ডেস্ক রিপোর্ট : ধানের ফলন ভালো হয়েছে, এবার ঘরে তোলার পালা, ছবি- সংগৃহীতসরকার আসন্ন বোরো সংগ্রহ অভিযানে ধান ও চালের ক্রয়মূল্য ঘোষণা করলেও ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ধানের জেলা দিনাজপুরের কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় এবার চালের ক্রয়মূল্য কেজি প্রতি চার টাকা এবং ধানের ক্রয়মূল্য কেজি প্রতি দুই টাকা বাড়ানো হলেও বরাবরের মতো এই দাম তাদের ভাগ্যে জুটবে কিনা, মূলত তা নিয়েই কৃষকদের এই শঙ্কা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,আসন্ন বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরকার গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম কেজি প্রতি চার টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে ৩৮ টাকা। আর ধানের মূল্য দুই টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ২৬ টাকা নির্ধারণ করা করেছে। এ বিষয়ে দিনাজপুরের কৃষকরা জানান, সরকার কৃষকদের স্বার্থে সন্তোষজনক দাম ঘোষণা করলেও এসুবিধা পাবেন না তারা। তারা জানান, কৃষকদের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত কয়েকবছর থেকে চালের পাশাপাশি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু ঘোষণা দেওয়া হলেও এই সুবিধা তারা পাচ্ছেন না। একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ও সুবিধাবাদী এই সুবিধা ভোগ করে আসছে।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ফুলতলা গ্রামের বর্গাচাষী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি এবার জমি বর্গা নিয়ে দুই একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করছেন। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত খরচ আর জমির বর্গার টাকা দিতে তার একর প্রতি খরচ হবে ৪৬ হাজার টাকা। আর এক একর জমিতে তার ধান উৎপাদন হবে ৬০ মন (শুকানো ধান )। এতে প্রতি কেজিতে তার উৎপাদন খরচ পড়বে ২০ থেকে ২১ টাকা। সরকার প্রতিকেজি ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ২৬ টাকা। এতে সরকার ঘোষিত এই দাম তাদের জন্য লাখজনক। কিন্তু বরাবরের মতো এই দাম তাদের ভাগ্যে জুটবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। কৃষক আনোয়ারুল আরও জানান, গতবছরও সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা বললেও এক ছটাক ধানও তারা সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারেননি। রাজনৈতিক কিছু নেতা এবং কিছু মধ্যস্বত্বভোগী নামে-বেনামে সরকারের এই সুবিধা ভোগ করেছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের।
একই কথা জানান, বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী। তিনি জানান, সরকার কৃষকদের কথা বিবেচনা করে ধানের মূল্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এই সুবিধা কারা-কিভাবে ভোগ করেন, তারা তা জানতেও পারেন না। তাই সরকার এই দাম ঘোষণা করলেও, তা তাদের ভাগ্যে জুটবে না।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাওসার আলী জানান,‘কৃষক কার্ড’ অনুসারে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেই ধান কেনা হবে। ‘কৃষক কার্ড’ ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগী বা অন্য কারও সরকারী খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে ধান দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরবরাহ করা কৃষক কার্ড দেখে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। ’
এদিকে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুরে এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৬৭৪ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, দিনাজপুর জেলায় এবছর ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ফলন ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে দিনাজপুরে এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৬ মেট্রিক টন (চালের আকারে)। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :