শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:০৪ সকাল
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘তুমি মেয়ে, তুমি কেন মাঠে?’

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমি পড়তাম অর্থনীতিতে। আমার পাহাড় ভালো লাগে। মাঝেমধ্যেই ট্রেকিংয়ে বেরিয়ে পড়ি। আর গাছপালার প্রতি টান ছোটবেলা থেকেই। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রাকৃতিক কৃষির কথা জানতে পারি ২০১৪ সালে। পোস্টগুলো রেগুলার ফলো করতাম। আমার ভালো লেগে যায় তাঁদের কাজকর্ম। তাঁরা বিষমুক্ত খাবার পৌঁছাতে চান মানুষের কাছে। সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, বিষমুক্ত খাবার ছাড়া কিভাবে সম্ভব? একপর্যায়ে প্রাকৃতিক কৃষির দেলোয়ার (দেলোয়ার জাহান) ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কথা বলে বুঝলাম, এটা একটা আন্দোলন। আমি রেডি হতে থাকলাম মাঠে গিয়ে মাটির সঙ্গে, ফসলের সঙ্গে, আরো প্রাণের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে।

অল্প করে প্রাকৃতিক কৃষি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। প্রাণবান্ধব সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল ২০০৪ সালে। পাঠচক্র আর ভাবনাবিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আট বছর পার করে তারা। ২০১২ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলী গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে মিলে কৃষিকাজ শুরু করে দলটি। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত চাষের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে গবেষণাও চালায় পাশাপাশি। কৃষকদের সমস্যাও বুঝতে থাকে। দলের নাম রাখা হয় প্রাকৃতিক কৃষি। দেলোয়ার জাহান এই কৃষি আন্দোলনের সমন্বয়ক।

আন্দোলনটির বয়স এখন ছয় বছর

আমি প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি দুই বছর হলো। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও কেরানীগঞ্জের কৃষ্ণনগরে আমাদের খামার আছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই আন্দোলনের কর্মীরা মানে কৃষক-কিষানিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। যে ফসল আমরা উত্পাদন করি, তার অনেকটা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। ঢাকায়ও আমাদের বিপণনকেন্দ্র আছে। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার ঢাকা কেন্দ্রে হাট বসে। গাড়িতে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া আমরা প্রাকৃতিক কৃষির পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে দেশি বীজ সরবরাহ করে থাকি। আমরা চাই সমতল ও পাহাড়ে সর্বত্র দেশি বীজ ফিরে আসুক। টিকে থাকুক দেশি ফসলের জাতগুলো। নিরাপদ, বিষমুক্ত ফসল ফলাতে চাই আমরা। চাই মানুষকে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের সুযোগ করে দিতে।

প্রশ্নের মুখোমুখি

তুমি মেয়ে, তুমি মাঠে কেন যাবা? মাঠে যাওয়া কি তোমার কাজ? এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি অনেকবার। তাই বলে হাল ছাড়িনি। আমিও প্রথম দিকে হালকা কাজগুলোই করতাম। ভাবতাম ভারী কাজগুলো কি আমি পারব? একবার কেরানীগঞ্জের খামারে মাটি কোপাতে গিয়ে দেখলাম পুরোটাই শেষ করতে পেরেছি। খুব ভালো লেগেছিল তখন। মেয়েরা পারবে না—এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই অনেক কাজ করা সম্ভব। কৃষকও কিন্তু রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। আমাদের যখন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফসল ফলাতে দেখে, তখন তারা শক্তি পায়। আমরা একই সঙ্গে দেশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহ জোগাই।

একমাত্রা স্কুল

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পথশিশুদের একটি স্কুল আছে। নাম একমাত্রা। আমরা স্কুলটিকে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি। প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁস-মুরগি, গরু পালন, মাছচাষ, কবুতর পালন আর শাক-সবজি চাষ করছি সেখানে। আমরা চাইছি, এই খামার থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের খাবার আসবে। নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে প্রথমে আমরা যে কাজটি করি তা হলো সেসব কৃষককে খুঁজে বের করি, যারা আগে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষবাস করত। নিমপাতার রস বা গোবর দিয়ে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা যায়। আবার যেমন বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি একসঙ্গে আবাদ করলে পোকার আক্রমণ আপনা থেকেই কমে। যেমন লালশাকের সঙ্গে ধনেপাতার আবাদ করলে পোকার আক্রমণ কম হয়। ক্ষেতের চারপাশে গাঁদাফুল লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। বেগুনের সঙ্গে হলুদ লাগালেও সুবিধা হয়।

ইচ্ছা করে

সমাজ যেসব পেশাকে মর্যাদা দেয়, তেমন পেশায় আমি নেই। লোকে তাই হতাশ হয়। বলে, এত পড়াশোনা করে তাহলে লাভটা কী? আমিও মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে উঠি। তবে আমার পরিবার কিন্তু এখন আমাকে উৎসাহ দেয়। আমি চাই কৃষক তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্য পাক। আমাদের জীবন সহজ-সরল ও সুন্দর হোক। সমাজ কৃষককে সম্মান করুক। আমার বেশি ইচ্ছা জুম চাষ শেখার। পাহাড়ে অনেক মূল্যবান ভেষজ গাছ আছে। গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। সূত্র : কালের কন্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়