাজার কোটি ডলারের বৈষ্ণিক বাণিজ্যের বড় অংশ করে তুলবে, যা ভবিষতের জন্য ইতিবাচক।
আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ গ্রামটি এখন হাজার কোটি টাকার কর্মকান্ডে মুখর। রোলার আর বুলডোজারের ভারি আঘাতে নতুন রূপ পাচ্ছে প্রতি ইঞ্চি মাটিকনা। কারণ এখান থেকে চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট পর্যন্ত বসানো হচ্ছে ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন। এই লাইনের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হবে বিদেশ থেকে রূপান্তরিত গ্যাস। পরিকল্পনায় থাকা ২০৩০ সাল নাগাদ দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট আমদানি করা গ্যাসের জন্য অন্যতম বড় প্রকল্প এটি।
পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের ঠিকাদার মাসুম পাটোয়ারি বলেন, এবছর আমাদের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনের কাজ, এটি আনোয়ারা থেকে ফৌজদার হাট পর্যন্ত যাবে।
এর বাইরেও সমান্তরালে বাস্তবায়িত হচ্ছে আরো কয়েকটি প্রকল্প, যা নিশ্চিত করবে এলএনজি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে। কারণ ২০১৬ সালের তথ্য হল, সে বছর পুরো বিশ্বে গ্যাসের চাহিদা অন্তত ১০ শতাংশই মিটেছে এলএনজি দিয়ে। আর বেঁচাকেনা হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টন। এই বিক্রির প্রায় ৩০ শতাংশই সর্ববরাহ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার অংশও ছিল ১৭ শতাংশ। তবে এই গ্যাস ক্রয়ে ৩৫ টি আমদানিকারক দেশ প্রতি ইউনিটের জন্য খরচ করেছিল সারে পাঁচ ডলার । আর দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ তা এখন কিন্তে হচ্ছে ৩ ডলারও বেশি দিয়ে। অথচ এই গ্যাস দেশে আসার কথা ছিল আরো অন্ত্যত পাঁচ বছর আগে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস ম্যানেজমেন্টের কোনো পরিকল্পনা ছিল না ভবিষতের জন্য। বিগত সরকার এগুলো নিয়ে সচেতন ছিল না। আমরা যে চ্যালেঞ্জ গুলো নিয়েছি, কিছুদিন হয়তো আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, পাঁচ-ছয়মাস বা বছর খানেক যাবে। আর আমরা একারণে হুট করে এত বড় আকারে যাচ্ছি না।
মূলত দামি জ্বালানি হিসেবে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত এলএনজি। যা ব্যবহার করে থাকে শক্ত অর্থনৈতির দেশগুলো। এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কতখানি স্বস্থির সে প্রশ্ন উঠছে প্রায়ই। তাছাড়া এটি কোন খাতে কিভাবে কতটুকু ব্যবহার হবে সে ব্যাপারেও নেই পরিষ্কার কোনো রূপরেখা। প্রকৃত বিশ্লেষণ নেই, এলএনজি আমদানি করা বিনিয়োগ এবং তার বিপরীতে অর্থনৈতিক প্রাপ্তি নিয়েও।
রূপান্তরিত প্রাকৃরিতক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এলএনজি আনলে খরচ বেশি পরবে। তারপরও লো-এনার্জির চেয়ে ভাল এটি।
জ্বালানি উপদেষ্টা (ক্যাব) ড.এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির ব্যয় যদি অর্থনৈতিকভাবে সামলাতে না পারে, তাহলে ভতুর্কি দিয়ে এর সমাধান করতে পারবেন এটা ভুল ব্যাখ্যা।
তাই কেউ কেউ মনে করেন এই উদ্যোগ সরকারের জন্য হয়ে উঠতে পারে বড় বোঝা। সরকারের হিসেবে আগামী একযুগের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাহিদার বড় একটা অংশের নির্ভরতা চলে যাবে বিদেশিদের উপর। যেজন্য মোটা মোটা বিনিয়োগ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ নানান জায়গায়। এই বিনিয়োগ অর্থনৈতির জন্য কতখানি সাশ্রয়ী হবে সে প্রশ্ন থেকে যায়। বিদেশ থেকে যে এলএনজির গ্যাস আসবে তা দেশিও দামের চেয়ে কয়েক গুন বেশি। দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রেও।
সূত্র: চ্যানেল ২৪
আপনার মতামত লিখুন :