ডেস্ক রিপোর্ট : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে টমেটো চাষিরা উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার পাইকারি বাজারে দুই টাকা কেজি দরেও টমেটো বিক্রি হয়েছে। তা-ও পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি, বাজারে আনার খরচ, ইজারাদারের মাসুল ইত্যাদির খরচ ওঠানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চরমভাবে হতাশ কৃষকরা।
জানা গেছে, সবজি চাষের ক্ষেত্রে সীতাকুণ্ডে শিমের পরই টমেটোর অবস্থান। উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৬ হাজার চাষি টমেটো চাষ করে। প্রতি মৌসুমে চাষ হয় দুইবার। একবার আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চারা রোপণ করে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরে বিক্রি শুরু হয়। আবার জানুয়ারিতে চারা রোপণ করে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বিক্রি হয় গ্রীষ্মকালীন টমেটো। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে টমেটো চাষিদের দিনকাল। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। কিন্তু এবার দ্বিতীয় মৌসুমে এসে ক্ষেতের টমেটো বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে চাষিরা। কারণ বাজারে ন্যায্য দাম মিলছে না। চাষিরা জানায়, ক্ষেতে এখনো প্রচুর টমেটো রয়ে গেছে। কিন্তু বিক্রির জন্য বাজারে এনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। মাঝেমধ্যে এমন দামে বিক্রি হচ্ছে যে ক্ষেত থেকে বাজারে আনার খরচও উঠছে না।
গতকাল সীতাকুণ্ডের অন্যতম সবজি বাজার মোহন্তহাট ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন মৌসুমের সর্বনিম্ন মূল্যে বিক্রি হয়েছে টমেটো। টমেটো বিক্রি করতে আসা চাষিদের একজন উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতরের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন জানান, গতকাল তিনি দুই ঝাঁকায় প্রায় ৯০ কেজি টমেটো বিক্রি করতে আনেন। কিন্তু বাজারে টমেটোর ক্রেতা কম। ফলে দুই ঝাঁকা টমেটো মাত্র ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সে হিসাবে প্রতি কেজি টমেটোর দাম পড়েছে দুই টাকা। অথচ একজন শ্রমিক দিয়ে তিনি টমেটো তুলেছিলেন, যার মজুরি দেড় শ টাকা। সৈয়দপুর থেকে টমেটো আনতে খরচ হয়েছে ৮০ টাকা। এ ছাড়া বাজারের হাসিল, নাশতা প্রভৃতি মিলিয়ে আরো ৩০-৪০ টাকা খরচ। এককথায় টমেটো বিক্রি করে আরো ৯০ টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমনই অসহায় যে বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেলে টমেটো ফেরত নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। তাহলে সবটাই পচে যাবে। সীতাকুণ্ডে টমেটো সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হয়েছে। অথচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কম দামের সময় টমেটো হিমাগারে রেখে দাম বাড়লে তা বাজারে বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারত। আমার মতো হাজারো টমেটো চাষি প্রতিবছর এই দুরবস্থায় পড়ছে।’
আরেক টমেটো চাষি গুলিয়াখালীর বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমরা মৌসুমভেদে সব ধরনের সবজি চাষ করে থাকি। এবার মোট ২২০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম। তবে দ্বিতীয়বার অর্থাৎ জানুয়ারিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছিলাম ৮০ শতক জমিতে। এই জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। প্রথম দিকে ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও হঠাৎই দাম একদম পড়ে গেছে। আজ (গতকাল) দু-তিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে। অনেকেই দু-তিন টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।’
চাষি ইলিয়াস আলী ও আইয়ুব আলী এখানে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, একটি হিমাগার থাকলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারত, অন্যদিকে সারা বছর টমেটো পাওয়া যেত বাজারে। এখনো মে মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি হবে। বাজার এ রকমই থাকলে কৃষকরা লাভের বদলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
কৃষকদের এ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্ঞান রঞ্জন নাথ বলেন, এখানে কৃষকদের জন্য একটি হিমাগার স্থাপন খুবই জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে এলাকার ২০-২৫ হাজার কৃষক ও অসংখ্য মত্স্যজীবী উপকৃত হবে। সূত্র : কালের কন্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :