শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৩:৫৮ রাত
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৩:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নিভৃতে শায়িত তিন শহীদের কথা

বুলবুল আহমেদ : রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে লক্ষীপুর টিবি হাসপাতালের চত্বরে ঢুকতেই পূর্ব পার্শে¦ নার্সেস হোষ্টেল। এই হোষ্টেলের পাশেই চোখে পড়বে নিতান্ত সাধারণ অবস্থায় অসংরক্ষিত একটি কবর, না গণ কবর। এখানে একই কবরে শুয়ে আছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের তিন শহীদ। পথচারীদের কৌতূহল নিবারণের জন্য বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বা তাদের কাছ থেকে অবহিত উত্তরসূরী হয়তো এখনো স্মরণে রেখেছেন এই কবরের ইতিকথা। এগিয়ে গেলে দেখা যাবে কবরের ফলকে খোদাই করে লেখা- ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল বুধবার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গুলিতে শাহাদাত বরণকারী দেশমাতৃকার জন্য চরম উৎসর্গের স্বাক্ষ্য হয়ে পরম নিশ্চিন্তে এখানে ঘুমিয়ে আছেন- শহীদ আবদুল বারী হাওলাদার, শহীদ আবদুল কাইয়ূম ও শহীদ মোহাম্মদ সেলিম। তাঁদের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধার্ঘ ।

১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরপরাধ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজশাহীতে ৭ এপ্রিল অকস্মাৎ তীব্র হয়ে ওঠে হানাদার বাহিনীর নৃশংস তৎপরতা। ট্রাকে করে ইপিআর সদস্যদের একটি দল এসে নামল টিবি হাসপাতালের ষ্টাফ কোয়াটারের সামনে। ইপিআর বাঙালি অফিসার শাহ আলম এসে আমাদের বাসার দরজায় কড়া নাড়লেন। আমার আব্বা আবদুল বারী হাওলাদার দরজা খুলে দিতেই তারা উল্লাস করে বলে উঠলেন, ‘এই এলাকা আমরা আজ সারা দিন যুদ্ধ করে পাকিস্তনী হানাদার মুক্ত করেছি। খুব ক্ষুধার্ত আমরা, যা আছে খেতে দিন।’

এই দলের প্রায় ৪০ জন সদস্যের জন্য মা দ্রুত ভাত-তরকারি রান্না করে দিলেন। আশপাশের বাড়ী থেকেও কিছু কিছু খাবার এসে গেল। এপ্রিলের ৭ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত রাজশাহীতে প্রবল প্রতিরোধ যুদ্ধ চলল। সেনানিবাসে বন্দি করা হল পাকিস্তানী সৈন্যদের। ১৪ তারিখে কার্যত গোটা রাজশাহীর প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। প্রতিরোধ ভেঙে পড়ার সাথে সাথে ইপিআর বাহিনী পিছু হাটতে থাকল। যাওয়ার সময় তারা শহরবাসীকে তাদের সাথে নিরাপদ স্থানে সরে পড়ার আহবান জানালেন।

অনেক স্টাফ হাসপাতাল থেকে চলে গেলেও রোগীদের ফেলে রেখে কর্তব্যরত আবদুল বারী হাওলাদার হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারলেন না। তিনি বাসা বদলে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে নার্সেস হোস্টেলে সরে গেলেন এবং স্থান নিলেন ডাইনিং রুমে।
১৪ এপ্রিল, বাংলা পহেলা বৈশাখ। সেদিন ছিল বুধবার। আবদুল বারী হাওলাদার হাসপাতাল থেকে এসে গোসল করে বাসার সবাইকে নিয়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি দুজন স্টাফ সাথে নিয়ে জোহরের নামাজে দাঁড়িয়েছেন। সে সময় হঠাৎ পাকিস্তানী সৈন্যরা এসে বুটের লাথিতে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে ঘরে ঢুকলো।

হিং¯্র হানাদাররা চায়নিজ রাইফেলের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিল নামাজরত তিনজনকে। তারা পাশের ঘরে ঢুকে বারী সাহেবের ছেলে মাহমুদ হোসেন বাদল, হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ সেলিমকেও গুলি করে। এই ছয়জনের মধ্যে কাইয়ুম ও মোহাম্মদ সেলিম ঘটনাস্থলেই শাহাদত বরণ করেন। আবদুল বারীর দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায় গুলিতে। ঘটনার আকস্মিকতায় তার স্ত্রী ও পুত্রদের সংজ্ঞা হারানোর মতো অবস্থা হলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আবদুল বারী সংজ্ঞা হারাননি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী চলে গেলে মুমুর্ষ আবদুল বারীকে স্বজনেরা যৎসামান্য চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। বিদায়ের শেষ সংলাপেও তিনি জীবনের জমা-খরচের শেষ হিসাবটুকু বুঝিয়ে দেন স্ত্রী-পুত্রদের। শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের আগে শেষবারের মতো তিনি পবিত্র কোরআনের বাণী শুনতে চান । তারপর সব শেষ। সকল চেষ্টা বিফল করে হাজারো আন্তরিক চেষ্টার পরও সন্ধ্যায় তিনি দেশের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। বাকী অন্য তিনজন মারাত্মক জখম নিয়ে ও দু:সহ স্মৃতি বুকে ধারণ করে আজও বেঁচে আছেন।

স্বাধীনতার পর সাতচল্লিশটি বছর কেটে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের নিয়ে কত কিছুই হয়, হচ্ছে। অথচ আমাদের একটি ঐকান্তিক বাসনা আজও পূরণ হয়নি। আজও কর্তৃপক্ষ তিন শহীদের কবরটি পাকা করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আজও কাঁচা কবরটি আমরা পারিবারিক উদ্যোগেই রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছি। কবরের সামনে তিন শহীদের নাম সংবলিত একটি ফলক ১৯৯৭ সালে লাগানো হয়। গতবছর রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের উদ্যোগে রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ এবং গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ মিলে গণকবরের সামনে এক আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে। এবারো শহীদদের স্মরণে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এমনই আয়োজনের কথা আমাকে জানিয়েছেন সুহৃদগণ। কিন্তু আমাদের সাথে সাথে শহীদের ঘটনা অবহিত সকলেই আজো খুব মনো কষ্ট অনুভব করেন গণহত্যায় শহীদদের নামের তালিকায় আজো এই তিন শহীদের নাম ওঠেনি বলে।

লেখক : ফটোসাংবাদিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়