শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৫৯ সকাল
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাস্তা না নদী!

ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর ইসলামবাগের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার রাস্তাটি প্রায় দেড় বছর ধরে বিষাক্ত পানির নিচে ডুবে রয়েছে। রাস্তার পাশের খালটি ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়া, নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনার কারণে এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার পাশের নালাটির উপচে পড়া কেমিক্যাল মেশানো পচা পানিতে এলাকার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা যোগ হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বিষাক্ত দুর্গন্ধ, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। এ জলাবদ্ধতার ফলে মাসের পর মাস ধরে এলাকাবাসী, পথচারী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগে। ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি রাস্তায় জমে বিষাক্তময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এলাকাবাসী রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও। বাসা থেকে রাস্তায় নামলেই ভোগান্তিতে পড়ছে এলাকাবাসী। দীর্ঘদিনের এ জলাবদ্ধতার কারণে সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে বুড়ির দোকান, ইসদাইর বাজার, রাবেয়া হোসেন স্কুল, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা, আসরোটেক্স গার্মেন্টস, উপজেলামুখী চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত থাকে না। রাতের বেলা এ পথে যাতায়াত করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এলাকাবাসী নানা জায়গায় আবেদন করে, প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। তাই এলাকাবাসী বালির বস্তা ফেলে এবং বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নিয়েছে চলাচলের জন্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফতুল্লা উপজেলার পূর্ব ইসদাইর ইসলামবাগ এলাকায় ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে দুটি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। দেখা যায়, একটি প্রাইভেট কারের চাকা একেবারে মূল সড়কের গর্তে আটকে গেল। প্রাইভেট কারটি যতই সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে, ততই ঝাঁকুনি দিয়ে হেলে পড়ে, ঠিক যেন উল্টে পড়ার দশা। বেশ কিছুক্ষণ চলল কাদাপানির সঙ্গে চাকার ধস্তাধস্তি। অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত গর্ত ও কাদাপানির খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসে আবারও রাস্তার পানিতে ঢেউ তুলতে তুলতে রওনা দেয় গন্তব্যে।

প্রাইভেট কারটি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওই সড়কে উল্টে গেল আসবাববাহী একটি ভ্যান। ভ্যানের ওপর থেকে একটা চেয়ার ছিটকে পড়ল ভ্যানচালকের পিঠে। পানিতে ভিজল ভ্যানভর্তি খাট, চেয়ার, টেবিলসহ কাপড়ের জিনিসপত্র। মালগুলো নতুন বাসায় নেওয়ার পথেই এ ঘটনা। সুগন্ধা আবাসিক এলাকায়ই ভাড়া থাকতেন ইসরাফিল সাহেব। তিনি বলেন, ‘যেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে বাসা পরিবর্তন করছি, সেই বিপদেই পড়লাম। আমার আর কিছু বলার নেই।’

রাস্তার এই দুরবস্থা নিয়ে স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ হাসমত আলী বলেন, ‘দেড় বছর ধরে আমরা পানিবন্দি। সরকার থেকে আমাদের এই জলাবদ্ধতার কোনো সমাধান করছে না। মাসের পর মাস অপেক্ষার পরও আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। আমাদের এ সমস্যার কি সমাধান নেই? কত সাংবাদিক আসে-যায় কিছুই তো হয় না।’

এলাকাটিতে কয়েকটি বড় গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। ফলে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিককে বিষাক্ত পচা পানি মাড়িয়ে কাজে যেতে হয় এবং কাজ শেষে বাসায় ফিরতে হয়। পচা-দুর্গন্ধযুক্ত এই হাঁটু পানির রাস্তার কারণে এলাকাবাসী, পথচারী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ পড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগে। ভুক্তভোগী গার্মেন্ট শ্রমিক সাজেদা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এবং বাসায় ফেরার সময় বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় এই পানিতে নামতে হয়। মাসের ৩০ দিনই এ সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা গরিব মানুষ, আমরা তো আর রিকশা ভাড়া করে পানি পারাপারা হতে পারি না। অল্প আয় আমাদের। সেই আয় থেকে যদি প্রতিদিন রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতে হয়, তো খাব কী। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। আমার সঙ্গে যারা গার্মেন্টে চাকরি করে তাদের অনেকের পায়ে ঘা হয়ে গেছে এই পচা পানির কারণে।’ সাজেদা হাতের আঙুল দিয়ে ইশারা করে তার পায়ের ঘা দেখিয়ে বলেন, ‘আমার পায়েও ঘা হয়েছে।

ওষুধ খাই, কিন্তু সারে না। আমরা এই পচা পানি থেকে মুক্তি চাই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা এ ময়লা পানিতে ডুবে আছি। দুর্ভোগ যে পোহাচ্ছি তা সবাই দেখছে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দেখেও দেখছে না। একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছে। মূলত রাস্তার থেকেও আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ড্রেনের জমে থাকা পানি অপসারণ। ময়লা পানিতে আমাদের এলাকার প্রতিটি মানুষ খুব দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। সামনে বর্ষাকাল আসছে তখন তো এ অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠবে। মানুষের বিপদ বেড়ে যাবে।’

রাস্তার পাশের মুদি দোকানি মো. ইউনুস বলেন, ‘ব্যবসা ভালো চলে না। বেচাকেনা নেই বলে অনেক মানুষ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ষাকাল, শীতকাল গেল, বছর ঘুরে বছর এলো; কিন্তু রাস্তা থেকে জলাবদ্ধতা দূর হলো না। গার্মেন্টের কেমিক্যালযুক্ত পচা পানি এবং এলাকার ময়লা-আবর্জনার পানি থেকে রোগ ছড়ায়। পুরা রাস্তা নদী হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী এ রাস্তার জলাবদ্ধতায় কষ্ট করছি। মূলত নালাটা সংস্কারের উদ্যোগ নিলে আমরা এ সমস্যা থেকে বাঁচতে পারি।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জানি, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা; কিন্তু আমার পক্ষে কিছু করার নেই, তবে চেষ্টা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আর্মির কাজ করার কথা আছে। রাস্তার পাশের খালটি পরিষ্কার করে রাস্তার কাজ করবে। আশা রাখি, তখন আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’ তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। সূত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়