শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৩২ সকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এখনও ঢুকছে রোহিঙ্গারা

আবু হোসাইন শুভ : বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে অব্যাহত আছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ। এছাড়া ঢোকার অপেক্ষায় বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন কোনারপাড়া জিরো পয়েন্ট নোম্যানস ল্যান্ডে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে গেল পহেলা মার্চ মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে সৈন সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রথম পর্যায়ে ৮ হাজার ৩২ জন নাগরিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়।

এই প্রতিবেদনে প্রায় ৪০ হাজার অনাথ ও এতিম শিশু পুনর্বাসনে পৃথক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও অবকাঠামো সহায়তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ৭৬০ কোটি টাকার ৩শ’টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ১১৬টি এনজিও।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান রোববার বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সম্প্রতি জেনাভায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার যাতে তাদের নাগরিকদের দ্রুত ফেরত নেয়, সেজন্য আমাদের সরকার আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে।এজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছেন।
সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনারপাড়ায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে নোম্যানন্স ল্যান্ডে ৫ হাজার ৮৬৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক এখনও অবস্থান করছে। সূত্র জানায়, জিরোলাইন থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তমরু সীমান্তে বৈঠক করে চাপ সৃষ্টি করা হয়। জবাবে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও এখনও কিছুই করেনি। বরং সেখানে তাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা এখন ১০ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৬ জন। এর মধ্যে ২ লাখ অবস্থান করছে রামু, কক্সবাজার পৌরসভাসহ বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-বালুখালীতে এবং টেকনাফ উপজেলায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৬ জন। এরা অবস্থান করছে হাকিমপাড়া, জামতলী, পুটিবুনিয়া, কেরনতলী, উনচি প্রাং, লেদা আলীখালী, শামলাপুর, নয়াপাড়া, জাদিমুরা ও দমদমিয়া এলাকায়। এখন পর্যন্ত ক্যাম্প করা হয়েছে ১৪টি, ব্লক আছে ২৩টি। ক্যাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গার পরিমাণ ৪ হাজার একর। ২ লাখ শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা), আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন) এবং এসিএফের (অ্যাকশন এগেইনেস্ট হাঙ্গার) সহায়তা অবশিষ্ট সেল্টার নির্মাণ অব্যাহত আছে।

সরকার এবং দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ বিতরণের মধ্যে রয়েছে সরকারি চাল ৪৯০ মেট্রিক টন, অন্যান্য খাত থেকে পাওয়া চাল ২ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন, ডাল ২০ মেট্রিক টন, তেল ৭৬ হাজার ৩২৬ লিটার, লবণ ২৮৫ মেট্রিক টন ও চিনি ৩৮৪ মেট্রিক টন। এছাড়া সরকারি জিআর ক্যাশ দেয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৬ টাকা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে পাওয়া ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৯ মেট্রিক টন চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, চিনি, মুড়ি, আটা, হাই এনার্জি বিস্কিট। এছাড়া বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন। আইরিশ এইড দিয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে চারটি অস্থায়ী খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর ১০ হাজার ল্যাট্রিন নির্মাণের প্রতিশ্রতি দিয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫শ’টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
মেডিকেল ক্যাম্পের সংখ্যা উখিয়া উপজেলায় সরকারি ১০টি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৭টি। টেকনাফে সরকারি ৬টি, বেসরকারি ৮টি। এ পর্যন্ত নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে সরকারিভাবে ৫ হাজার এবং এনজিও কর্তৃক স্থাপন করা হয় ৪৫ হাজার ৪৪১টি। গোসলখানা সরকারিভাবে ১ হাজার ৭৮০টি ও এনজিওগুলো করেছে ১ হাজার ২৯০টি। সুপেয় পানির জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ হাজার ২শ’ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ২টি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ক্যারিয়ারের মাধ্যমে আরও ৩ হাজার লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এজন্য ১১টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৮৫ জনকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৬টি কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৫০১ জনকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত সন্দেহে ৬ হাজার ১৩২ জনকে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে মারা গেছে ৩৮ জন। এজন্য টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২৭ হাজার জনকে টিকা দেয়া হয়।
রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয়স্থলের জন্য নির্ধারিত ৪ হাজার একর জায়গায় সহজভাবে যাতায়াতে সংযোগ সড়ক ও সড়কের নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মাণাধীন ২২ কিমি. সড়কের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৮ কিলোমিটারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ৪টি মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট। সরকারের পাশাপাশি ১১৬টি এনজিও কাজ করছে। যাদের অনুমোদিত প্রকল্প সংখ্যা ৩শ’টি। এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৪০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সূত্র :যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়