শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:১৯ সকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এখানে রূপারা নিরাপদ

ডেস্ক রিপোর্ট : রূপার কথা মনে পড়ল। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সেই রূপা। জীবনের সব রঙ-রূপ উপভোগের আগেই নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়ে যাকে অকালে চলে যেতে হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট এক ভয়ঙ্কর রাতে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে ফেরার পথে একদল নরপশু চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করেছিল রূপাকে। তারপর লাশ ফেলে গিয়েছিল রাস্তার পাশের জঙ্গলে।

সুদূর গোল্ড কোস্টে বসে সেই রূপার কথাই লিখছি। কেন লিখছি? কারণ, সাধারণ পরিবারের একটা মেয়ে, যে স্বপ্ন দেখত একটি সুন্দর ভবিষ্যতের, সেই উচ্ছল জীবনের এমন করুণ পরিণতি তো কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সামাজিক নিরাপত্তার দুর্বলতায় কত রূপাই তো অকালে ঝরে যায়। ক'টা ঘটনা আর শেষ পর্যন্ত মানুষ মনে রাখে। প্রথমে কিছুদিন তোলপাড় হয়, তারপর তলিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলে। রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অবশ্য দ্রুতগতিতে বিচার হয়েছে। ফাঁসির সাজা হয়েছে চার ধর্ষকের। বিচারের সান্ত্বনা মিলেছে, রূপা তো আর ফিরে আসেনি। অন্য রূপাদেরও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়?

অস্ট্রেলিয়ার সিটি অব গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমস কাভার করতে এসে দেখেছি, মধ্যরাতেও বাসে-ট্রামে-ট্রেনে গিজগিজ করছে মানুষ। কে নেই সেই ভিড়ে। তরুণ, বৃদ্ধ, শিশু- সব বয়সের মানুষ ছুটে যাচ্ছে শহরের এ মাথা-সে মাথায়। কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে গত কয়েকটা দিন দারুণ উৎসবে মেতেছিলেন গোল্ড কোস্টের মানুষ। সকাল থেকে যার যার কাজের ফাঁকে খেলা দেখেছেন। সন্ধ্যা হলেই শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ওপর বানানো বড় বড় মঞ্চে চলত গান-বাজনা। তাতে তরুণ-তরুণীদের ভিড়টাই ছিল চোখে পড়ার মতো। আর তাদের কথা যখন উঠলই, তখন একটা কথা জোর দিয়েই বলা যায়, এখানে তরুণীরা পথ চলে নির্ভয়ে। তাদের জীবনের সব অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত। এখানে দিনটা যেমন তাদের, রাতটাও তাদেরই। এখানে রূপারা নিরাপদ। একটা মেয়ে অনেক রাতে কীভাবে বাড়ি ফিরবে, তা নিয়ে পরিবারের উৎকণ্ঠায় থাকার কোনো কারণ নেই। কখনও কোনো অঘটন একেবারেই যে ঘটে না, তা হয়তো নয়। তবে সেটা এই মুক্তবুদ্ধির সমাজে আক্ষরিক অর্থেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আরও নিবিড়ভাবে দেখতে গেলে এখানে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়ার ভয়েও জীবন কাটাতে হয় না কোনো নারীকে। দাম্পত্য কলহের জেরে দৈহিক বা মানসিক নির্যাতনের আশঙ্কা দেখা দিলে একজন নারীর জানা আছে, তার ফোন থেকে কেবল ট্রিপল জিরোতে ডায়াল করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে তার পাশে। এ ক্ষেত্রে একটাই নীতি- জিরো টলারেন্স। শুধু বাইরে নয়, নারী তার ঘরেও পুরোপুরি সুরক্ষিত।

গত ১২ দিনে গোল্ড কোস্টের অলিগলি, রাজপথ ঘুরে বেড়িয়ে দেখেছি- কত স্বচ্ছন্দে মেয়েরা নিজেদের মতো করে জীবনকে যাপন করছে। গেমস উপলক্ষে যত স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে, তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা দৃশ্যত পুরুষের চেয়ে বেশি ছাড়া কম হবে না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এখানকার অফিস-আদালতে নারী কর্মীরাও সমানভাবে সক্রিয়। প্রত্যেক মেয়েরই নির্দিষ্ট বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে। তারা গাড়ি চালিয়ে কাজে যান। যারা শিক্ষার্থী, তারা বাসে-ট্রামে চলাফেরা করে। দিন, না রাত- এ ব্যাপারটা মাথায়ই রাখার দরকার পড়ে না। এখানে মেয়েদের দেখেছি ট্যাক্সিক্যাব, এমনটি বাস চালাতে। অনেক মেয়ে উবারও চালায়। অবকাশ কাটাতে বিকিনি পরে নেমে যায় সৈকতে। কোথাও যেতে ছোট ভাই বা পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনোর কথা তারা ভাবতেই পারে না। আর পথেঘাটে ইভ টিজিং! না, এই ভাইরাস এখানে একেবারেই নেই। কী ওষুধে এর বিনাশ, তা জানার বড় ইচ্ছা ছিল। জানতে পারলাম না। তবে বুঝতে পারলাম, মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু রাষ্ট্রের কাজ নয়, কাজটা সবার; গোটা সমাজের। যে সমাজ নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেখানে মেয়েদের নিরাপত্তা কি আদৌ নিশ্চিত? প্রশ্নটা বরং যে যার মনের কাছে করি। উত্তরটা বোধকরি কারোই অজানা নয়। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়